ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবাহনী ৫-২ ব্রাদার্স

সাত গোলের ম্যাচে আবাহনীর বড় জয়

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ৫ মে ২০২১

সাত গোলের ম্যাচে আবাহনীর বড় জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৯৭৫ সালের ঢাকা লীগে প্রথমবারের মতো খেলেছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা মুখোমুখি হয়েছিল আগের বছরের প্রথম ও নতুন চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের। শক্তিশালী আবাহনীকে সেই ম্যাচে ১-০ গোলে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল নবাগত ব্রাদার্স। এরপরই আবাহনী-মোহামেডানের পর দেশের ফুটবলে ‘তৃতীয় শক্তি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ক্লাবটি। তবে দু’বারের (২০০৩ ও ২০০৫) বেশি লীগ শিরোপা জিততে পারেনি তারা। এরপর থেকে সাংগঠনিক ব্যর্থতায় ক্রমেই শক্তি হারাতে থাকে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি। পেশাদার লীগ শুরু হওয়ার পর আবাহনী, মোহামেডান, শেখ রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধার মতো ব্রাদার্সও সবকটি লীগে খেলেছে। তবে চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) তাদের যে দুরবস্থা তাতে করে পরের মৌসুমে লীগে খেলার মতো যোগ্যতা তাদের নাও থাকতে পারে। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিপিএলের ম্যাচে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের কাছে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে তারা। আবাহনী তাদের হারায় ৫-২ গোলে (প্রথমার্ধে বিজয়ী দল এগিয়েছিল ৩-০ গোলে)। লীগের প্রথম লেগেও ব্রাদার্সকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল আবাহনী। নিজেদের চতুর্দশ ম্যাচে এটা আবাহনীর অষ্টম জয়। ২৯ পয়েন্ট নিয়ে তারা পয়েন্ট টেবিলে আছে আগের মতোই তিনে। তাদের সমান পয়েন্ট শেখ জামাল ধানম-িরও। তবে এক ম্যাচ কম খেলায় জামাল আছে দুইয়ে। পক্ষান্তরে নিজেদের চতুর্দশ ম্যাচে এটা একাদশ হার ব্রাদার্সের। মাত্র ৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ১৩ দলের মধ্যে দ্বাদশ স্থানে। এই হারে তাদের অবনমিত হওয়ার শঙ্কা আরও গাঢ় হলো। মঙ্গলবার ম্যাচের শুরু থেকেই রক্ষণ সামলে কাউন্টার এ্যাটাক খেলার স্টাইল বেছে নেয় গোপীবাগের দল ব্রাদার্স। কিন্তু তাদের সেই কৌশল কাজে দেয়নি। একের পর এক গোল হজম করে এর মাসুল দিতে হয়েছে। ২২ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় আবাহনী। ব্রাদার্সের সীমানায় থ্রো ইন পায় তারা। ডিফেন্ডার রায়হান হাসান লম্বা থ্রো ফেলেন ব্রাদার্সের ডি-বক্সের ভেতরে। জটলার মধ্যে সেই বলে ব্যাক হেড করেন আবাহনীর হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট কারভেন্স ফিলস্। সেই বল গিয়ে পড়ে বক্সের ভেতরে আনমার্কড সানডে চিজোবার পায়ে। বিন্দুমাত্র দেরি না করে বলটা জালে পাঠিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে গোলের উল্লাসে মেতে ওঠেন এই নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড (১-০)। ৪০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনী। ব্রাদার্সের সীমানায় আবারও থ্রো পায় তারা। রায়হানের আবারও লম্বা থ্রো গোলপোস্টে। তার আফগান সতীর্থ ডিফেন্ডার মাসিহ্ সাইঘানি লাফিয়ে উঠে যে ব্যাক হেড করেন সেই বলে পেছন থেকে দৌড়ে এসে আবারও জোরালো হেড করে বল জালে পাঠান আরেক ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরী (২-০)। ৪৪ মিনিটে কর্নার পায় ১৭ বারের লীগ চ্যাািম্পয়ন আবাহনী। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্টো সান্তোস দা সিলভা কর্নার কিক নেন। বক্সের ভেতরে জটলার ভেতরে উড়ন্ত সেই বলে জোরালো হেড করেন বেলফোর্ট। বল জালে প্রবেশের আগ মুহূর্তে সেই বল কোনমতে হাত লাগিয়ে ঠেকান ব্রাদার্স গোলরক্ষক জাফর সর্দার। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। বল ফস্কে যায় তার হাত থেকে। সেই বল আয়েশ করে বাঁ পায়ে পোস্টে ঠেলে দেন আবাহনীর মিডফিল্ডার জুয়েল রানা (৩-০)। বিরতির পর ৬২ মিনিটে আবারও গোল করে আবাহনী। মাঝমাঠে অধিনায়ক-মিডফিল্ডার সোহেল রানা বল পাস দেন বেলফোর্টকে। বেলফোর্ট সতীর্থ রাফায়েলকে ছোট পাস দেন। ওদিকে ফাঁকায় বক্সের উদ্দেশ্যে কষে দৌড় দিয়েছেন বেলফোর্ট। সানডে বল পেয়েই লম্বা থ্রু পাস বাড়ান বেলফোর্টের উদ্দেশে। সেই বল ধরে বেলফোর্ট বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ব্রাদার্সের বক্সের ভেতরে। ওদিকে বিপদ বুঝে সামনে চলে আসেন ব্রাদার্স গোলরক্ষক জাফর। ঠা-া মাথায় ডান পায়ের গড়ানো আলতো প্লেসিং শটে গোল করেন বেলফোর্ট (৪-০)। ৭৭ মিনিটে এক সতীর্থের কাছ থেকে উঁচু লম্বা পাস ধরে বল নিয়ে আবাহনীর বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন ব্রাদার্সের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড উকুচুকা আওয়ালা মাগালান। আবাহনীর মাসিহ্ সাইঘানি তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে বিপদ বুঝে সামনে চলে আসেন আবাহনী গোলরক্ষক সুলতান আহমেদ শাকিল। সেই অবস্থায় বাঁ পায়ের শট নেন মাগালান। মাসিহ্র পায়ে লেগে ডিফ্লেক সেই শটটি ধীরে ধীরে চলে যায় জালে। ব্যবধান কমায় দুইবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন ব্রাদার্স (১-৪)। পরের মিনিটেই আবারও গোল করে আবাহনী। মাঝমাঠ থেকে এক সতীর্থের কাছ থেকে উঁচু লম্বা পাস ধরে বক্সে ঢুকে আগুয়ান ব্রাদার্স গোলরক্ষক জাফরের মাথার ওপর দিয়ে ডান পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত চিপ শটে বল জালে পাঠান বদলি ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়া (৫-১)। সংযুক্তি সময়ে (৯০+৪ মিনিটে) আরেকটি গোল শোধ করে ব্রাদার্স। তাদের উজবেক ডিফেন্ডার ফুরকাত জন খাসানবোয়েভকে নিজেদের বক্সের ভেতরে ফাউল করেন আবাহনী ডিফেন্ডার মামুন মিয়া। রেফারি জিএম চৌধুরী নয়ন পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেন আবারও সেই মাগালান (২-৫)। গোলের কয়েক সেকেন্ড পরই খেলা শেষ হলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পাওয়ার চিত্তসুখ নিয়ে মাঠ ছাড়ে লেমোসের শিষ্যরা।
×