ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে পুলিশ দেখে পালিয়েছে কবিরাজ

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১০ জুন ২০২১

বরিশালে পুলিশ দেখে পালিয়েছে কবিরাজ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সাপে কাটা এক তরুণীর চিকিৎসা করছিলেন কথিত কবিরাজ ও তার সহযোগিরা। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সহযোগিদের নিয়ে পালিয়ে যায় ওই কবিরাজ। পরে পুলিশ অসুস্থ তরুণীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দিবাগত রাতে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুর গ্রামে। কথিত কবিরাজ আলী আকবর হোসেন (৩৫) মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার দলের অপর সহযোগিরা হলো-একই গ্রামের তফেল উদ্দিন, হাফিজুল ইসলাম, মোঃ বাপ্পী, আবু হানিফ ও মোঃ শাহজাহান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দিবাগত রাতে ওই তরুণীকে সাপ বা বিষাক্ত কোনো পোকা কামড় দেয়। এতে তার (তরুণী) পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পরেন। ওইরাতেই তরুণীকে কবিরাজ আলী আকবর হোসেনের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর ঝাড়ফুঁক শেষে তরুণীকে বাড়িতে আনা হয়। পরে ওই তরুণী ফের অসুস্থ হয়ে পরলে মঙ্গলবার (৮ জুন) তরুণীর স্বজনরা গিয়ে কবিরাজ আলী আকবরকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে বাড়ির উঠানে সামিয়ানা টানিয়ে কলা গাছের সামনে মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে ঘেরাও দেয়া সীমানার মধ্যে একটি চেয়ারে বসানো হয় তরুণীকে। এরপর শুরু হয় ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা। কিছুক্ষণ পর পর ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পরে তরুণী ও কলাগাছকে ঝাড়ফুঁক করতে থাকেন কবিরাজ। এভাবে মঙ্গলবার গড়িয়ে চলে বুধবার। সাপে কাটা রোগীর অদ্ভুত এ চিকিৎসার খবর ছড়িয়ে পরলে ওই বাড়িতে আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। খবর পেয়ে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ ওই বাড়িতে যান। এ সময় পুলিশ দেখে সহযোগিদের নিয়ে পালিয়ে যায় কথিত কবিরাজ আলী আকবর হোসেন। তরুণীর স্বজনরা জানান, কবিরাজ আলী আকবর বাড়িতে এসে ঝাড়ফুঁক দিয়ে জানিয়েছে তাকে (তরুণী) বিষধর সাপে দশংন করেছে। তাই শুধু ঝাড়ফুঁকে নয় লাগবে ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা। এ জন্য তরুণীর বাবার কাছে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে তার সাথে ৩৭ হাজার টাকা চুক্তি করে আগেভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী কবিরাজের সাথে ছয় সদস্যর দল রোগীর বাড়িতে থাকবে, খাওয়া দাওয়া করবে। বাদ্য-বাজনার তালে তালে মন্ত্র পরে ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা দেয়া হবে। খাবার, ডেকোরেশনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা ও এর ব্যয় রোগীর অভিভাবককে বহন করতে হবে। তিন, পাঁচ অথবা সাতদিনের মধ্যে তরুণীকে পুরোপুরি সুস্থ্য করে তোলারও গ্যারান্টি দেন কবিরাজ আলী আকবর। তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন অসুস্থ্য তরুণীর বাবা। তরুণীর বাবা আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত কবিরাজের চিকিৎসায় তার মেয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। তবে কবিরাজ পালিয়ে গেলে পুলিশ বুধবার রাতে তার মেয়েকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়ে তাকে (তরুণী) বাড়িতে আনা হয়। তার মেয়ে এখন পুরোপুরি সুস্থ্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মহিদুল আলম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই কথিত কবিরাজ তার দল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে অসুস্থ্য ওই তরুণীকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও বলেন, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার নামে যা করা হচ্ছিল তা ভন্ডামী। গ্রামের মানুষ খুব সহজ সরল, তাই এসব কবিরাজের কথায় বিশ্বাস করে তারা প্রতারিত হচ্ছে।
×