ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ

রাজশাহীতে নির্বাচনী সহিংসতা

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

রাজশাহীতে নির্বাচনী সহিংসতা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর নেতা কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পৌর এলাকার তালতলায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে উস্কানিমূলক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। বুধবার রাতের এই ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে প্রায় ৬ রাউন্ড পিস্তলের ফাঁকা গুলি এবং ৮-১০টি ককটেল বিস্ফোরণ হয় বলে দাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে আহত হন, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীসহ প্রায় ১৩ জন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা ও চারঘাট সার্কেলের সিনিয়র (এএসপি) নুরে আলম-বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া এবং রাজশাহী র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্র্রার্থী শহীদুজ্জামান শহীদ জানান, তার পক্ষে আহত হয়েছেন-তুষার আলী ও লাল্টু। এদের দুজনকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। অপর দিকে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর পক্ষে আহত হয়েছেন মুক্তার আলী নিজে, তার কর্মী নাজমুল হক, রানা, বকুল, মজনু, খোকন, ফারুক, জিসান, হৃদয়, জাহিদ, রাজু ও আরিফুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮ টার সময় ৫ শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে আড়ানী বাজারের তালতলায় এক পথসভায় উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছিল। সভা থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, বাংলাদেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই দলের বাইরে কোন ভোট হবে না। বিদ্রোহীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং আপনারা তাকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না। এ সময় রাস্তার উত্তর দিক থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর ৮-১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে গণসংযোগ করে তার কার্যালয়ে ফিরছিল। আকস্মিকভাবে তাদের দেখে পেছন থেকে ধর ধর করে ইট নিক্ষেপসহ ধাওয়া করে শহীদের লোকজন। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ফের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। এতে করে রাস্তার ধারে বসা সবজি ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়। ভাংচুর হয় দুই দলের নির্বাচনী অফিস। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভাংচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার রাতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে বাঘা থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করেন। তিনি আরও জানান, বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া এই মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আড়ানীর সাহাপুর এলাকার সাহাবাজ আলীর ছেলে মিলনকে আটক করে পুলিশ। শৈলকুপায় কাউন্সিলর প্রার্থীর লাশ উদ্ধার নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ থেকে জানান, শৈলকুপায় নির্বাচনী সহিংসতায় লিয়াকত হোসেন বল্টু (৫০) নামে উমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিহত ও কুমার নদ থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর খান বাবুর (৫৫) মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকার সাধারণ ভোটাররা ভয়ভীতিতে রয়েছেন। এদিকে এ সব ঘটনায় ৮ নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার রাত ৯টার দিকে ৮নং কবিরপুর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত লিয়াকত হোসেন বল্টু শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ছোট ভাই। সংঘর্ষের পর পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানা গেছে, বুধবার সংঘর্ষের পর মধ্যরাতে দেবতলা গ্রামের কুমার নদ থেকে ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর খান বাবুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা মনে করলেও পুলিশ এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে। তবে কিভাবে তার মৃত্য হয়েছে ময়নাতদন্ত শেষে জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত আলমগীর খান বাবুর স্ত্রী ইতি খাতুন জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। সে সময় আলমগীর খান বাবু কুমার নদের ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এসব ঘটনার পর শৈলকুপায় পৌর এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষের মাঝে ভয়ভীতি দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা করেছেন অনেকে। আখাউড়ায় মেয়র প্রার্থীকে জুতাপেটা স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর এক সমর্থকের বিরুদ্ধে আরেক মেয়র প্রার্থী নুরুল হক ভূইয়াকে জুতাপেটা করেছে। বুধবার রাতে উপজেলা শহরের সড়কবাজারে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, জুতাপেটার ঘটনায় অভিযুক্ত সোহাগের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও আখাউড়া থানায় মাদকসহ ৪টি মামলা রয়েছে। সূত্র জানায়, জুতাপেটা করার ঘটনায় অভিযুক্ত সোহাগ মোল্লার বিরুদ্ধে রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নুরুল হক ভূইয়া। সোহাগ আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের মোল্লার ছেলে। মেয়র প্রার্থী নুরুল হক ভূইয়া অভিযোগ করে বলেন, রাতে সড়কবাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে চাপান করার সময় মাদক সন্ত্রাস সোহাগসহ আরও কয়েকজন দোকানে আসে। তাকজিল খলিফা কাজলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানোয় সোহাগ আমাকে জুতাপেটা করে। আমি থানায় জিডি করেছি। আখাউড়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাকজিল খলিফা কাজল জানান, নুরুল হক ভূইয়াকে জুতাপেটা করার ঘটনা তিনি জানেন না।
×