ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোটের হাওয়া

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোটের হাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আর মাত্র নয় দিন বাকি। প্রচারের শুরুতে ঢিমেতাল থাকলেও ক্রমেই বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোটপূর্ব পরিবেশ। ঘটছে বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘাতের ঘটনাও। নির্বাচন কমিশনে জমা পড়ছে হামলা, হুমকি, প্রচারে বাধাদানসহ নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এদিকে, ভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রস্তুত পুলিশ প্রশাসন। আগামী ২৭ জানুয়ারির সিটি নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য। কাউকে সহিংসতা করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে সিএমপি (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ)। যারাই বিশৃঙ্খলা চালাতে চাইবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। চসিক নির্বাচনে এখন মেয়র ও কাউন্সিলররা ব্যস্ত রয়েছেন বিরামহীন প্রচারে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা এবং অলিগলি সরব হচ্ছে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের সমর্থনে স্লোগানে স্লোগানে। বড় ধরনের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রার্থী যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই হচ্ছে কর্মী সমর্থকদের জমায়েত। ফলে অনির্ধারিত কিছু সভা হয়ে যাচ্ছে, যেখানে বক্তব্য রাখেছেন প্রার্থীরা। তুলে ধরছেন নগর উন্নয়নে নানা প্রতিকৃতি। এ সকল প্রতিশ্রুতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে পরিচ্ছন্ন নগরীর পাশাপাশি সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী স্বাস্থ্য সেবাখাতে উন্নয়নের ওপরও জোর দিচ্ছেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীর গণসংযোগে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণও ততই বাড়ছে। সুস্পষ্ট নীতিমালায় হকার পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি রেজাউলের ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী রবিবার মতবিনিময় করেন মহানগরীর হকারদের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, গণমানুষের কল্যাণে কাজ করাই আমার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। মেয়র নির্বাচিত হয়ে আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কল্যাণে বিশেষ প্রকল্প চালু করতে উদ্যোগ নেব। ফুটপাথে যারা ব্যবসা করে জীবিকা চালায় তাদের বিষয়ে সুস্পষ্ট একটি নীতিমালা সকলের সমম্বয়ে প্রণয়ন করবে সিটি কর্পোরেশন, যাতে হকাররা ব্যবসাকার্য চালাতে পারেন এবং জনসাধারণের চলাচলেও বিঘ্ন না ঘটে। একটি আধুনিক, মানবিক, ব্যবসাবান্ধব ও গতিময় নগরী গড়তে আগামী ২৭ জানুয়ারি আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আমি একজন কাজপাগল মানুষ, আমি কাজ করতে চাই। আপনাদের সকলকে নিয়ে এই শহরকে গড়তে চাই, যাতে করে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ, যানজটমুক্ত ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। সভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে চট্টগ্রাম ফুটপাথ হকার্স সমিতি। হকার্স নেতৃবৃন্দ বলেন, মেয়র পদে সৎ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়েছেন। আমরা নৌকার বিজয়ের জন্য মাঠে আছি এবং আগামী ২৭ তারিখ নৌকায় ভোট দিয়ে সৎ, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখব। সভায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের বন পরিবেশ সম্পাদক মশিউর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মোতালেব চৌধুরী প্রমুখ। পরে ওই এলাকায় নৌকার সমর্থনে গণসংযোগ হয়। এদিকে, মহানগরীর জিইসি মোড় এলাকায় শনিবার রাতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোটের প্রচার কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে কার্যালয়টি চালু করা হয়, যা উদ্বোধন করেন মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী। কার্যালয় উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি রেজাউল করিম বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে আন্দোলনে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ রাজপথে রক্ত ঢেলেছে, প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ব্যাহত করতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বিএনপির ছত্রছায়ায় স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি নৌকার বিজয়ের জন্য সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের পরিকল্পিত উপায়ে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোটারদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি ডাঃ শাহাদাতের ॥ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন রবিবার গণসংযোগ করেন মহানগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকায়। এ সময় তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এখনও সবার জন্য সমান হয়নি। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। শনিবার আমার গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। প্রশাসন এখনও হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, নয়তো ভোটাররা ভয়ে কেন্দ্রমুখী হবে না। নির্বাচন ঘিরে মোতায়েন থাকবে ৯ হাজার পুলিশ ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অনুকূল এবং নির্ভয় থাকে সেজন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছে মহানগর পুলিশ। সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর রবিবার সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনও বড় ধরনের সংঘাত না হলেও সম্ভাব্য সব কিছু বিবেচনায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের কাজের ব্যাপ্তি বাড়ানো হয়েছে, বেড়েছে পুলিশী টহল এবং চেকপোস্টের সংখ্যা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দেয়া হবে না। নির্বাচনী সহিংসতা হতে দেবে না পুলিশ প্রশাসন। নির্বাচন ঘরে বিভিন্ন পর্যায়ে ৯ হাজার পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ফোর্স আরও বাড়ানো হবে কিনা তা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার ওপর। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ কমিশনে ॥ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপও বাড়ছে। এরমধ্যে একটি মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও প্রতিদিনই ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটছে। নির্বাচন কমিশনেও জমা পড়ছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। সর্বশেষ গত শনিবার ৬টিসহ মোট ২৪টি অভিযোগ এসেছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। শনিবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির তিনটি এবং বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের তিনটি অভিযোগ জমা পড়ে। এ সকল অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রচারে বাধা, গাড়ি ভাংচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন। কমিশনে জমা পড়া ২৪টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থীর। বাকিগুলো জানিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
×