ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা এখনও আগ্রহী নয়!

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

চসিক নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা এখনও আগ্রহী নয়!

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দ্রুত ঘনিয়ে আসছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয় সাধারণ মানুষের মাঝে এখনও ইতিবাচক মনোভাব জন্ম নেয়নি। কেননা, ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটারদের ভোট প্রদানে অনীহার বিষয়টি জনমনে যেভাবে প্রোথিত হয়েছে তা থেকে এখনও সাধারণ মানুষ বেরিয়ে আসতে পারেনি। এ বিষয়টি ইসির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচন নিয়ে ভোটার মহলে প্রধান যে কথাটি আলোচিত হচ্ছে সেটি হচ্ছে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারবিরোধী পক্ষ যাতে অহেতুক কোন ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলতে না পারে- তার বিপরীতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে তা কার্যকর করা হোক। সহিংসতা, ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ বেমানান কোন নির্বাচন চায় না ভোটার মহল। মেয়রসহ কাউন্সিলর পদে সরকারী দল, বিরোধী দল বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। চসিকের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে এটি ষষ্ঠ নির্বাচন। মাঝপথে একটি নির্বাচনই সমালোচিত হয়েছে। তবে ওই নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী দুপুরের আগেই অনিয়মের নানা অভিযোগ এনে মাঠ ছেড়ে দেয়ার কারণে একচেটিয়াভাবে সুফল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন সরকারী দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী। মাঠ না ছাড়লে দুই প্রার্থীর লড়াই হয়তো হাড্ডাহাড্ডি হত, এ ধারণাও ছিল ওই সময়ে। ওই নির্বাচনটি ছাড়া চসিকের মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে অন্য সবগুলোতে লড়াই হয়েছে। তবে ২০০০ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই সময়ে অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। এ কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনটি হয় ১৯৯৪ সালে। প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মীর নাসির উদ্দিনকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। ওই নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী বিএনপির মীর নাসির উদ্দিনকে প্রায় এক লাখ ভোটে পরাজিত করে রেকর্ড গড়েন। কেননা, ১৯৯৪ এবং ২০০৫ সালের দুটি নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির শাসনামলে। এরপর ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমের সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরী লক্ষাধিক ভোটে হেরে যান। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে হেরে যান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম। ওই নির্বাচনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দেন মনজুর আলম। নির্বাচন চলাকালে দুপুরের আগেই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণাও দেন। পরের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৯ মার্চ। বিশ^ব্যাপী করোনার আগ্রাসন এবং তা বাংলাদেশেও আঘাত করার কারণে এ নির্বাচন স্থগিত হয়। পরে আগামী ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। এখন চলছে সেই নির্বাচনের যাবতীয় যজ্ঞ। হাতে রয়েছে আরমাত্র ১২ দিন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারে সরব হয়েছে মহানগরী। এ নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিনরাত প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এবার এ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। তবে সরকারী দল আওয়ামী লীগে মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্রের ব্যাপারে মূলত বিদ্রোহী হিসাবেই লড়াইয়ে নেমেছেন। বর্তমানে সরকারী দলের মধ্যে প্রার্থী মনোনয়নে অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে ব্যাপকভাবে। এসব অভিযোগের পর এখন বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থীদের প্রচারাভিযানে হানাহানির চিত্র উঠে আসছে। ইতোমধ্যে নগরীর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুগ্রুপের সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনার পর প্রশাসন ভালভাবে নড়েচড়ে উঠেছে। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা ভীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে সেটি হচ্ছে চসিক নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গর্জে উঠুক। চমক সৃষ্টি করা হোক এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার মাধ্যমে। যেহেতু ইভিএম পদ্ধতিতে ৪১ ওয়ার্ড জুড়ে মেয়র ও কাউন্সিলরদের ভোটগ্রহণ চলবে সেক্ষেত্রে ভোট কারচুপির কোন সুযোগ নেই, যদি না প্রশাসনের সকল স্তর সজাগ ও স্বজনপ্রীতির উর্ধে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হোক ভোটারদের নিরাপত্তার প্রধান অনুষঙ্গ। আওয়াজ উঠেছে, প্রার্থীদের প্রমাণ করতে দেয়া হোক ভোটার মহলে কে কত বেশি জনপ্রিয়। কবর রচনা হোক অতীতের বিভিন্ন সময়ে ভোট ডাকাতিসহ সব ধরনের অনিয়মের অভিযোগের। বর্তমানে এ নির্বাচন নিয়ে আলোচিত হচ্ছে নির্বাচনে ভীতিকর পরিস্থিতি হবে না বিচ্ছিন্ন সহিংস ঘটনা সৃষ্টি হবে। দীর্ঘসময় জুড়ে দেশে ইউপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, পৌর নির্বাচন সর্বোপরি সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এখন কয়েক ধাপে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলোচিত হচ্ছে নির্বাচনের মূল প্রাণ ভোটাররা। ভোটাররা যদি ভোট দিতে না যায় সেক্ষেত্রে নির্বাচনের সৌন্দর্য থাকে না। এক্ষেত্রে ভোটারবিহীন, কারচুপি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা নামে নানা অভিযোগ উঠে। বর্তমান চসিক নির্বাচন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এ উত্তাপ যেন সহিংসতায় পরিণত না হয় সে আশা ভোটার মহলে। বর্তমানে প্রতিটি ওয়ার্ড মেয়র প্রার্থী পদে নৌকা ও ধানের শীষে এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতীকের নামে স্লোগানমুখর হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এদেশে ভোট মানে উৎসব। আর সে ভোট যদি হয় অবাধ ও সুষ্ঠু, তখন সেটা পরিণত হয় মহোৎসবে। দেশে অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে ভোটারদের মনোবাসনা নেতিবাচক যে হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এতে ভোটাধিকার প্রয়োগের হার ব্যাপকভাবে কমেছে, যা কখনও একটি নির্বাচনের জন্য কাম্য হতে পারে না। সময় গড়িয়ে এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মেয়র পদে মূল লড়াই বরাবরের মতো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে ভোটার মহলের ধারণা। এর পাশাপাশি ৪০ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে দল সমর্থিতদের অনেকে স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন। একটি ওয়ার্ড অর্থাৎ ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
×