ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনায় চারজন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৮ মে ২০২১

কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনায় চারজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মেসেজ পেয়ে এক কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামিসহ চারজন ধর্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোঃ লালন (২০), মোঃ রাসেল (২২), মোঃ সুমন (২১) ও মোঃ রিপন (২৩)। ঘটনার ১২ দিন পর পুলিশ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ওই কিশোরীকে তার দাদির বাড়িতে উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ আতঙ্কিত কিশোরীকে অভয় দেয়। পুলিশের অভয় পেয়ে মেয়েটির বর্ণনা ও তথ্যমতে ধর্ষকের শনাক্ত করা হয়। এরপরই ধর্ষকদের গ্রেফতার করা হয়। হতদরিদ্র ওই কিশোরী ছোটবেলায় মাকে হারায়। এর কিছুদিন পর বাবা আবার বিয়ে করেন। সেখানে অত্যাচার নির্যাতনে ষোল-সতেরো বছরের মেয়েটির ঠাঁই হয়নি। পরে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দাদির কষ্টের সংসারে তার দিন কাটে। এক পর্যায়ে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মেয়েটি সিরাজগঞ্জের রায়পুরে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে বন্ধবীর চাকরি দেয়ার আশ্বাসে ঘর থেকে বের হয়। গন্তব্য অজানা অচেনা সিরাজগঞ্জের রায়পুর। করোনায় সড়কে দূরপাল্লার বাসের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে তাকে যেতে হচ্ছে। ঘটনাটি মে মাসের প্রথম দিকে। যাত্রাপথে টাঙ্গাইলের কালিহাতী পর্যন্ত আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অচেনা এই শহরটিতে কাউকে চেনে না। কোথায় যাবে। তা নিয়ে ভেবে পাচ্ছিল না মেয়েটি। সেখানে রেল স্টেশনে কিছুক্ষণ একা দাঁড়িয়ে থাকে। অচেনা এই শহরে খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উপায়। এই নির্জন পুরীতে কিভাবে নিরাপদে রাতটা পার করে। কে তাকে নিরাপদ আশ্রয় দেবে। এমন সময় স্টেশনের পাশে এক লেগুনা চালক তার দিকে এগিয়ে আসে। সবকিছু শুনে তাকে সিরাজগঞ্জ পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেয়। পথে ওই চালকের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন যুবক। তারা মেয়েটিকে নিয়ে কালিহাতীর হাতিয়া ও সল্লার মাঝামাঝি ছোট বটতলা গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে লেগুনা থেকে নামিয়ে একটি ধানক্ষেতের দিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে নরপশুরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দলবেঁধে ধর্ষণ করে তাকে রক্তাক্ত করে। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয় তারা। অসুস্থ শরীর নিয়ে মেয়েটি কোনরকমে বেঁচে একটি নির্জন স্থানে বিশ্রামের জন্য গাছের নিচে হেলান দেয়। এ সময় সেখান দিয়ে একজন ভদ্রলোক মেয়েটি দেখে বুঝতে পারেন তার কোন সমস্যা হয়েছে। ওই লোক মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে আগের রাতে রোমহর্ষক কাহিনী। তখনও মেয়েটি ভয়ে কাঁপছিল। কারও কাছে সাহায্য চাওয়ারও মানসিকতা ছিল না তার। তার ধারণা, পশুগুলো আবারও তাকে খুঁজে বের করবে। তার ওপর নির্যাতন করবে। মেয়েটিকে খুব বেশিক্ষণ অনুসরণ করতে পারেননি ভদ্রলাক। ঘটনাটি ঘটে ৬ মে। বিষয়টি হয়তো ওখানেই শেষ হতো। কেউ কোনদিন জানতেও পারতো না। নিপীড়নের যাতনা আর ভয় মেয়েটিকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হতো। কিন্তু, কি মনে করে ভদ্রলোক পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বার্তা পাঠালেন। মেয়েটির ওই ঘটনার বিস্তারিত লিখে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। আবার সেটিও লিখলেন ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ মে। