ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মির্জা ফখরুল ও শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে নেয়ার তোড়জোড়

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৫ মে ২০২১

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিদেশে নেয়ার তোড়জোড়

শরীফুল ইসলাম ॥ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন তাঁর স্বজন ও বিএনপি নেতারা। সাময়িক মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই যেতে হবে। আর এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে তারা। এ ছাড়া সরকারের অনুমতি পেলে যাতে দ্রত তাঁকে বিদেশে নেয়া যায় সে প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে স্বজনরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। সাময়িক মুক্তির পর থেকেই খালেদা জিয়ার স্বজনরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা চালায়। কিন্তু একদিকে করোনা পরিস্থিতি ও অন্যদিকে সরকারের অনুমতি না মেলায় তাদের এ চেষ্টা সফল হয়নি। তবে খালেদা জিয়া করোনাক্রান্ত হওয়ার পর আবার নতুন উদ্যমে তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন তারা। এ জন্য লন্ডন থেকে ছেলে তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১২ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডও তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা অতীব জরুরী বলে সুপারিশ করেছেন। সূত্র মতে, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের নির্দেশনা পেয়ে স্বজন ও বিএনপি নেতারা তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করে। তবে এতদিন তারা গোপনে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতির পর বিষয়টি সামনে চলে আসে। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামালকে ফোন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মির্জা ফখরুলকে জানান, বিষয়টি সরকারের নয়, আদালতের এখতিয়ার। তাই এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। কারণ, সোমবার থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সিসিইউতে নেয়া হয়েছে। এখনও তিনি সিসিইউতে আছেন। তাঁকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারও তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা যায়। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন মহল থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, করোনা পরবর্তী শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে লন্ডনে নেয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে বেশ ক’দিন আগেই। খালেদা জিয়া ১০ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করানো হয়। এতে ফুসফুসে কিছুটা সমস্যা থাকায় পরের দিনই খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম তাঁর বোনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেন। তবে এ বিষয়টি সত্য নয় বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বোন সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, তবে কৌশলগত কারণে তা গোপন রাখা হয়। যেভাবে বছরখানেক আগে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তির আগে সরকারের কাছে করা আবেদনের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। সূত্র জানায়, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়াকে বিশেষ বিমানে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ বিষয়ে তারা সব প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেলেই এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে বিশেষ বিমানে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে অপর একটি সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার কথা বলে স্বজন ও বিএনপি নেতারা বিদেশে নেয়ার কথা বললেও কার্যত তারা খালেদা জিয়ার নিরাপদ প্রস্থান চায়। স্থায়ী মুক্তির সম্ভাবনা নেই মনে করেই তারা এ কৌশল নেয়। তবে সরকার কোন কারণে লন্ডনে যেতে দিতে না চাইলে তারা সিঙ্গাপুর বা থাইলেন্ডের কোন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এবং পরে সেখান থেকে তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যেতে চান। দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর সরকারের কাছে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতবছর ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া প্রথমে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করেন। তার মুক্তির দুই শর্তের মধ্যে ছিল বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না। ওই ৬ মাস পর আরও দুবার স্বজনরা সরকারের কাছে আবেদন করে প্রতিবার ৬ মাস করে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ান। এর ফলে আগামী সেপ্টেম্বর ২৪ তারিখ পর্যন্ত তিনি সাময়িকভাবে মুক্ত থাকছেন। বিদেশে নেয়ার সুযোগ পেলে প্রয়োজনে সরকারের কাছে আবেদন করে আবারও স্বজনরা মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। এদিকে বর্তমানে অসুস্থ থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য যেকোনভাবে সরকারকে ম্যানেজ করে যেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া যায় সে ব্যাপারে তাঁর স্বজন এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে উপায়ে খালেদা জিয়াকে ৩ বার ৬ মাস করে সাময়িকভাবে মুক্ত থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে সেভাবে চেষ্টা চালিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো যায় কিনা সে চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিএনপি যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে চান তা এর আগেও দলীয় এক অনুষ্ঠানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দেশে চিকিৎসা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে চেয়েছেন। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তাঁকে স্থায়ী মুক্তি দিতে হবে এবং তিনি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে চাইলে তাঁকে সে সুযোগ দিতে হবে। আর সর্বশেষ সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর ক’দিন আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরাও জানিয়েছিলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হতে পারে। তাঁর শারীরিক বেশ কিছু সমস্যা থাকায় স্বজনরাও চান তিনি যেন বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেন। অপর এক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সকল সদস্য বর্তমানে অন্ডনে অবস্থান করছেন। সহসা তাদের দেশে ফিরে আসারও কোন সম্ভাবনা নেই। তাই একাকী দেশে না থেকে খালেদা জিয়াও যেন লন্ডনে চলে যান অনেক আগে থেকেই তাঁর স্বজনরা চেয়েছিলেন। তবে এবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর স্বজন ও বিএনপি নেতারা দৌড়ঝাঁপ বৃদ্ধি করে। তাদের ধারণা সরকার আগে তাঁকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও এবার হয়ত ইতিবাচক হবে। আগে খালেদা জিয়ার স্বজনরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেয়ার চেষ্টা করলে বিএনপির কিছু নেতা প্রকাশ্যে সমালোচনা শুরু করেন। