ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাজার কোটি টাকার আইপিও অনুমোদন

শেয়ারবাজারে রেকর্ড গড়ার বছর

প্রকাশিত: ২১:২০, ১ জানুয়ারি ২০২১

শেয়ারবাজারে রেকর্ড গড়ার বছর

অপূর্ব কুমার ॥ করোনা অতিমারির মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে বিগতবছরে বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীদের ভরসার স্থল হিসেবে পুঁজিবাজার নতুন করে জায়গা করে নিয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি রবি ও ওয়ালটন হাইটেক পার্কের মতো কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে আস্থাহীন পুঁজিবাজারটিতে ফের বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা বাড়ছে। বছরটিতে রেকর্ড হাজার কোটি টাকার আইপিও অনুমোদন করা হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোর নতুন শাখা খোলা, ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন ট্রেক ছাড়ার জন্য গেজেট প্রকাশের পর নতুন মাত্রা পেয়েছে পুঁজি উত্তোলনের স্থানটি। পুনর্গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতি আস্থার প্রতিফলন হিসেবে শেয়ারবাজারের সূচক ১৭ মাসের সর্বোচ্চ এবং বাজার মূলধনের নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা অতিমারি আঘাত হানে ভয়ঙ্করভাবে। গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করোনার রোগী শনাক্ত হয়। পরে ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ফলে দীর্ঘ ৬৬ দিন শেয়ারবাজার বন্ধ থাকে। পৃথিবীর কোন দেশেই এত দীর্ঘকালীন বন্ধ থাকেনি শেয়ারবাজার। করোনার মধ্যেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাতে ড. শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে নতুন কমিশন গঠন করা হয়। শুরুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকলেও আস্তে আস্তে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ারবাজারে আসতে শুরু করে। এটিরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারে। পতন রোধে সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ ॥ করোনার আগেই ভয়ঙ্কর পতন ঠেকাতে দরপতনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করে দেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ড. এম খায়রুল হোসেনের কমিশন গত মার্চ মাসে সার্কিট ব্রেকার চালুর আগের ৫ দিনে ক্লোজিংকে বিবেচনায় আনা হয়। সার্কিট ব্রেকার চালুর ফলে বড় ধরনের পতন ঘটেনি বলে এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। আইপিও রাইট শেয়ার ছেড়ে হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ॥ ২০২০ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও এবং রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে ৯টি কোম্পানি। এই সময়ে একটি বন্ড’সহ ৯টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। ডিএসইর তথ্য অনুসারে, শিল্প উদ্যোক্তারা গতবছরে বাজার থেকে মোট ৮ কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ৩ কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ৩১১ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে। অপরদিকে ২০১৯ সালে ১টি কর্পোরেট বন্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক আইপিও’র মাধ্যমে মোট ৬৫২ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে ৩টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা মূলধন উত্তোলন করে। নতুন তালিকাভুক্তি ॥ গতবছরে ১টি কর্পোরেট বন্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ ৬০০২ কোটি ৭১ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। অপরদিকে ২০১৯ সালে ১টি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট ১০টি সিকিউরিটিজ ১৪৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। রাইট শেয়ার ইস্যু ॥ ২০২০ সালে ১টি কোম্পানি ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫১টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ২৩ কোটি ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৬৫ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ ৭ কোটি ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৫ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। অপরদিকে ২০১৯ সালে ২টি কোম্পানি ২০ কোটি ৭৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৮২টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ২৩১ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ১টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৩ হাজার ৬৮০ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। মোবাইলে লেনদেন বেড়েছে ॥ চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে ৪৯ হাজার ১৫১ জনে উন্নিত হয়। ডিএসই সূত্র জানায়, বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য মডেল এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রেক্ষাপট ও গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোবাইল লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৯টি আদেশ প্রেরণ করে। এরমধ্যে ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৭টি আদেশ কার্যকর হয়। বিদেশী লেনদেন বেড়েছে ॥ গতবছরে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা আগেরবছরের চেয়ে ২১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ডিএসইর তথ্য মতে, গতবছরের ২০৮ কার্যদিবসে ডিএসইতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। গতবছরের চেয়ে ২১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। যার গড় লেনদেন ছিল ৬৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ২৩৭ কার্যদিবসে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং গড়ে লেনদেন ছিল ৪৮০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকার মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগেরবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ডিএসইতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল। ওটিসি মার্কেটে লেনদেন কমেছে ॥ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মূল মার্কেটে বিকল্প ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে ২০১০ সালে ১০ লাখ ১৮ হাজার ২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়। যার মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ৪৯ টাকা। যা গতবছরের চেয়ে ৯৩ শতাংশ কম। গতবছরে ওটিসি মার্কেটে মোট ১০ লাখ ১৮ হাজার ২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়। যার মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ৪৯ টাকা। এর আগের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৪টি শেয়ার। যার মূল্য ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৮৯২ টাকা। পিইও বাড়ল ॥ বছর ২০২০ সাল শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্ত শেয়ারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই রেশিও বেড়েছে। আলোচ্য বছরে ডিএসইতে পিই রেশিও ৩.৫৮ পয়েন্ট বা ৩১.১০ শতাংশ বেড়েছে। সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ডিএসইর সার্বিক মার্কেট পিই রেশিও দাঁড়ায় ১৫.০৯। অপরদিকে ২০১৯ সালের শেষে সামগ্রিক বাজার মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই ছিল ১১.৫১।
×