ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

বদলায়নি কেবল নিউজিল্যান্ডে ব্যর্থতার ছবি...

প্রকাশিত: ০০:১২, ৭ এপ্রিল ২০২১

বদলায়নি কেবল নিউজিল্যান্ডে ব্যর্থতার ছবি...

২০০১ থেকে ২০২১, হ্যামিল্টন থেকে অকল্যান্ড, খালেদ মাসুদ থেকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ; ৯ টেস্ট, ১৬ ওয়ানডে, ৭ টি২০, ২০ বছরে ৩২ ম্যাচ- বদলেছে সময় বদলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, বদলায়নি কেবল ছবির মতো দেশ নিউজিল্যান্ডে ব্যর্থতার ছবিটা। অথচ এই দুই দশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, দুটি এশিয়া কাপের ফাইনাল, ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান, উইন্ডিজের মতো পরাশক্তিকে পেছনে ফেলা, শ্রীলঙ্কায় শততম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়- মনে রাখার মতো কত অর্জনই না রয়েছে টাইগারদের। করোনাকালে এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট ছিল না বলে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, ঘরের মাঠে টেস্ট হারলেও ওয়ানডেতে উইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের পালে হাওয়া দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল খান। অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা, একটা জয়...। নাহ্, নিজ আঙিনায় অপ্রতিরোধ্য কিউইরা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল শুধু আবেগ দিয়ে ক্রিকেট হয় না। ওয়ানডেতে ব্ল্যাক-ক্যাপস শিবিরে তবু তারকাদের অনেকেই ছিলেন, কিন্তু টি২০তে দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও যে বাংলাদেশকে ¯্রফে উড়িয়ে দিল নিউজিল্যান্ড। ডুনেডিনে প্রথম ওয়ানডেতে ৪১.৫ ওভারে মাত্র ১৩১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ছয় নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। পেস-তা-বে তামিদের বিধ্বস্ত করে ম্যাচসেরা হন ট্রেন্ট বোল্ট (৪/২৭)। পরে ২১.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া নিউজিল্যান্ড পায় ৮ উইকেটের বড় জয়। ক্রাইস্টচার্চে অধিনায়ক তামিম (৭৮) ও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহর (৭৩*) জোড়া হাফ সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৬ উইকেটে ২৭১ রান করেছিল সফরকারীরা। কিন্তু টম লাথামের (১১০*) সেঞ্চুরি ও ডেভন কনওয়ের ৭২ রানে ভর করে ১০ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে কিউইরা। সুযোগ তৈরি করেও এদিন শেষ পর্যন্ত বোলিংয়ের ধার অব্যাহত রাখতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে কোথায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন, সেখানে শেষ ম্যাচে তামিমদের পারফর্মেন্স ছিল আরও জঘন্য। কনওয়ে (১২৬) ও ড্যারিল মিচেলের (১০০*) জোড়া সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট বাংলাদেশের হার ১৬৪ রানের ব্যবধানে। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও অভিজ্ঞ রস টেইলরকে ছাড়াই টাইগারদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে টম লাথামের দল। সিরিজে ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে ছিল আরও বাজে অবস্থা। যারপরনাই হতাশ ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, কেউ ইচ্ছে করে খারাপ খেলে না। ক্যাচও ছাড়ে না। এটা হয়ে যায়। আমার সঙ্গেও হয়েছে। বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের সঙ্গেও হয়েছে। আমি তাই দল হিসেবেই বলি যে, আমরা ক্যাচ ছেড়েছি। ক্যাচগুলো নিতে পারলে ওই ম্যাচ আমাদের জেতার কথা। জিততে পারলে আমাদের জন্য দারুণ অর্জন হতো। দলের প্রস্তুতি নিয়ে আমি খুশি ছিলাম। অনুশীলন ঠিক করলেও যতটা ভাল খেলার দরকার ছিল, ততটা পারিনি।