ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, বিভিন্ন জেলায় মৃত্যু ৪০

প্রকাশিত: ২২:০০, ১৯ জুন ২০২১

গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, বিভিন্ন জেলায় মৃত্যু ৪০

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। এতদিন পর্যন্ত শহরে মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এখন সেটি গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়েছে। যে জন্য জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারপরও মানুষ বিধিনিষেধ মানছেন না। তারা নিজেদের মতো করেই চলা ফেরা করছেন কিন্তু কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যেজন্য মৃত্যুও বাড়ছে প্রতিদিন। জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জেলায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে নওগাঁয় ছয়জন, যশোরে চারজন, খুলনায় নারীসহ ৬ জন, বগুড়ায় ৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন, যশোরে চারজন, চট্টগ্রামে চারজন, কুষ্টিয়ায় চারজন, সাতক্ষীরায় ৫ জন। এছাড়া জেলাগুলোতে লকডাউন চলছে। কিছু কিছু এলাকায় সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে মাগুরা, কুড়িগ্রাম রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি লোকজনকে সচেতন করতে ব্যাপকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদাতা ও সংবাদদতাদের। নওগাঁ জেলায় করোনায় গত ৩ দিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬০ জন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮ পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে জেলায় নতুন করে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের ১ জন জেলা সদরের এবং অপরজন আত্রাই উপজেলা সদরের বাসিন্দা। একদিনে মোট ৫৮ ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে এ্যান্টিজেন ২২২ জন এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে ৩১ জনসহ মোট ২৫৩ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে এই ৫৮ ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩ হাজার ২৫৩ জন। এ সময় জেলা প্রশাসন ঘোষিত স্থানীয়ভাবে তৃতীয় দফায় তৃতীয় দিনের মতো কঠোর বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। যশোর ॥ সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। করোনার প্রথম ধাপে চিহ্নিত করা হটস্পটগুলোতে দ্বিতীয় ধাপেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হচ্ছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও প্রতিদিন জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের হার। জেলায় গড় শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে শহর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০৬ নমুনা পরীক্ষা করে ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় ১০১ মারা গেছেন। দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়েছে। খুলনা ॥ চিকিৎসাধীন অবস্থায়ায় নারীসহ আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন এবং একজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৬৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৬ জন। ৫৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২২ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। যার মধ্যে খুলনার ১৫১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটের ৪২ জন, যশোরের ১৪ জন, সাতক্ষীরার ৭ জন, ঝিনাইদহের একজন, নড়াইলের ৫ জন, পিরোজপুরের একজন ও বরিশাল জেলার একজন রয়েছে। বাগেরহাট ॥ জেলায় সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৯ নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৮৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল দুই হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৬৫০ জন। মারা গেছেন ৬৩ জন। মোংলা ॥ করোনার হটস্পট মোংলায় বেড়েই চলেছে সংক্রমণ। প্রশাসনের তিন সপ্তাহের চলমান কঠোরতম বিধিনিষেধের ১৯তম দিনে এসেও কমছে না আক্রান্তের সংখ্যা। র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নতুন করে ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০২ জন। জেলায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২০৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। এখন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৪ জন, বাকিরা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নীলফামারী ॥ উত্তরের জেলাটিতে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকাশিত করোনা হিসাবে দেখানো হয়, নতুন করে ২০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবারও আক্রান্ত হয় ২০ জন ছিল। দুদিনে ৪০ জন আক্রান্ত হওয়ায় সংক্রমণ উচ্চহারে বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছে। সচেতন মহল বলছেন সরকারের বিধিনিষেধ এ জেলার মানুষজন মানছেন না। তারা মাস্ক ছাড়া এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনে অবাধে চলাচল করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ৩১ মে পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত রোগী ছিল ১ হাজার ৫৭৯। মৃত্যুবরণ করে ৩৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৩ জন। ১-১৭ জুন পর্যন্ত নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ৮৬ জন। মৃত্যু বরণ করে ১ জন। বগুড়া ॥ সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৩টি হাসপাতালে মোট ৬ জন মারা গেছেন। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ১ জন ও বেসরকারী টিএএমএস হাসপাতালে ১ জন মারা যান। এদের মধ্যে ৫ জনের বাড়ি নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট ও উল্লাপাড়ায়। একজনের বাড়ি বগুড়ার গাবতলিতে। অপরদিকে করোনা সংক্রমণ রোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি শনিবার রাত ১২টা থেকে এক সপ্তাহ বগুড়ার সদর ও শহর এলাকায় কঠোর ও সর্বাত্মক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৬১ জন। শনাক্তের হার ২২ শতাংশের বেশি। চুয়াডাঙ্গা ॥ বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে একজন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় নতুন করে ৪৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭৫ জন। ৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে ৪৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৬৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ২ হাজার ৪৪৭ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৩১ জন। আক্রান্তের মধ্যে হোম আইসোলেশনে আছে ৩৯৮ জন, হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩৯ জন ও রেফার আছে ৪ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৫ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ‘মাস্ক পকেটে বা থুথনিতে নয়, মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। নিজে মাস্ক পরিধান করুন, অপরকে পরিধান করতে বলুন। সর্বোপরি, নিজের ও পরিবারের লোকজনের কথা ভেবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করুন।’ এসব কথা ভেসে আসছে পুলিশের গাড়িতে থাকা মাইকিং থেকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে মাইকিং হাতে এভাবেই মানুষকে সচেতন করছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার পুলিশ। গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে আরও ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আরও ৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং করোনা সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। যশোর ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৯ জন ভারত ফেরত। এটি জেলায় একদিনের সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এছাড়া মারা গেছেন ৪ জন। উচ্চ ঝুঁকির কারণে যশোরের পাঁচ পৌরসভা ও ৯ ইউনিয়নে লকডাউন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ৬০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম ॥ চীনের সিনোফার্মের তৈরি ৯১ হাজার ২০০ ডোজ করোনার টিকা পৌঁছেছে। শুক্রবার সকালে বেক্সিমকো ফার্মার বিশেষ গাড়িযোগে ঢাকা থেকে যাওয়া টিকা গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে আরও ২২২। আক্রান্তের হার এখনও কমার কোন লক্ষণ নেই। মোট ১১৫১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। যার মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত ২২২। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫৫ হাজার ৬৮৮। কুড়িগ্রাম ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৩৭ জনের শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৪১২ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো পৌরসভাকে বিশেষ বিধিনিষেধের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শনিবার সকাল থেকে কঠোর এ বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। কুষ্টিয়া ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দেড়শ’ পেরিয়েছে। এই সময়ে মোট ১৫৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গছেন চার জন। দিন দিন বেড়েই চলেছে এই সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া মোট ৩৯৯ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৫৬ নমুনা পজিটিভ হয়। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে এক সপ্তাহের জন্য জেলা প্রশাসন কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের যে ঘোষণা দেয়। মাগুরা ॥ লকডাউন চলছে। মাত্রাতিরিক্ত করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার ৫ম দিনের মতো মাগুরা শহর ও মহম্মদপুর উপজেলায় লকডাউন চলছে। লকডাউনের কারণে শহরের প্রবেশ পথে ঢাকা রোড ও ভায়নার মোড়ে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেট দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ওষুধ ও খাবারের হাটেল ব্যতীত সব ধরনের দোকান বন্ধ থাকবে। মাগুরা শহরে কতদিন লকডাউন চলবে তা বলা হয়নি তবে মহম্মদপুরে সাতদিন লকডাউন চলবে। সোমবার থেকে এই লকডাউন শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা ॥ নতুন করে ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই শনাক্ত নিশ্চিত করা হয়। সংক্রমণের হার ৪৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন ও উপসর্গ নিয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় তারা মারা যান। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন মোট ৫৬ জন। আর ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৬০ জন।
×