ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে করোনা শনাক্তের বছর পূর্ণ হলো আজ

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৮ মার্চ ২০২১

দেশে করোনা শনাক্তের বছর পূর্ণ হলো আজ

নিখিল মানখিন ॥ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ সোমবার। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আক্রান্ত হওয়ার প্রথমদিকে করোনা রোগী ও করোনা রোগীর মৃতদেহ নিয়ে সৃষ্ট আতঙ্ক কাটিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে বাংলাদেশের মানুষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গত দুই মাস ধরে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এবং শনাক্তের হার হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। শনাক্তের হার হ্রাস পেতে পেতে ২২ শতাংশ থেকে ৩ এর ঘরে নেমে এসেছে। মৃতের সংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম থেকে চলে গেছে ৩৭তম স্থানে। আর মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম থেকে চলে গেছে ৩১তম স্থানে। দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচী চালু এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের মার্চে ৫ জন, এপ্রিলে ১৬৩ জন, মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে ১১৯৭ জন, জুলাইয়ে ১২৬৪ জন, আগস্টে ১১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নবেম্বরে ৭২১ জন এবং ডিসেম্বরে ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১ জন এবং মার্চে (৭ তারিখ পর্যন্ত ) ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০২০ সালের মার্চে ৫১ জন, এপ্রিলে ৭৬১৬ জন, মে মাসে ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন, জুনে ৯৮ হাজার ৩৩০ জন, জুলাইয়ে ৯২ হাজার ১৭৮ জন, আগস্টে ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন, সেপ্টেম্বরে ৫০ হাজার ৪৮৩ জন, অক্টোবরে ৪৪ হাজার ২০৫ জন, নবেম্বরে ৫৭ হাজার ২৪৮ জন এবং ডিসেম্বরে ৪৮ হাজার ৫৭৮ জন। আর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২১ হাজার ৫২৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজার ৭৭ জন এবং মার্চে (৭ তারিখ পর্যন্ত) ৪ হাজার ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের হার হ্রাস ॥ গত ২০২০ সালে করোনায় দৈনিক রোগী শনাক্তের হার প্রত্যেক মাসের প্রথম ও শেষ সপ্তাহে যথাক্রমে এপ্রিলে ৯ ও ১৩ শতাংশ, মে মাসে ১০ ও ২২ শতাংশ, জুনে ২১ ও ২০ শতাংশ, জুলাইয়ে ২১ ও ২১ শতাংশ, আগস্টে ২৫ ও ১৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১৬ ও ১১ শতাংশ, অক্টোবরে ১৩ ও ১২ শতাংশ, নবেম্বরে ১৩ ও ১৭ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ১৫ ও ৮ শতাংশ। এভাবে শনাক্তের হার ২০২১ সালের জানুয়ারির প্রথম ও শেষ সপ্তাহে যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৩ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৩ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে সামান্য বেড়ে ৪ শতাংশে উঠে যায়। সুস্থতার হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ শতাংশে ॥ দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর কয়েক মাস ধরে করোনা আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হওয়ার হার ছিল অত্যন্ত নাজুক। সুস্থতার হার ছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে ২ শতাংশ, মে মাসে ২১ শতাংশ, জুনে ৪১ শতাংশ, জুলাইয়ে ৫৭ শতাংশ, আগস্টে ৬৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৭৬ শতাংশ, অক্টোবরে ৮০ শতাংশ, নবেম্বরে ৮২ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ৮৯ শতাংশ। আর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সুস্থতার হার ছিল ৮৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৯১ শতাংশ এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশে। খালি রয়েছে অধিকাংশ করোনা রোগীর ৮৮ শতাংশ শয্যা ॥ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সারাদেশে করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১০ হাজার ২৮৩টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪৩৭ জন এবং খালি রয়েছে ৮ হাজার ৮৪৬টি শয্যা। দেশে মোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৫৬৬টি, ভর্তিকৃত রোগী ১৭২ জন এবং খালি রয়েছে ৩৯৪টি আইসিইউ শয্যা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বর্তমান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ মুশতাক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গত দুই মাস ধরে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এবং শনাক্তের হার হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করতে পারি শীঘ্রই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিপদসীমার নিচে চলে আসবে। তবে আবারও বেড়ে যেতে পারে। পৃথিবীর অন্য দেশেও এটা হয়েছে। যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যায়, তখন মানুষ অসতর্ক হয়ে যায়, ফলে সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যায়। আমরা এমনিতেই অসতর্ক, তাই দেশে সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমদিকে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল, জাপানে সংক্রমণ ছিলই না, কিন্তু এখন জাপানে সংক্রমণ বেড়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাস পুরোপুরি বিদায় না হবে, ততদিন সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বিধিনিষেধসমূহ শিথিল করেছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোথাও কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর নেই। স্বাস্থ্যবিধি পালনসহ কিছু নির্দেশনা পালনের বিষয়টি বলবৎ রয়েছে। কিন্তু এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে নেই কোন কর্তৃপক্ষ। ফলে করোনা পূর্বকালীন স্বাভাবিক সময়ের মতো চলাফেরা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করছেন সাধারণ মানুষ। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় মনে হবে করোনার দিন শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখনও করোনার প্রবল থাবা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল সরকার। পরবর্তীতে দেশের মানুষের জানমালের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একে একে প্রায় সব বিধিনিষেধ উঠিয়ে দিয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা ছাড়া দেশের মানুষের জীবনযাত্রা যেন স্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। বিধিনিষেধ উঠিয়ে দিয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, মাস্ক পরিধান, অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে না যাওয়াসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। শিথিল করা মানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা নয় - এই নির্দেশনাটি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাস্তবে ওই সব নির্দেশনা পালন না করার কারণে দেশে যেন করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা।
×