ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বীকৃতি পেল নতুন মহাসাগর সাউদার্ন ওশান

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১৬ জুন ২০২১

স্বীকৃতি পেল নতুন মহাসাগর সাউদার্ন ওশান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিগত প্রায় ১০০ বছর ধরে স্বীকৃতির অপেক্ষায় পঞ্চম মহাসাগর সাউদার্ন ওশান। এবার স্বীকৃতি পেল। ফলে প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত ও আর্কটিক মহাসাগরের পর পৃথিবীর পঞ্চম মহাসাগর হিসেবে চিহ্নিত হলো অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের চারপাশ ঘিরে থাকা এই জলসীমা, যাকে সাউদার্ন ওশান হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হলো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি গত সপ্তাহে এই স্বীকৃতি দেয়। গত ৮ জুন বিশ্ব মহাসাগর দিবসে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেন যে, এখন থেকে মানচিত্রে সাউদার্ন ওশানকে চিহ্নিত করা হবে। জিওগ্রাফিক সোসাইটির ভূতত্ত¡বিদ অ্যালেক্স টেইট ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটকে বলেন, ‘বহু বছর ধরেই সাউদার্ন ওশানকে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করে এসেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে একে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’ নতুন স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সুবিধা হবে উল্লেখ করে টেইট বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নাম ধরে কোনো একটা মহাসাগর সম্পর্কে পড়াশোনা করে। সাউদার্ন ওশানকে অন্তর্ভুক্ত না করলে তারা নির্দিষ্ট করে এর সম্বন্ধে জানবে না ও বুঝতে পারবে না এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’ ১৯১৫ সাল থেকে পৃথিবীর মানচিত্র তৈরি করছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। তারা এতদিন মানচিত্রে মাত্র চারটি মহাসাগর চিহ্নিত করে এসেছে। সাধারণভাবে মহাসাগরগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে একে ঘিরে থাকা মহাদেশগুলোর নাম অনুসারে। কিন্তু সাউদার্ন ওশানের নামকরণ করা হয়েছে অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট (এসিসি) বা অ্যান্টার্কটিকের মেরুঞ্চলীয় স্রোতের ওপর ভিত্তি করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, তিন কোটি ৪০ লাখ বছর আগে যখন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অ্যান্টার্কটিকা বিচ্ছিন্ন হয় তখন এসিসির উৎপত্তি। এর কারণে পৃথিবীর নিম্নভাগে পানির নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ হয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানায়, এসিসি ও সাউদার্ন ওশানের অধিকাংশ পানি উত্তরের মহাসাগরগুলোর চেয়ে ঠান্ডা ও কম লবণাক্ত। আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর থেকে পানি টেনে এনে এসিসি একটি প্রাকৃতিক ‘কনভেয়ার বেল্ট’ তৈরি করে যা, পৃথিবীজুড়ে সূর্যের তাপ সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। আর এসিসির ঠান্ডা পানি কার্বনকে গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত করতে সাহায্য করে। এসিসির ঠান্ডা পানিতে হাজারো সামুদ্রিক জীবের বাস। স্প্যানিশ অভিযাত্রী ভাসকো নুনিয়েস দে বালবোয়া প্রথমবারের মতো ১৬০০ শতকে পৃথিবীর দক্ষিণ দিকের এই বিস্তত জলরাশি আবিষ্কার করেন। ধীরে ধীরে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটু জলপথ হয়ে ওঠে। কয়েকশ’ বছর পর উনবিংশ শতাব্দীতে সমুদ্র বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো তাদের জাহাজ ও নৌবাহিনীর সুবিধার্থে নিজেদের সমুদ্র ও জলসীমা বিশেষজ্ঞ বিভাগ গড়ে তোলে। ১৯২১ সালে শুরু হওয়া ইন্টারন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক অর্গানাইজেশনের (আইএইচও) শুরুর দিককার নথিতে প্রথমবারের মতো সাউদার্ন ওশান নামটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ১৯৫৩ সালে আইএইচও এই নামটি প্রত্যাহার করে নেয়। ওই বছর প্রকাশিত গাইডলাইনে তাদের যুক্তি ছিল, ‘অধিকাংশ গৃহীত মতের ভিত্তি এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ওই জলসীমাকে মহাসাগর বলার কোনো যুক্তি নেই।’ বিজ্ঞানীরা এর সঙ্গে একমত হননি। সাউদার্ন ওশানের গুরুত্ব ও অনান্য বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের কাছে পরিষ্কার হওয়ার পর থেকে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই নামের ব্যবহার বাড়তে থাকে। দ্য ইউএস বোর্ড অন জিওগ্রাফিক নেইমস ১৯৯৯ সাল থেকে এটি ব্যবহার করা শুরু করে। আর ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (এনওএএ) এটি ব্যবহার করা শুরু করে ২০২১ সাল থেকে। ওশান শব্দটি ইংরেজিতে এসেছে গ্রিক দেবতা ওশানাসের নাম থেকে। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী ইউরেনাস ও গায়ার ছেলে ওশানাস নদীর দেবতা। প্রাচীন গ্রিসের লোকদের বিশ্বাস ছিল ‘ওশান’ এমন একটি নদী যা পুরো পৃথিবীকে ঘিরে আছে। সেখান থেকেই শব্দটিকে বিশ্বের বিভিন্ন মহাসাগরগুলোর নামকরণে ব্যবহার করা হয়।
×