ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি ধরে রাখতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করতে চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী

কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৫২, ১ মার্চ ২০২১

কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক যুগের প্রয়োজন বিবেচনায় কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখেই শিক্ষাকে সাজানো হচ্ছে। আধুনিক যুগে কি কি প্রয়োজন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে সরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা আমাদের দেশে এ জন্যও প্রয়োজন যে আমি এক শ’টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানে অনেক কারিগরি লোক লাগবে। দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। কাজেই সেই দক্ষ জনশক্তি আমরা সৃষ্টি করতে চাই। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তি সহায়তা ও আর্থিক অনুদান বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, আমরা সিভিল এভিয়েশন এ্যান্ড এ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। অর্থাৎ সাবজেক্টগুলো আমরা দেখে দেখে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় যে এলাকায় যে ধরনের শিক্ষার খুব বেশি গুরুত্ব, আমরা সেভাবেই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করে দিচ্ছি। দিচ্ছি এ জন্য যে সকলেই যেন শিক্ষাটা যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরীন আফরোজসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর উপজেলা, বান্দরবান সদর উপজেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপযোগী শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আরও বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা এখন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ শিক্ষা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। এটা শুধু দেশে না বিদেশেও। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা ব্যাপক অবদানও রাখতে পারবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনুষ্ঠানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া নানা পদক্ষেপ এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি, আমার ছোট বোন (শেখ রেহানা) আমরা পৈত্রিক যে সম্পত্তি বা যা টাকা পয়সা পেয়েছিলাম সেটা দিয়ে একটা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এই ফান্ডে আমাদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের বৃিত্ত দিয়ে থাকি। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত। সেখানে ১৪শ থেকে ১৫শ শিক্ষার্থীকে আমরা বৃত্তি দেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে সারাদেশে শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগ নেই। নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন শুরু করি। সেটাতে সাফল্যও পেয়েছি। শিক্ষাকে বহুমুখী করার পদক্ষেপ নেই। প্রযুক্তির শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও আওয়ামী লীগ সরকার করে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট চায়নি দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক। তাই ৯৬-এ আমাদের নেয়া উদ্যোগগুলো তারা বন্ধ করে দেয়। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ডে অর্থবরাদ্দ দেবেন বা নিজ নিজ এলাকা বা নিজ নিজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যে যেখানে পড়াশোনা করেছেন সেগুলোর উন্নয়নে সবাই মনোযোগী হবেন। যেখান থেকে লেখাপড়া শিখে আজকে বিত্তশালী হয়েছেন সেই জায়গাগুলোর প্রতি যদি সবাই যত্নবান হয় তাহলে আমার মনে হয় কোন অসুবিধা হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই শিক্ষা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতার যে চিন্তা, আদর্শ, সেটা নিয়েই আমরা চলি। শিক্ষার খরচটাকে আমরা খরচ মনে করি না। এটা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যে স্বীকৃতি বাংলাদেশ পেয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। ধরে রাখার জন্যই দরকার শিক্ষার প্রসার এবং উপযুক্ত দক্ষ কারিগর এবং নাগরিক। সেই দক্ষ ও উপযুক্ত নাগরিক আমরা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের টিকা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত সবাইকে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এটা কষ্টকর ব্যাপার। তবে আমরা আশা করছি যে আগামী ৩০ মার্চ সবশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে সক্ষম হব। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যত শিক্ষক-কর্মচারী যারা আছে ৩০ মার্চের মধ্যে সকলকেই টিকা নিতে হবে। সেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি এবং এই টিকা সবাইকে দেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ডব্লিউএইচও’র নির্দেশ মোতাবেক যে বয়স পর্যন্ত টিকা দেয়া যাবে না তার উপরের বয়সের যারা সেইসব শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেয়া হবে। কাজেই সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা থাকুক সেটাই আমরা চাই। এ অনুষ্ঠানে ট্রাস্টের আওতায় স্নাতক পর্যায়ের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এক কোটি ৬৩ লাখ ৮৮২ জন ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ ৮৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ টাকা, ভর্তি সহায়তা বাবদ ১২৩ জন শিক্ষার্থীকে ছয় লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং দুর্ঘটনায় আহতদের আর্থিক অনুদান বাবদ চারজন শিক্ষার্থীকে দুই লাখ টাকাসহ মোট ৮৭ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
×