ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠ ফিচার

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২২ জানুয়ারি ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

হচ্ছেটা কী? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা বলছি। বৃক্ষশোভিত ঐতিহাসিক উদ্যানে এখন কী হচ্ছে? মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলায় আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ। যাতায়াত নেই কারও। এবং এ সুযোগেই কিনা কে বলবে, নিষ্ঠুর পরিকল্পনা নিয়ে একদল মানুষ উদ্যানে ঢুকে পড়েছে! আজকের ঢাকায় কী অমূল্য এই উদ্যান! কী যে অমূল্য! অথচ কথা নেই বার্তা নেই সেখানে মাটি কেটে বিশাল বিশাল গর্ত করা হয়েছে। গর্তের ভেতর ঘন করে বসানো হয়েছে রড। গোড়ায় সিমেন্ট ঢালা হয়েছে। গাছগাছালির মধ্যে দাঁত বের করে থাকা রড দেখে নিসর্গপ্রেমীদের বুক ধক্ করে ওঠে। আর কত ইট, সিমেন্ট, রড দেখব আমরা? কেন এসব নিয়ে উদ্যানেও ঢুকে পড়তে হবে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। জানা গেল, কফি শপ হবে এখানে। উদ্যানের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকটি কফিশপ বসানোর কাজ চলছে। কারা এত ক্ষুধার্ত? এত তৃষ্ণা কাদের? কফিশপের নামে উদ্যান গিলে খেতে হবে কেন? রুচিহীন এই দোকানদারীর তো আরও অনেক জায়গা ছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বেছে নিল কোন অশুভ চক্র? না, কোথাও কারও নামধাম লেখা সাইনবোর্ড চোখে পড়ে না। তবে জানা গেল, অনিষ্টটির সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, উদ্যান ঘিরে যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সেটির আওতায় কফিশপগুলো করা হচ্ছে। বাংলা একাডেমির বিপরীত দিকের যে প্রবেশপথ দিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করা হয় সেখানে বিশাল জায়গা নিয়ে একটি কফিশপ করা হচ্ছে। উদ্যানে প্রবেশের পথে সেটি চোখে পড়ে। গাছের নিচে সবুজের মাঝখানে এমন কংক্রিটের স্থাপনা কি যে বেমানান! চারুকলা অনুষদের পাশের গেটটি দিয়ে প্রবেশ করলেও অভিন্ন দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানেও হচ্ছে কফিশপ। সব মিলিয়ে চার থেকে সাতটি কফিশপ হতে পারে জানা গেছে। তার মানে, উদ্যানের পরিবেশটাই বদলে যাবে। এর কী এত দরকার পড়ল? জানতে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাকে। তবে সাবেক এক মন্ত্রী কফিশপের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই সবুজ বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে ভীষণ আন্তরিক। তার অনুমোদিত নক্সায় কোন কফিশপ ছিল না। বর্তমানে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। ধূলিদূষণ বেড়েছে। শীত জেঁকে বসায় রাজধানীর বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ বেড়ে গেছে। সাধারণত প্রতিবছর নবেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শীত পড়তে শুরু করলে ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর হতে শুরু করে। শীতে কুয়াশার কারণে বাতাসে জলীয়বাষ্প বেড়ে যায়, আর তাতে জমা হয় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে দেশের প্রধান ১১টি শহরের বায়ুর মান প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, রাজধানীর বায়ুর মান এখন ক্রমেই নিচের দিকে নামছে। আশপাশে তাকালেও বিষয়টি অনুমান করা যায়। এখন ঢাকার রাস্তার ধারের কোন গাছের পাতা দেখা যাচ্ছে না। সেখানে কয়েকস্তর ধুলো জমে আছে। সবুজ পাতার রং আশ্চর্য কালো হয়ে গেছে। মেট্রোরেলসহ নানা উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ চলমান থাকায় ধুলোর পরিমাণ বেড়েই চলছে। কোভিডেরকালে এই অবস্থা বিপদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় মাস্ক ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপরই জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। উপহার যখন ভ্যাকসিনে। বহুল আলোচিত ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত উপহার হয়ে ঢাকায় এলো। বৃহস্পতিবার ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত। করোনা প্রতিরোধে সুন্দর একটি সূচনা হলো বলতে হবে। এর পর পরই আমদানিকৃত টিকা আসতে শুরু করবে। টিকা সংগ্রহ ও প্রয়োগের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করা গেলে আসতে পারে নতুন ভোর। সে ভোরের অপেক্ষায় এখন সবাই।
×