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার স্বজনরাও নিরুৎসাহিত হন। তবে খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বিএনপি নেতাদের সেই নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির পর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীই এখন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাক সেটা চান। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়েও এখন আর খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতাদের কোন আপত্তি নেই বলে জানা যায়। কারাবন্দী থাকা অবস্থায় আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্তি বা জামিনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাঁর একগুঁয়ে মনোভাব পরিবর্তন করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। এ চেষ্টায় তাঁকে সহযোগিতা করেন স্বজনরা। বিএনপি নেতাদের একটি অংশ খালেদা জিয়ার এভাবে সমঝোতা করে মুক্তির বিষয়টি তখন ভালভাবে না নিলেও এখন তারাও মনে করছেন, এভাবে অসুস্থ অবস্থায় একা সময় কাটানোর চেয়ে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারলে শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি ভাল থাকতে পারবেন। আগে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না পেলেও এবার শারীরিক সমস্যা কিছুটা জটিল হওয়ায় খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন এমনটি মনে করে লন্ডনে অবস্থান করা তাঁর ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডাঃ জোবাইদা রহমান যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখেছেন। তিনি কোথায় চিকিৎসা নেবেন এবং এর জন্য কি কি করা দরকার সে ব্যবস্থাও করে রাখা হচ্ছে। এছাড়া খালেদা জিয়া কবে চিকিৎসার জন্য যাবেন সেজন্য লন্ডনে অবস্থান করা অন্য স্বজনরাও অপেক্ষা করছেন। যখনই খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে তখনই তারা সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবেন। এখন তাদের শুধু অপেক্ষার পালা। মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সাময়িক মুক্তির পর থেকেই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বাসার বাইরে থেকে চিকিৎসক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি নিকটাত্মীয়দের বাসায় আসা-যাওয়াও সীমিত করা হয়। বাসায় থাকা বিভিন্ন উপকরণের সাহায্যে প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করানো হয়। তাঁকে চিকিৎসা সহায়তা দিতে বাসায় সর্বক্ষণিকভাবে ছিলেন একজন নার্স। যিনি লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানের সঙ্গে কথা বলে খালেদা জিয়াকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করাতেন। আর ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা মনে করলে ওই নার্স ডাঃ জোবাইদা রহমানের সঙ্গে কথা বলতেন। আর ডাঃ জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বোর্ডে থাকা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করে দিতেন। এ বছর এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তায় গুলশানের বাসায় তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমাসহ ৮কর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ারও করোনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। ১০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করেনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ১৭তম দিনে করোনার দ্বিতীয় পরীক্ষার রিপোর্টও পজিটিভ আসে। ১৫ এপ্রিল গুলশানের বাসা থেকে এক ঘণ্টার জন্য বের হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করান খালেদা জিয়া। রিপোর্ট ভাল আসায় তিনি হাসপাতালে না থেকে বাসায় ফিরে যান। তবে ২৭ এপ্রিল রাতে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তিনি। ওইদিন রাতে আবারও সিটি স্ক্যানসহ আরও কিছু পরীক্ষার পর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ২৮ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়ার রুটিন চেকআপ শুরু করেন এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রুটিন চেকআপের পাশাপাশি তাঁর আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়। ৩ মে তাঁর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় এবং ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত ॥ এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান। তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের দিন যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। আমরা তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। ডাঃ জাহিদ বলেন, মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সে মোতাবেক চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপাতত তাকে সিসিইউতে রেখেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। ডাঃ জাহিদ বলেন, এই ব্রিফিং শুরুর একটু আগেও খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে গিয়ে দেখে এসেছি। তবে সিসিইউতে থাকা রোগীর সঙ্গে সব সময় কথা বলা যায় না। দূর থেকে দেখতে হয়। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল রাতে সিটি স্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সে রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার শ^াসকষ্ট হলে তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ॥ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করেছে শাহবাগ থানা কৃষকদল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে বিজিআইসি ভবনে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত। কারণ, আমাদের নেত্রী অসুস্থ। তার জন্য সারা দেশের ঘরে ঘরে মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। তিনিসুস্থ না হলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। তাই সবাই তার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। খালেদার চিকিৎসায় সরকার সব সময় সহায়তায় প্রস্তুত- হানিফ ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকার সব সময় সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া করোনাক্রান্ত হওয়ার পর আমরা সবাই উনার সুস্বাস্থ্য কামনা করেছি। আমরা দোয়া করি উনি সুস্থ হয়ে উঠুন। নিয়মিতভাবে তার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা করছেন। তিনি যাতে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন, তার জন্য সরকার সহায়তা করে আসছে। আমাদের সরকার সব সময় সে সহায়তা করতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার রাজধানীর বংশাল থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সমালোচনা করে হানিফ বলেন, বিএনপি শুধু সরকারের সমালোচনা করছে। কিন্তু করোনা মহামারীতে অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দেশকে যারা ভালবাসেন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহায়তা করুন।
×