ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বছরের মার্চে নির্মাণ কাজ শুরু

’২৬ সালে ঢাকায় চলবে পাতাল রেল

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৮ জুন ২০২১

’২৬ সালে ঢাকায় চলবে পাতাল রেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০২২ সালের মার্চে ঢাকায় পাতাল রেলের নির্মাণকাজ শুরু হবে। সবার আগে বানানো হবে ডিপো। তারপর পর্যায়ক্রমে পাতাল রেলপথ, স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত পাতাল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার ও কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। এই রেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে ২০২৬ সালে। বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক। ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ইতোমধ্যে পাতাল রেল প্রকল্পের সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং বিস্তারিত ডিজাইনের কাজও ৭২ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেলের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ও ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনার নক্সাও পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১২টি প্যাকেজের আওতায় এমআরটি-১ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকায় প্রথম পাতাল রেলপথের নির্মাণকাজ করা হবে। প্রথম প্যাকেজে ডিপোর ভূমি উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এজন্য দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তার ৬ মাসের মধ্যে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে ডিপো নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি। এর আগে চলতি বছরের জুনেই এর কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু চলমান মহামারী পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে আগামী বছরের মার্চে নেয়া হয়। এমডি ছিদ্দিক জানান, এই রেললাইনের দুটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশটি পুরোপুরি পাতালপথে। ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পাতাল অংশ নির্মাণ করা হবে। যার দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। আর কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে উড়ালপথ। যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। ঢাকায় পাতাল রেলের জন্য ২৫টি ট্রেন কেনা হবে বলে জানান ডিএমটিসিএলের এমডি। প্রথমে ঢাকার পাতাল রেল (সাবওয়ে) পথ নির্মাণের লক্ষ্যে চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন চারটি রুটের পরিবর্তে একাধিক পাতাল রেল রুট নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রেনে আটটি করে কোচ থাকবে। একেকটি ট্রেনে একসঙ্গে ৩ হাজার ৮৮ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আর পুরো লাইনটি দিয়ে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। রেললাইনটি নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার ঢাকা ও তার আশপাশে ৬টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। তার মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়ালপথে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা লাইন-৬ নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত, পাতাল রেল নির্মাণে টানেল খননে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহৃত হয় বলে নির্মাণকালীন জনদুর্ভোগ খুবই কম। পরিবেশ বিপর্যয়ও হয় না বলা বললেই চলে। সাবওয়ে নির্মিত হলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করবে। ফলে ভ‚মির উপরিভাগে জনসংখ্যার চলাচল কমবে। ঢাকায় যানজট কমে আসবে। সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারেন, সেখানে পাতাল রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। উড়াল সেতুর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৫০-৭৫ বছর হলেও পাতাল রেলের স্থায়িত্বকাল প্রায় ১০০-১২৫ বছর হবে। ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। বিদ্যমান সড়কের ধারণ ক্ষমতা ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন হলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ০ দশমিক ৯ মিলিয়ন। এ পরিস্থিতিতে বিআরটি, ঢাকা মেট্রো, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল দিয়ে যানজটের সম্পূর্ণ নিরসন সম্ভব নয়। আধুনিক বিশ্বের সিউল, লন্ডন, নিউইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, বাগোটা শহরে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অপসারণ করে পাতাল রেল নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কথা চিন্তা করেই ওসাকার আদলে ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সরকার। এর আগে গত মার্চে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ঝিলমিল থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার, শাহ-কবির মাজার রোড হতে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার, কেরানীগঞ্জ হতে সোনাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিলোমিটারের এই চার রুট নির্ধারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ মাটির নিচে স্থানান্তর হবে এবং মাটির উপরিভাগ যানজট ও জনজট মুক্ত হবে।’ সেতুমন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরে পাতাল রেল নির্মাণের জন্য স্পেনের টিপসার নেতৃত্বে যৌথভাবে জাপানের পেডিকো, বিসিএল এ্যাসোসিয়েটস, কেএসসি এবং বেটসকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
×