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, সিনিয়রদের পাশাপাশি তরুণদেরও দায়িত্ব নিতে হবে, ‘অভিজ্ঞতা বলে আমাদের আরও ভাল করা উচিত ছিল। পাশাপাশি আরেকটি কথা বলতে চাই, সিনিয়র চার ক্রিকেটার (তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ) বার বার উঠে আসে আলোচনায়। সত্যি বলতে আমরা চারজন এই-সেই, এভাবে ভাবতে বা বলতে আমার ভাললাগে না। আমি তরুণদের অনেক বড় সমর্থক। শুধু সিনিয়ররা কেন, তরুণদেরও এখন দায়িত্ব নিতে হবে এবং ভাল পারফর্ম করতে হবে।’ সার্বিকভাবে টেস্ট ও টি২০’র তুলনায় ওয়ানডে ক্রিকেটে ভাল খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও কিউইদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি টাইগাররা। সেখানেও দু’দলে পার্থক্য ছিল স্পষ্ট। যে পেস বোলিং নিয়ে বাড়তি আশায় ছিলেন অধিনায়ক তামিম সেখানেও হতাশ করেছেন মুস্তাফিজ, রুবেলরা। দু’জনেরই তিন ওয়ানডে মিলিয়ে শিকার মাত্র ৩টি করে। যেখানে কিউই পেসার জিমি নিশাম একাই নিয়েছেন ৭ উইকেট। ম্যাট হেনরি ৬ ও ট্রেন্ট বোল্ট ৫। আইপিএলের জন্য তারকা ক্রিকেটারদের ছেড়ে দিয়ে টি২০ দল গড়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু সেখানেও ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ মাহমুদুল্লাহর দলের হার ৬৬, ২৮ ও ৬৫ রানের বড় ব্যবধানে। আবারও সেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা, আবারও সেই ব্যর্থতা। হতাশা ঝরেছে টি২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কণ্ঠেও, ‘আপনি যখন ৭৬ রানে অল আউট হবেন, তখন সেখান থেকে ইতিবাচক কিছু নেওয়ার থাকে না। আমার মনে হয় আমরা সিরিজজুড়ে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলিনি। আমরা এখানে আগেভাগে এসেছি, নিজেদের প্রস্তুত করেছি, কুইন্সটাউনে ভাল একটি ক্যাম্প করেছি, ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছিল, জিমে কাজ করছিল, কিন্তু আমরা মাঠে সেটি দেখাতে পারিনি। অধিনায়ক হিসেবে এটা হতাশাজনক।’ আর দ্রুতই এ সিরিজের কথা ভুলে যেতে চান তিনি, ‘তারপরও আমাদের এই সিরিজ থেকে কিছু বের করতে হবে যা নিয়ে আমরা পরের সিরিজের জন্য কাজ করতে পারব। এবং অবশ্যই আমরা এই সিরিজটি ভুলতে চাইব। কারণ আমরা এখানে এসেছিলাম কিছু অর্জন করতে কারণ আমরা এখানে আগে কখনও কিছু করতে পারিনি।’ ওয়ানডে খেলে টি২০ সিরিজে ব্রিশাম নেন তামিম, ঊরুর চোটের জন্য ও শেষ ম্যাচে খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। তার জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেন লিটন দাস। সামনে হয়ত এমন দিন আরও দেখতে হতে পারে। নিজেদের অভিজ্ঞতা তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন মাহমুদুল্লাহ, ‘আমাদের (সিনিয়র) অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে হবে তাদের (জুনিয়র) মধ্যে কারণ আমরা এখানে বেশ কয়েকবার খেলেছি। কয়েকজন দুই-এক বার খেলেছে, কয়েকজন একদমই নতুন। এবং এখানের কন্ডিশন খুবই কঠিন। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে হবে এবং শিখে সেটাকে আগামী বার কাজে লাগাতে পারে।’ দিনশেষে পারফর্মেন্সই মূল কথা বলে জানান টি২০ অধিনায়ক,‘আমি অনেক কিছুই বলতে পারি কিন্তু দিনশেষে আপনাকে সেটি পারফর্মেন্সেই দেখাতে হবে। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খুবই হতাশাজনক সিরিজ আমাদের জন্য কিন্তু আমাদের দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে হবে কারণ আমাদের যে কোন ফরম্যাটে কিছু জয় খুবই প্রয়োজন। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। আমার মনে হয় আমরা আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছি হারের কারণে। যা পুরো দলকে প্রভাবিত করে। আমাদের উপায় খুঁজে বের করতে হবে জয় পেতে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আমাদের সামনে কিছু সুযোগ ছিল, আমার মনে হয় আমরা খুব কাছে ছিলাম, দ্বিতীয় টি২০তেও প্রতিযোগিতায় ছিলাম। কিন্তু কিছু মুহূর্তের ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে যেন পরের বার আমরা সেই সুযোগগুলো নিতে পারি।’
×