ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে সীমিত পরিসরে বৈসাবি উৎসব, সাংগ্রাই বাতিল

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১৩ এপ্রিল ২০২১

পাহাড়ে সীমিত পরিসরে বৈসাবি উৎসব, সাংগ্রাই বাতিল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকায় গেল বারের মতো এবারও পাহাড়ীদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ভাটা পড়েছে। নতুন বছর বরণ অনুষ্ঠানকে পাহাড়ী অঞ্চলে বিজু উৎসব বা বৈসাবি বলা হয়ে থাকে। তবে করোনাপূর্ব অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারের আয়োজন তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে না। তিনদিনের এই উৎসব পার্বত্য অঞ্চলের দুই জেলায় ইতোমধ্যে অনাড়ম্বর পরিবেশে শুরু হয়েছে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সীমিত পরিসরে উৎসব পালন শুরু হলেও বান্দরবানে এবার সাংগ্রাইসহ নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের। পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ী সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠন বৈসাবি উৎসব সোমবার থেকে পাহাড়ে অনাড়ম্বরভাবে শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ন্যায় এবার রাঙ্গামাটিতে ঘটা করে এই উৎসব পালিত হচ্ছে না। কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এবারও বৈসাবি উদ্যাপন কমিটি ও সরকারীভাবে যে অনুষ্ঠানমালা রয়েছে তা বর্জন করার কথা বলা হয়েছে। পাহাড়ীরা মূলত তাদের এই বৈসাবি উৎসব তিনদিন ধরে পালন করে থাকে। ত্রিপুরাদের বৈষুক, মারমাদের সংগ্রাই ও চাকমাদের বিজুকে একত্রে বলা হয় বৈসাবি। চৈত্র মাসের আগের দিনকে তারা বলে ফুল বিজু শেষ দিনকে বলা হয় মূল বিজু ও নববর্ষের প্রথম দিনকে গজ্জাপজ্জা বলা হয়। মূলত বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়কে কেন্দ্র করে পাহাড়ীরা এই উৎসবে মেতে ওঠে। এই উৎসব উপলক্ষে পাহাড়ে র‌্যালি, নাচ, গান, নাটক ও খেলাধুলা ঘটা করে পালন করে থাকে। করোনার কারণে এবার উৎসব ঘরোয়াভাবে পালিত হচ্ছে। অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে ঘরোয়াভাবে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে আশীর্বাদ কামনা করেছেন বলে পাহাড়ীরা জানান। পাহাড়ী পল্লীগুলোতেও পাহাড়ীরা পাহাড়ের নদীতে ফুল ভাসিয়ে অনাড়ম্বরভাবে ফুল বিজু উৎসব শুরু করেছেন। বান্দরবান ॥ নববর্ষ বরণের প্রধান উৎসব সাংগ্রাইসহ সব অনুষ্ঠান আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। সোমবার সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হল রুমে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বাতিল করার ঘোষণা প্রদান করেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা। এ সময় পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, সারা বিশ্বে এখন করোনাভাইরাস মহামারী আকার নিয়েছে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও এটা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে বান্দরবানে বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান কর্মসূচী বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে জেলার ৪শ’ ১৮টি বৌদ্ধ বিহারে পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নববর্ষের শ্রদ্ধা দান হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হবে। সংবাদ সম্মেলনের এসময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, বালাঘাটা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত তেজপ্রিয় থের, রাজগুরু (খ্যং ওয়া ক্যং) বৌদ্ধ বিহারের সাধারণ সম্পাদক কেএসমং মার্মা, অর্থ সম্পাদক রাজপুত্র শৈনুপ্রু রুমু, উৎসব উদ্যাপন কমিটির সভাপতি থেওয়াং (হ্লাএমং), সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই মার্মাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। পুরনো বছরকে পেছনে ফেলে আসে নতুন বছর, আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে তিন পার্বত্য জেলার মারমা আদিবাসীরা সাংগ্রাই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। প্রতিবছর আদিবাসীদের ঘরে সাংগ্রাই আসে নতুন সাজে। দিয়ে যায় কিছু আনন্দ, কিছু বেদনার ফুলঝুরি। ওই আনন্দ বেদনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রতিটি আদিবাসীর দেহমনে জেগে ওঠে নতুন পরিবর্তনের শিহরণ, স্বপ্ন দেখে দিন বদলের, স্বপ্ন দেখে যেন নতুন এক সকালের। সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য জেলায় শুরু হয় আনন্দের বন্যা। দেশের অন্যতম পর্যটন শহর বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির বিশেষ করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায় পুরাতন বর্ষকে বিদায় ও নবর্বষকে স্বাগত জানিয়ে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব উদ্যাপন করে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে নববর্ষবরণের এই আনন্দ উৎসব হচ্ছে না এবার। প্রসঙ্গত, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী মারমা, রাঙ্গামাটির চাকমা ও খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। চাকমা সম্প্রদায়রা এই উৎসবকে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে ‘বৈসাবি। খাগড়াছড়ি ॥ করোনার কারণে সীমিত পরিসরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা। করোনার শঙ্কার মধ্যেও পাহাড়ী জনগোষ্ঠী তাদের বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজন পালন করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সোমবার ভোরে স্থানীয় চেঙ্গী নদীতে চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সদস্যদের ফুল ভাসানো ও ফুল পূজার মধ্য দিয়ে উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। খুব ভোরে পূর্ব আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ার আগেই চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের সদস্যরা নদীতে ফুল ভাসিয়ে বিদায় বছরের দুঃখ-কষ্ট-গ্লানিকে বিদায় জানায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চেঙ্গী নদীর তীরে মানুষের ঢল নামে। ছোট ছোট শিশুরা এ সময় নদীতে উল্লাস করে একে অপরকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। তবে এ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
×