ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান ডি-৮ নেতৃবৃন্দের

প্রকাশিত: ২১:১০, ৮ এপ্রিল ২০২১

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান ডি-৮ নেতৃবৃন্দের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বৈশিক মহামারি করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন ডি-৮ নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই আট দেশের জোটের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একত্রে কাজ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ডি-৮ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে ঐকবদ্ধ হয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামরির কারণে বিশ্বের সকল দেশের উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি পোষাতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। কিভাবে করোনা পরবর্তী ভবিষ্যত সম্ভবানাকে কাজে লাগানো যায়, সেই খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে। করোনা পরবর্তী নতুন যুগে আমাদের নতুন সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় ১০ম ডি-৮ সম্মেলন শুরু হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বক্তব্য রাখেন জোটের সদস্য দেশ মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ সিসি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী জিওফ্রে ওনিয়ামা। অসুস্থতার কারণে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারি সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সম্মেলনে চার জন বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন- নবনিযুক্ত ডি-৮ যুব ফোরামের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ডি-৮ বিজনেস ফোরামের সভাপতি এবং এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ওআইসির মহাসচিব ইব্রাহিম তাহা এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন ডি-৮ জোটের সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, আমাদের এই আট দেশের জোটের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আমরা জনসংখ্যার দিক থেকে জি-৭ জোটের চেয়েও এগিয়ে আছি। আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠকে কর্মী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমেও তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য একত্রে কাজ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ডি-৮ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে ঐকবদ্ধ হয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে বলেন, আমাদের জোটের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে হলে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরণের বিধি নিষেধ থাকা উচিত নয়। আমাদের প্রয়োজনীয় শিল্প উৎপাদন ও পণ্যের চাহিদা আমাদেরকেই পূরণ করতে হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ডি-৮ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা জরুরি। এক্ষেত্রে কোন বৈষম্য থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামরির কারণে বিশ্বের সকল দেশের উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি পোষাতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। কিভাবে করোনা পরবর্তী ভবিষ্যত সম্ভবানাকে কাজে লাগানো যায়, সেই খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে। করোনা পরবর্তী নতুন যুগে আমাদের নতুন সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন প্রযুক্তি হস্তান্তর। আগামী দিনের উন্নয়নের প্রধান খাত হবে তথ্য প্রযুক্তি, বাণিজ্য, কৃষি, রসায়ন ও ট্যুরিজম। এ সকল ক্ষেত্রে কিভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে আমাদের এখনই তৎপর হতে হবে। ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং সুবিধাও বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ডি-৮ দেশগুলোর রয়েছে বিশাল বাজার। এই বাজারে বিপুল পরিমান চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা পূরণে একদেশ অন্যকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে সে উপায় বের করতে হবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেন, কোভিড-১৯ মহামরি কাটিয়ে উঠতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভ্যাকসিন সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য একটি এ্যাকশন প্ল্যান দরকার। কারণ করোনাই হচ্ছে বর্তমান সময়ে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এই মহামারিতে বিশ্বের সকল দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি হচ্ছে এই সময়ের উন্নয়নের বড় হাতিয়ার। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের যুব সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। অনলাইন ব্যবস্থাকে সদস্য দেশগুলোর গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। যাতে সকল মানুষ প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন উপায়ে আমাদের কৃষি পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। করোনাকালে কৃষিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই সঙ্গে নিরাপদ খাদ্যের দিকেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে। এ সময় তিনি করোনার সময়ে মানুষকে বাচাতে সামাজিক প্রতিরক্ষা কর্মসূচী গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এজন্য একটি ওয়াকিং গ্রুপ গঠনের আহ্বান জানান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, করোনার কারণে সদস্য দেশগুলোতে একটি বড় অংশ বেকার হয়ে পড়েছে। এদের কর্মসংস্থানের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য শিল্প উদ্যোক্তা ও প্রযু্িক্ত উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আগামী দিনে উন্নয়নন নিয়ন্ত্রণ করবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এই শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জন সম্পদ গড়ে তুলতে ডি-৮ জোটকে একত্রে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি নতুন সুযোগ সৃস্টির আহ্বান জানা। তিনি করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল বিধি-নিষেধ তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে সহজে কোভিড টিকা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় তিনি ডি-৮ দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য ৫ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ সিসি বলেন, কোভিড-১৯ সমগ্র বিশ্বে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্যের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই চাপ মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এক দেশের চাহিদা অন্য দেশকে পূরণ করতে হবে। করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডি-৮ রোডম্যাপ সদস্য দেশগুলোর অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করবে। তিনি বলেন, ডি-৮ কে শক্তিশালী জোটে পরিণত করতে হলে সম্পর্ক বহুপাক্ষিক করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বেসরকারি খাতে যাতে এক্ষেত্রে পাইওনিয়ার ভূমিকা পালন করে সেদিকেও নজর দিতে হবে। বৈঠকে উদ্বোধনী ভাষণে চারটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে আমাদের যুবকদের শক্তি বাড়ানো, আইসিটির সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অবকাঠামোগত কাঠামো তৈরি করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধার্থে সংযোগ স্থাপনের উন্নতি। বক্তব্য শেষে ঢাকা ঘোষণা ও ডি-৮ রোডম্যাপ ২০২০-২০৩০ শীর্ষ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক মহামারির করণে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব আজ জরুরী সময় পার করছে। এই অবস্থা উত্তরণে সদস্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বক্তব্য ও পরামর্শ সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার নির্দেশনা দিয়েছে। আপনাদের এই বক্তব্যে আট দেশর এই জোটটি সামনের দিতে এগিয়ে যেতে আরও উৎসাহিত হবে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবই হবে আগামী দিনের উন্নয়নের মুল ভিত্তি। এজন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সদস্যদেশগুলোকে উৎপাদনমুখী হতে হবে এবং একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী সংস্থার বিদায়ী মহাসচিব পরবর্তী কর্মস্থলে সফলতা কামনা করেন এবং নতুন মহাসচিবকে স্বাগত জানান। ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি সফলভাবে আয়োজন করেছিল।
×