ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা বাসায় ফিরতে চান, হাসপাতালে ভাল লাগছে না

প্রকাশিত: ২১:৫০, ১২ জুন ২০২১

খালেদা বাসায় ফিরতে চান, হাসপাতালে ভাল লাগছে না

শরীফুল ইসলাম ॥ টানা ৪৬ দিন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। হাসপাতালের পরিবেশ আর ভাল লাগছে না তাঁর। তাই তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজায় চলে যেতে চান। স্বজনরাও তাঁর বাসায় ফেরার অপেক্ষায়। তবে তাঁর কিডনি ও হার্টে এখনও সমস্যা থাকায় চিকিৎসকরা আরও কিছুদিন তাঁকে হাসপাতালে রেখেই নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চান। সূত্র জানায়, সম্প্রতি এক স্বজনের সঙ্গে আলাপকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি আর হাসপাতালে থাকতে চান না। সেখানে তাঁর আর ভাল লাগছে না। হাসপাতালের বদ্ধ পরিবেশ থেকে মুক্ত পরিবেশে ফিরে যেতে চান তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নিতে চান। এমনকি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতেও তাঁর আগ্রহ নেই। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনির যে সমস্যা তা দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার যথেষ্ট নয়। খালেদা জিয়ার আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জানা যায়, হার্ট ও কিডনি ছাড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক অন্য সমস্যাগুলো এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভাল। ৩ জুন খালেদা জিয়া সিসিইউ থেকে কেবিনে ফিরে আসার পর থেকেই স্বজনদের বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবার খাচ্ছেন। ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও মেঝ বোন সেলিমা রহমানের বাসা থেকে আনা খাবার খেতে পেরে তিনি নিজেও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। করোনা পরবর্তী অবস্থায় খালেদা জিয়ার রক্তে যে দূষণ সৃষ্টি হয়েছিল চিকিৎসার পর তা ভাল হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় শ্বাসকষ্ট নেই। ডায়াবেটিস ও চেখের সমস্যাও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ। অর্থারাইটিসের কারণে হাঁটাচলায় কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আগের চেয়ে ভাল। চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এমন সূত্র জানায়, পুরোপুরি সুস্থতার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আরও কিছুদিন হাসপাতালেই রাখা হবে হবে। ১০ সদস্যের চিকিৎসক বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আরও কিছুদিন চিকিৎসার পর আবারও শারীরিক সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর বাসায় ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। এ দুটি সমস্যা নিয়ে তাঁর চিকিৎসকেরা বেশ উদ্বিগ্ন। তারা বলেছেন, দেশের হাসপাতালগুলো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে খালেদা জিয়ার করোনা পরবর্তী যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো এখন মোটামুটি ভাল। গৃহকর্মী ফাতেমাসহ গুলশানের বাসা ফিরোজায় আটজন করোনাক্রান্ত হওয়ায় ১০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষা করা হয়। ১১ এপ্রিল রিপোর্ট প্রকাশিত হয় খালেদা জিয়া করেনাভাইরাসে আক্রান্ত। এর পর থেকে অধ্যাপক ডাঃ এফ. এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাসায় থেকেই খালেদা জিয়া চিকিৎসা নেন। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানের পরামর্শ মতে চিকিৎসকরা নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যান। ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় তাঁকে ওইদিন হাসপাতালে ভর্তি না করে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওইদিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ মে তাঁকে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে নেয়া হয়। এর পর সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি চায় বিএনপি। কিন্তু আইনগত জটিলতায় সরকার তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারেনি। সিসিইউতে থাকা অবস্থায় গত ২৮ মে খালেদা জিয়া হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন। তবে ৩০ মে তার জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসে। নতুন করে বড় রকমের কোন সমস্যা না হওয়ায় ৩ জুন তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে আনা হয়। এখনও তিনি কেবিনেই আছেন। চিকিৎসকদের মতে, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগে বাসায় নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। তাঁর শরীরের এখন যে অবস্থা তাতে বাসায় নেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তবে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হলে গুলশানের বাসায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে। এদিকে লন্ডন থেকে ছেলে তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানও চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, আরেকটু সুস্থ হলে যেন খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য রিলিজ দেয়া হয়। বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্র্তি করা হয়েছিল বয়স্ক মানুষ হিসেবে করোনা পরবর্তী শরীরে যে স্বাভাবিক জটিলতাগুলো দেখা দেয় তার চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি করোনা পরবর্তী জটিলতা থেকে মুক্ত। কিন্তু তাঁর কিডনি ও হার্টের সমস্যা রয়ে গেছে। এখন যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সব পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পর তাঁকে বাসায় নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
×