ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ আলোচনা

বিএনপি মানেই হচ্ছে উন্নয়নে জিরো, দুর্নীতিতে হিরো

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২২ জানুয়ারি ২০২১

বিএনপি মানেই হচ্ছে উন্নয়নে জিরো, দুর্নীতিতে হিরো

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরোধিতাকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে একটি মহল এখন সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা মানবতার গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শত্রু। বিএনপির মুখে দুর্নীতিবিরোধী কথা মানায় না। কারণ ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে তারা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল, দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। আসলে বিএনপি মানেই হচ্ছে উন্নয়নে জিরো, দুর্নীতিতে হিরো। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনাকালে সরকারী দলের একাধিক সংসদ সদস্য স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নাম ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’ করার দাবি জানালে নিজ আসনে বসেই হাত নাড়িয়ে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, সরকারী দলের পঙ্কজ দেবনাথ, ইকবাল হোসেন, খালেদা খানম, আলী আজগর, বেগম আনজুম সুলতানা সীমা, বেগম খাদিজাতুল আনোয়ার, জিন্নাতুল বাকিয়া, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী ও নুরুল ইসলাম তালুকদার। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পদ্মাসেতুর নামকরণের প্রস্তাব করেন সরকারী দলের সংসদ সদস্য মোঃ ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্তের কারণে পদ্মাসেতু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তাই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করতে হবে। ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা নেত্রীর ওপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কাজটি করতে চাই। তাই ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে অনুরোধ এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হোক। বাস্তবে পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার বাস্তব রূপ, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিজয়ের সেতু, পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের চপেটাঘাত করার স্তম্ভ। ওই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে সরকারী দলের আরেক সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মাকে শাসন করে বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এই স্বপ্নের সেতু নির্মাণ করা। আমি আবারও দাবি জানাই, এই সেতুর নাম হবে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’। প্রধানমন্ত্রী তার বিনয় দিয়ে হয়তো বারবার বলবেন, ‘না’। কিন্তু আমরা এই প্রজন্মের যারা, তারা অকৃতজ্ঞ নই, আমরা জানি যখন বিশ্ব ব্যাংক ফান্ড প্রত্যাহার করে নিল, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি হলো, তখন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা সাহস করে বললেন নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব এবং তিনি এটা সম্ভব করেছেন মাত্র ১২ বছরে। এ সময় পঙ্কজ দেবনাথ আরও বলেন, আজকের এই করোনা সঙ্কট থেকে বাঁচার উপায় টিকা। সেই টিকা ভারত থেকে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। অনেক উন্নত দেশ এখনও টিকা পায়নি। সেই টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞ কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অগ্রসরমান। আমরা এখন ৪১তম ধনী দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে-এটা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে একটি মহল এখন ষড়যন্ত্র করছে। তারা মানবতার গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শত্রু। এরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করারও দুঃসাহস দেখাচ্ছে। বাঙালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরোধিতাকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল এই দেশের জন্য, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। স্বাধীনতার পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেই পোড়া মাটির এই দেশের সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছিলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্যের জায়গায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারণেই এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তাই করোনাকালেও পার্শ্ববর্তী কোন দেশই বাংলাদেশের কাছাকাছি অর্থনৈতিক সাফল্যের জায়গায় নেই। তিনি বলেন, বিএনপি এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু তাদের মুখে সেটা মানায় না। তারাই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান ছিল। এই দলটি উন্নয়নে জিরো এবং দুর্নীতিতে হিরো। তাই জন্যগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে জনগণ তার সুফল পাচ্ছে। কিন্তু এখনও বাকি আছে। ভ্যাকসিন আছে। সেটার যথাযথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগে ভ্যাকসিন আমদানির সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন গবেষণার বিষয়। এতো দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি কিভাবে সম্ভব হলো? তবে দেশে বেশকিছু ঝুঁকি আছে। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকেও আরও কঠোর থেকে কঠোরতম অবস্থান নিতে হবে। আগে মাদক ছিল না। এখন মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। দুর্নীতি-মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি। করোনাকালে বিএনপি’র নীরবতার সমালোচনা ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে সরকারী দলের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জনগণের সেবায় ব্যস্ত, তখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের নীরবতা আমাকে ব্যথিত করেছে।
×