ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল ভাষণ স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি স্থানান্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে

ভ্যাকসিন চাই সবার ॥ করোনা মোকাবেলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

ভ্যাকসিন চাই সবার ॥ করোনা মোকাবেলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মানসম্পন্ন ভ্যাকসিনের সর্বজনীন ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত, ভ্যাকসিন উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি আরও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে দেয়া প্রাক রেকর্ডকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরী মনোযোগ এবং আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথমত, আমাদের যথাসময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করার প্রয়োজন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান এবং জাতিসংঘের মহাসচিব ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুদিনের এ বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন। অধিবেশনে ধারণকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০৩০ সালের উন্নয়ন এজেন্ডা সমতার নীতি দ্বারা পরিচালিত এসডিজি অর্জনে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়। একইভাবে যখন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কথা আসে, তখন কাউকে পিছনে রাখা সমীচীন হবে না। এটি মহামারী পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে। গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য’ বিবেচনা করতে হবে। ডব্লিউএইচওর এ্যাক্ট এবং কোভাক্স সুবিধার উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তৃতীয়ত, কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয় সরকারসমূহের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একে অপরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।’ সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় কঠিন সময় পার করছে জানিয়ে এই সময়ে এ বিশেষ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে বলেও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণে না আনলে কোভিড-১৯ কে কখনই কোন একটি স্থানে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই আসুন আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যতের মহামারী মোকাবেলায় সমর্থ হবে। এই অধিবেশন কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় যৌথ পদক্ষেপ, বৈশ্বিক সংহতি এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, বাংলাদেশ এ বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় সকলের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৪ লাখের বেশি লোক মারা গেছে এবং এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহামারী অনেক মানুষকে আরও দরিদ্র করে তুলেছে এবং আরও অনেকে ক্রমে দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সকল দেশে অপুষ্টি, বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা চেপে বসছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনে প্রবল ধস নামায় মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মহামারী আমাদের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস গ্রহণের এবং তা আরো উন্নত করতে এ সঙ্কট থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়নি জানিয়ে অনেক দেশই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ এই মহামারীতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জীবন ও জীবিকা, আমাদের অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়ন সাফল্যকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুরু থেকেই এবং কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি এবং আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারী থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সরকার আমাদের ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব হ্রাস করতে ১৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা আমাদের জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার মার্চ মাসের প্রথম দিকে ভাইরাস শনাক্ত করার পর থেকে আড়াই কোটির বেশি লোককে সহায়তা প্রদানে সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারিত করেছেন। মহামারীটির দ্বিতীয় ধকল সামাল দিতেও ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
×