ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিএল শাকিল আহমেদ মিরাজ

সাকিব-মুস্তাফিজকে ঘিরে বাড়তি আকর্ষণ!

প্রকাশিত: ০১:০২, ১৪ এপ্রিল ২০২১

সাকিব-মুস্তাফিজকে ঘিরে বাড়তি আকর্ষণ!

আপনি মানুন আর নাই মানুন, ক্রিকেটে মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে ভারতীয়দের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন ওপেন সিক্রেট। টি২০ বিশ্বকাপ স্থগিত হয় কিন্তু দেশটির ঘরোয়া আয়োজন ঠিকই চলে। করোনায় স্থবির বিশ্ব অথচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। মূল কারণ অর্থ এবং জনপ্রিয়তা। ২০০৮ সালে আবির্ভূত আইপিএল এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট। ২০১১ সালে বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য সেখানে বাড়তি মাত্রা যোগ করে সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি, টাইগার অলরাউন্ডারকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। ২০১৭ পর্যন্ত টানা ছয় মৌসুমে দু’বার শিরোপাজয়ী দলের সদস্য তিন মৌসুম পর আবার ফিরেছেন চেনা আঙিনায়। কেকেআর অধিনায়ক ইয়ন মরগান অকপটে স্বীকার করেছেন, সাকিবের উপস্থিতি তার দলে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। বিভিন্ন সময়ে আইপিএলে খেলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, আব্দুর রাজ্জাকরা। সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমান ব্যতিক্রম। ২০১৬ আইপিএলে নিজের অভিষেক আসরেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের শিরোপাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বাঁ-হাতি পেসার ‘দ্য ফিজ’ এবার আছেন রাজস্থান রয়্যালসে। ‘দলের মধ্যে সাকিব একটা ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। এবার যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে ম্যাচ খেলতে হবে, যেখানে কন্ডিশনও বদলাবে প্রতিনিয়ত, সেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গন ও আইপিএলে বিভিন্ন সময় পারফর্ম করা একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার দলে থাকা অনেক মূল্যবান। তাকে ডাকা হলে, সে অবশ্যই পারফর্ম করবে।’ বলেন কলকাতা অধিনায়ক মরগান। টাইগার তারকাকে ফিরে পেয়ে কেকেআর এক ভিডিও বার্তায় জানায়, সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের প্রত্যাবর্তনে ভীষণ খুশি তারা। প্রখ্যাত ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়ার পরামর্শ, নারাইনকে বাইরে রেখে সাকিবকে খেলাও, একই মত ধারাভাষ্যকার হার্ষা ভোগলেরও। গত কয়েক মৌসুম কেকেআরকে নেতৃত্ব দেয়া দীনেশ কার্তিকের চোখে সাকিব এই যুগের সেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু নারাইন-মরগান ছাড়াও যে আছেন আন্দ্রে রাসেল, প্যাট কামিন্স, লোকি ফার্গুসন, টিম সেইফার্ট ও বেন কাটিংয়ের মতো বিদেশী, ম্যাচে যেখানে চার জনের বেশি খেলানোর সুযোগ নেই। একাদশে চার বিদেশীর মধ্যে অধিনায়ক মরগান এবং ক্যারিবিয়ান পেস বোলিং অলরাউন্ডার রাসেল অটোমেটিক চয়েজ। বাকি দুটি জায়গার জন্য লড়াইটা সাকিব, নারাইন, সেইফার্ট, ফার্গুসন, কামিন্স ও কাটিংয়ের। নিজের পুরনো দল হায়দরাবাদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই একাদশে সুযোগ পেয়েছেন সাকিব। ১০ রানের দারুণ জয়ের দিনে টাইগার তারকা অবশ্য খুব বেশি উজ্জ্বল ছিলেন না। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে আউট হয়েছেন ৫ বলে ৩ রান করে। পরে বোলিংয়ে নিজের প্রথম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেট। ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ৪-০-৩৪-১। ব্যাটিংয়ে সাকিবকে আরও ওপরে দেখতে চান জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে, ‘সে ব্যাটিং-অলরাউন্ডার। আপনি যদি তাকে বোলার হিসেবে খেলান, তাহলে এক পয়েন্ট থেকে আমরা নারাইনকে দেখতে পারি। আপনি যদি তাকে ব্যাটসম্যান হিসেবে ভাবেন এবং সে যদি তিন ওভারও বল করে দেয়, কিংবা ছন্দে থাকলে চার ওভারও করতে পারে। তখন আমি মনে করি সাকিবের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘সাকিব বোলিং করল আর তখন আপনার অনুভূতি হলো ঠিক আছে আর কিছু হওয়ার নেই। সে চার ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছে। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন সে কি করল!! কিন্তু তারপরও দেখেন ওর বোলিং ফিগার ভাল, সাড়ে আট ইকোনমিতে (৮.৫০) বোলিং করেছে।’ ২০১১ থেকে নিজের প্রথম ছয় মৌসুমেই কলকাতার হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন সাকিব। ২০১২ ও ২০১৪ সালে কেকেআরের শিরোপাজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। কিন্তু ২০১৭ সালে তাকে ছেড়ে দেয় কলকাতা। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। যদিও ২০১৯ মৌসুমে বেশিরভাগ ম্যাচেই হায়দরাবাদের একাদশে জায়গা পাননি। কিন্তু মাঠের বাইরে বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন বিশ্বকাপের জন্য, পরে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তো ব্যাটে-বলে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেলেন। আইপিএলে ২০১১ থেকে এ পর্যন্ত ৬৪ ম্যাচে সাকিব করেছেন ৭৪৯ রান, উইকেট ৬০টি। শুধু ২০১৩ সালে খেলা হয়নি বাংলাদেশ দলের সিরিজ থাকায়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না আমিরাতে ২০২০ আইপিএলে। অন্যদিকে বিশ্ব ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা মুস্তাফিজ আইপিএল অভিষেকেই পেয়েছিলেন সাফল্যের স্বাদ। ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের শিরোপাজয়ের মৌসুমে প্রথম বিদেশী হিসেবে হাতে উঠেছিল সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার। অপারেশন-ছন্দহীনতায় সেই মুস্তাফিজ এখন অনেকটাই ম্লান। ভিত্তিমূল্য ১ কোটি রুপীতে এবার তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। রাজস্থানের বিদেশী ৮ ক্রিকেটারের ৫ জনই পেসার। আর স্থানীয়দের নিয়ে স্কোয়াডের ২৪ জনের মধ্যেও পেসার ১১ জন! এই আসরে রাজস্থানের বিদেশী খেলোয়াড়রা হলেনÑ জস বাটলার, জোফরা আর্চার, বেন স্টোকস, ক্রিস মরিস, মুস্তাফিজ, ডেভিড মিলার, লিয়াম লিভিংস্টোন ও এ্যান্ড্রু টাই। একাদশে সর্বোচ্চ চারজন বিদেশী খেলতে পারবেন। যেখানে বাটলার, স্টোকস ও মরিস বলতে গেলে অটোমেটিক চয়েজ। মরিসকে এবার আইপিএলের বিদেশী ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড সর্বোচ্চ অর্থ দিয়ে কিনেছে রাজস্থান ম্যানেজমেন্ট। আর্চার গত বছর ১২ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়েছিলেন। অটোমেটিক চয়েজ তিনিও। কিন্তু ইনজুরির কারণে শুরুর প্রায় পাঁচটি ম্যাচ খেলতে পারবেন না ইংলিশ তারকা। সেই কারণেই একাদশে সম্ভাবনা বেড়ে যায় মুস্তাফিজের। যদিও রাজস্থানের ক্যাপে অভিষেকটা সুখকর হয়নি মুস্তাফিজের। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে উইকেটের দেখা পাননি বাংলাদেশী পেসার! তার বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। তিনটি বিশাল ওয়াইডের সঙ্গে একটি ‘নো বল’ও দেন। উল্লেখ্য, ২০১৬-২০১৭ হায়দরাবাদে কাটিয়ে ২০১৮ সালে মুম্বাইয়ে যোগ দিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। এ পর্যন্ত আইপিএলে ২৪টি ম্যাচের মধ্যে ১৭টিই খেলেছেন হায়দরাবাদের হয়ে। ২০১৬ সালে ১৬টি ম্যাচ খেললেও ২০১৭-তে খেলেছিলেন মাত্র একটি। প্রথম বছর তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন ২৪.৭৬ গড়ে। সেরা বোলিং ছিল ৩/১৬। ২০১৮ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে ৭ ম্যাচে উইকেট তাঁর ৭টি। এক ম্যাচে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ইনজুরি ও বোর্ডের (বিসিসিআই) নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই সারে খেলতে পারেনি মুস্তাফিজ।
×