ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে

ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় অপরাধী চক্র

প্রকাশিত: ২১:২১, ৪ মে ২০২১

ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় অপরাধী চক্র

শংকর কুমার দে ॥ ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছর বেড়ে যায় মৌসুমি অপরাধীদের তৎপরতা। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও প্রতারণার ফাঁদ পাতে এসব চক্র। ঈদ ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সক্রিয় অপরাধী চক্র। করোনার কারণে লকডাউন থাকায় প্রথমদিকে কিছুটা কম ছিল অপরাধ তৎপরতা। কিন্তু ঈদ এগিয়ে আসতে থাকায় ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হওয়ায় বেড়েছে মানুষের অবাধ চলাফেরা। কারখানা, শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। শহরে রাত-দিন বেড়েছে অস্বাভাবিক যান চলাচল। আর এ সুযোগেই তৎপরতা শুরু করেছে অপরাধীরা। ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, চাঁদাবাজচক্রসহ নানা কিসিমের অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে। অন্যবারের মতো এবারো তৎপর রয়েছে একাধিক চক্র; এমন তথ্যে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বড় অঙ্কের অর্থবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানি এস্কর্ট সেবা দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। নানা কৌশলে মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এসব চক্রের মধ্যে রয়েছে অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, থাবা-পার্টি, এবং টানা-পার্টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও থেমে নেই এসব অপরাধীদের দৌরাত্ম্য ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ছিনতাইসহ মৌসুমি অপরাধী ধরতে এরইমধ্যে অভিযান শুরু করেছে ডিবির একাধিক টিম। সে সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ ও র‌্যাব। এসব অপরাধী ধরতে গোয়েন্দা বেশে নগরীর ব্যস্ত জায়গা ও শপিংমলগুলোর পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডিবির একাধিক টিমের সদস্য। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদ সামনে রেখে এসব সংঘবদ্ধ অপরাধী রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আসা লোকজনকে টার্গেট করে সখ্য স্থাপন করে। পরে তাদের অপর সহযোগিরা টার্গেটকৃত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য খেতে আমন্ত্রণ জানায়। টার্গেট করা ব্যক্তি রাজি হলে তাকে চেতনা নাশক মেশানো ওই খাবার খাওয়ায় ও নিজেরা সাধারণ খাবার খায়। এসব পানীয় বা খাবার খেয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অজ্ঞান হলে, তারা তার মূল্যবান জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা ও মোবাইলফোন নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুটসহ বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে। আবার কখনও কখনও অজ্ঞান ব্যক্তির মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ ও অন্যান্য মাধ্যমে মুক্তিপণও আদায় করে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতারকদের তৈরি কোটি টাকার জাল নোট। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো সারাবছর তৎপর থাকলেও উৎসবে বড় টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে তারা। এ সময় মুদি দোকান থেকে শপিংমল সবখানে থাকে উপচেপড়া ভিড়। এ সুযোগে জাল নোটগুলো মাঠে ছাড়ে চক্র। অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকে লেনদেন ও এটিএম বুথেও জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে জাল নোটের এসব চক্র ধরতেও মাঠে সক্রিয় রয়েছে ডিবি। ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারি, অজ্ঞান, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তাই নগরবাসীর নিরাপত্তায় এসব মৌসুমি অপরাধীকে গ্রেফতারে কাজ শুরু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেছেন, তবে এবার বড় অঙ্কের অর্থবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানি এস্কর্ট সেবা দিচ্ছে ডিএমপি। তাই বড় অঙ্কের অর্থ বহন ও উত্তোলনে সতকর্তা অবলম্বনসহ এ সেবা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তারা পান, ডাব, শরবত, মসলা-মুড়ি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাদ্যের বিক্রেতা হিসেবে হকারি করে। ভদ্র চেহারার যাত্রীবেশে বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, সদরঘাট এমনকি বিমানবন্দরে ঘুরে যাত্রীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পর কারামুক্ত হয়ে তারা একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। এ দিকটাও নজরে রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে লকডাউন থাকায় প্রথমদিকে কিছুটা কম ছিল অপরাধ তৎপরতা। কিন্তু ঈদ এগিয়ে আসতে থাকায় ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হওয়াতে বেড়েছে মানুষের অবাধ চলাফেরা। কারখানা, শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। শহরে রাত-দিন বেড়েছে অস্বাভাবিক যান চলাচল। আর এ সুযোগেই তৎপরতা শুরু করেছে অপরাধীরা। ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, চাঁদাবাজচক্রসহ নানা কিসিমের অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে।
×