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মেয়েটি ঘটনা ঘটনার এক সপ্তাহ পর ওই ভদ্রলোকের বার্তা পেয়ে তারা বার্তাটি ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) কালিহাতী সওগাতুল আলমকে পাঠিয়ে দ্রুত তদন্ত করে মেয়েটি ও তার ধর্ষকদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সদর দফতর মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ে বার্তা পেয়ে ওসি কালিহাতীর তৎপরতায় ইন্সপেক্টর তদন্ত রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে, এসআই রাজু আহমেদ এবং এএসআই তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম এ বিষয়টির তদন্তে নামে। এক পর্যায়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পায় তারা। ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ কোন ক্লু না থাকায় প্রথমে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটিকে শনাক্ত করে। এমনকি তার দাদির ঠিকানাও খুঁজে পায় পুলিশ। সেখানেই পাওয়া যায় তাকে। সেখান থেকে তাকে কালিহাতী থানায় আনা হয়। তাকে অভয় দেয়া হয়। আশ্বাস দেয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার। মেয়েটির বর্ণনা ও দেয়া তথ্যমতে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। রবিবার রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ চারজন ধর্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হচ্ছে, মোঃ লালন (২০), মোঃ রাসেল, মোঃ সুমন, মোঃ রিপন। এদের সবাই টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার শল্লা গ্রামের বাসিন্দা। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এই ঘটনায় কালিহাতী থানায় মামলা হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন। মেয়েটির পুনর্বাসনের জন্যও চেষ্টা করছে পুলিশ। বরাবরের মতো পুরো প্রক্রিয়ায় মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরামর্শক এবং সমন্বয়ক হিসেবে পাশে থেকেছে। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেষ রক্ষা হলো না রাজার ॥ ওমান থেকে এক প্রবাসী তার আত্মীয়ের জন্য মাসুদ পারভেজ রাজা নামে আরেক প্রবাসীর কাছে একটি ল্যাপটপ পাঠান। তবে রাজা দেশে ফিরে সেই ল্যাপটপ না দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে ওই ওমান প্রবাসীর আত্মীয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইনবক্সে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে পুলিশ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ল্যাপটপটি উদ্ধার করে। সোমবার পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মোঃ সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোহেল রানা বলেন, রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আলাউদ্দিন মাহি নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মেসেজ করে জানান, ওমান থেকে তার ভাগ্নি জামাই ওমান ফেরত অপর এক বাংলাদেশী মাসুদ পারভেজ রাজার মাধ্যমে একটি ল্যাপটপ পাঠান। কথা ছিল দেশে ফেরার দিন এয়ারপোর্ট থেকে ল্যাপটপটি আলাউদ্দিন মাহি নিজেই সংগ্রহ করবেন। কিন্তু মাসুদ পারভেজ রাজা এয়ারপোর্টে নেমে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। রাজা ও তার ভাইয়ের মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও তারা ল্যাপটপের কথা অস্বীকার করেন। পরে আলাউদ্দিন বিষয়টি পুলিশকে জানায়। বিষয়টি মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের দৃষ্টিতে আনেন আলাউদ্দিন। তার মেসেজ পেয়ে প্রাথমিক কিছু তথ্য সংগ্রহ করে মিডিয়া উইং। জানতে পারে মাসুদ পারভেজ রাজার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানায়। পরে অভিযুক্তের নাম ঠিকানাসহ মেসেজটি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মোঃ শাহজালালকে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওসি ভেড়ামারা তাৎক্ষণিকভাবে এসআই দীপন কুমার ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযুক্তের বাড়িতে পাঠান। পুলিশ দেখে প্রথমে তার পরিবারের সদস্যরা মাসুদ পারভেজ রাজার দেশে ফেরার কথা অস্বীকার করেন। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা জানান, পরে আলাউদ্দিনের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাজাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ল্যাপটপটি উদ্ধার করা হয়। ল্যাপটপটি আলাউদ্দিন মাহিকে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজ রাজার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
×