ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রায় দেড় ডজন

আসলামের আসনে স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৪ মে ২০২১

আসলামের আসনে স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুর এক মাসও পূর্ণ হয়নি। ভয়াল করোনার কারণে সব ধরনের নির্বাচন ও রাজনৈতিক কর্মকা- স্থগিত থাকলেও ইতোমধ্যে জমে উঠেছে আসনটিতে মনোনয়নের লড়াই। একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া ঢাকা-১৪ আসনে জনপ্রিয় ও সাংগঠনিক দক্ষ প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে সাংগঠনিক ও একাধিক সংস্থা ইতোমধ্যে মাঠ জরিপ শুরু করেছে। করোনার কারণে ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগে আসনটিতে প্রায় দেড় ডজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতিও তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের কাছে দেন-দরবারের পাশাপাশি জনসমর্থন বাড়াতে প্রতিদিন ইফতার পার্টি, করোনায় অসহায় হয়ে পড়া এলাকার মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশ ক’জন নেতা-নেত্রী। জানা গেছে, আসলামুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৪ আসনে দলের জন্য নিবেদিত, নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত, অধিকতর জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে- এমন যোগ্য নেতা খুঁজছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই আসনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা না থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আগে থেকেই মাঠ জরিপের মাধ্যমে দলের যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে রাখতে চায়। এই আসনের তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসলামুল হক গত ৪ এপ্রিল আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। সংসদ সচিবালয় থেকে ইতোমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকা-১৪সহ তিনটি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন এবং স্থগিত রাখা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে। চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় লকডাউন চললেও বসে নেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন রান্নাকরা খাবার, ইফতারসহ এলাকার দুস্থ-অসহায় মানুষের মধ্যে সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করার মাধ্যমে প্রায় দেড় ডজন জনপ্রিয়-অজনপ্রিয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছে। সামাজিক গণমাধ্যমসহ ত্রাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার মানুষের সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-১৪ নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সরব রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। দোয়া ও ইফতার মাহফিল, ভার্চুয়াল সভাসহ ঘরোয়া ও বাইরের নানা অনুষ্ঠানে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা উপস্থিত হচ্ছেন। নিজেদের অধিক জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কাছে প্রতিনিয়ত দেন-দরবার ও তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- সদ্য প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের সহধর্মিণী মাকসুদা হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এস এ মান্নান কচি, এই আসনের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দারুস সালাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মাজহারুল আনাম, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দেওয়ান আবদুল মান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফসহ আরও বেশ কিছু স্থানীয় নেতা। এছাড়া সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলও নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে পোস্ট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-১৪ আসনের উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থিতা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। তফসিল ঘোষণা কবে হবে তা এখনও ঠিক না হলেও প্রতিদিনই মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা লম্বা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে কাদা-ছোড়াছুড়িও শুরু হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। নেতারা জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বৈঠকে এ বিষয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করবেন, তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের সহধর্মিণী মাকসুদা হকের পক্ষে মাঠে নেমেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। আসলামুল হকের পরিবারসহ তার সমর্থকরা প্রয়াত নেতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে উপ-নির্বাচনে মাকসুদা হককে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ করেছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি ও যুব মহিলা লীগ উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন এই আসনের শক্তিশালী অপর দুই প্রার্থী। এই আসন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু সাবেক ছাত্রনেতা এস এ মান্নান কচির। তিনি আশাবাদী মনোনয়নের বিষয়ে। অন্যদিকে সাবিনা আক্তার তুহিন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হিসেবে আসলামুল হকের পাশাপাশি তিনিও এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে- সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকাকালে তিনি এই আসনে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এলাকার বিশাল সংখ্যক ভোটার তার পক্ষে রয়েছেন। এছাড়া গত নির্বাচনেও তিনি এই আসনের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলও এই আসনের আরেকজন শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক দুই ছাত্র নেতা এবিএম মাজহারুল আনাম ও কাজী ফরিদুল হক হ্যাপীরও রয়েছে নির্বাচনী এলাকায় শক্ত অবস্থান। মাজহারুল আনাম গত তিন নির্বাচনেই এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আর প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের ঘনিষ্ঠ এবং তার তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় দলীয় কর্মকা- সফল করার কাজে সম্পৃক্ত থাকায় ফরিদুল হক হ্যাপীরও রয়েছে এলাকার মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ও ঘনিষ্ঠতা। দুজনেরই প্রত্যাশা এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এমন প্রার্থীকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয়। এছাড়া সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে পোস্ট দিয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে সব নির্বাচন স্থগিত থাকায় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামেননি। তবে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। গত ৪ এপ্রিল সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুর পর ১৩ এপ্রিল ঢাকা-১৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এর গেজেট নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আসনটিতে উপনির্বাচন নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকার মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানার আংশিক এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড এ আসনের অন্তর্ভুক্ত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব এলাকা ঢাকা-১১ আসনভুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা-১১ ভেঙ্গে ঢাকা-১৪, ১৫ ও ১৬ আসন গঠন করা হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আসলামুল হক। প্রথমবার প্রার্থী হয়েই বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী এস এ খালেককে পরাজিত করেন তিনি। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সমর্থনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আসলামুল হক আসলাম।
×