ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আটকেপড়া প্রবাসীদের সরকারী খরচে দেশে আনা হবে

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

আটকেপড়া প্রবাসীদের সরকারী খরচে দেশে আনা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২০’ উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শুক্রবার আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আটকেপড়া প্রবাসীদের সম্পূর্ণ সরকারী খরচে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এবারের অভিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান’। বিশ্বব্যাপী অভিবাসন দিবস পালিত হলেও বাংলাদেশে মূল ও জাতীয় অনুষ্ঠান আগামী ৬ জানুয়ারি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন। তিনি অভিবাসী দিবসের উদ্বোধন করবেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে ইমরান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। এ দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ কর্মী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ লোককে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে গমন করে। বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী বিদেশ গেছেন। কিন্তু বর্তমানে মহামারী করোনা কারণে বিভিন্ন গন্তব্য দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক রি-ইন্ট্রিগেশনসহ সামগ্রিক সুরক্ষা, বর্তমান শ্রমবাজার ধরে রাখা, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণসহ করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এ লক্ষ্যে করোনা মহামারীকালে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর, সংস্থা নিয়ে ১৪টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরী সামগ্রী বিতরণ, করোনাকালে সৌদি আরবের ডিপোর্টেশন সেন্টারে অবস্থানরত মোট ২০৭ জন নারী কর্মীকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড তহবিল থেকে বিমান ভাড়া প্রদান করে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। একইভাবে লেবানন থেকে ৯৫ জন কর্মী এবং ভিয়েতনামে আটকে পড়া ১০৫ জন কর্মীকে দেশে ফেরত আনা হয়। লকডাউনের সময় গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিদেশ প্রত্যাগত ৫ হাজার ৯ শ’ ৭৪ জন কর্মীকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিমানবন্দরে তাৎক্ষণিক মােট ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। অভিবাসী দিবস উপলক্ষে কর্মীদের বিষয়ে কোন প্রকার অবহেলা না করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। দক্ষ জনবল তৈরি হলেই চাহিদাভিত্তিক বৈশ্বিক কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। প্রতিবছর কয়েক লাখ লোক বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন দেশের বেকারত্ব কমবে। অন্যদিকে তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য, রেমিটেন্সে প্রেরণ, তথ্যপ্রবাহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে ও সেবা প্রদানে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম উইংগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে উইংগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। এখন আগের তুলনায় শ্রম উইংগুলো কর্মী বান্ধব। তারা বিভিন্ন দেশে খোঁজ খবর রাখছেন। কোথাও কোন কর্মী বিপদে পড়লে শ্রম উইংগুলো দ্রুত তা সমাধান করার চেষ্টা করছেন। মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মীর পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ২শ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে গত ১৫ জুলাই হতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ৪ শতাংশ সরল সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ প্রধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আওতায় ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪১১ জন ঋণগ্রহীতাকে ইতোমধ্যে ৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। বিদেশ ফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে সরকার ৫ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা থেকে পুরুষ কর্মীদের জনা ৯ শতাংশ সুদে ও নারী কর্মীদের জন্য ৭ শতাংশ সুদে বিতরণ শুরু হয়েছে। বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ সেবা শক্তিশালীকরণের এই প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায়।
×