ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আশানুরূপ ক্রেতা না পেয়ে ব্যবসায়ীরা হতাশ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ১২ এপ্রিল ২০২১

আশানুরূপ ক্রেতা না পেয়ে ব্যবসায়ীরা হতাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লকডাউনের সপ্তম দিনে রবিবার শপিংমল খুললেও আশানুরূপ ক্রেতা না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শুরুর দিন শুক্রবারের চেয়ে রবিবারে বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতার ভিড় কিছুটা বেশি ছিল। ক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেখা গেছে। কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উর্ধমুখী। একইসঙ্গে আগামী বুধবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের আগে দুদিন ক্রেতার সমাগমও আরও কিছুটা বাড়তে পারে। বিপণিবিতানগুলোগুতে জনমানুষের ভিড় সংক্রমণ আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে সংক্রমণ বাড়ার মধ্যেই গণপরিবহন ও বিপণিবিতান খুলে দেয়ার কারণে সরকারের আরোপ করা বিধিনিষেধ মেনে চলার দিকে অনেকেই উদাসীনতাও দেখাচ্ছে। সড়কেও বেড়েছে মানুষের সংখ্যা। তবে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান চালু করা হয়েছে। এছাড়া বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে অবশ্য ক্রেতাদের সতর্ক করতে দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে বিক্রেতাদের সঙ্গে ক্রেতাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডাঃ দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেছেন, যেসব দোকান স্বাস্থ্যবিধি মানবে না, সেসব দোকান বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিউমার্কেটের সব দোকান মালিকদের উদ্দেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। ক্রেতা সাধারণকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে কেনাকাটা করার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু ক্রেতাদের মধ্যেই স্বাস্থ্য সচেতনতা কম দেখা গেছে। রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, গুলিস্তানের বিপণিবিতান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। গায়ে-গায়ে ঘেঁষে আছে মানুষ। ফুটপাথেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। এ কারণে অনেক মার্কেটসংলগ্ন রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। মালিবাগ মোড়ে ফরচুন শপিংমলের কাপড়ের দোকানের সেলসম্যান আবুল মিয়া বলেন, আমাদের ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। গত বছরের দুইটা ঈদে করোনার কারণে কোন ব্যবসা হয়নি। এবারও যদি এমনটা হয় আমরা যাব কোথায়? দোকান বন্ধ থাকলে মালিক বেতন দেয় না। বলে কিনা ব্যবসা নাই- পয়সা দেবো কোত্থেকে? যাক, খুশির খবর দোকান খুলেছে। আশা করছি, এবার রোজার ঈদের আমরা আলোর মুখ দেখব। মৌচাকের কাছে এক দোকান থেকে নিজের বাচ্চার জন্য জুতা কিনতে এসেছেন আশরাফী পাপিয়া। তিনি বলেন, কয়েকদিন মার্কেট বন্ধ থাকায় অসুবিধা হয়েছে। দোকান-পাট খুলেছে ভাল লাগছে। বাচ্চার পায়জামা ছিঁড়ে গেছে। সেজন্য মার্কেটে এসেছি। পলওয়েল মার্কেটের তৈরি পোশাকের দোকানের স্বত্বাধিকারী হাবিবুল্লাহ বলেন, প্রথম দিন শুক্রবার ক্রেতা কম থাকলেও আস্তে আস্তে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। লকডাউনের মধ্যেও দোকান খুলতে পেরে তিনি খুশি। তিনি আরও বলেন, বাসায় তো এভাবে ভালও লাগে না। দোকান খোলা থাকলে ক্রেতা আসবেই। ক্রেতাদের বেশিরভাগই মাস্ক পরে আসছেন বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। তবে করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সরকার সারাদেশে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে ৪ এপ্রিল। ১৮টি বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন ও শপিংমল বন্ধ থাকার কথা বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, গত চার দিন শপিংমল, দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ থাকলেও অলিগলির সব দোকানপাটই খোলা ছিল। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। বুধবার থেকে গণপরিবহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ থেকে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে মার্কেট খুলে দেয়ার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ৯-১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
×