ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ভাস্কর্য-মূর্তি দুটোকেই হারাম বলে ফতোয়া!

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

এবার ভাস্কর্য-মূর্তি দুটোকেই হারাম বলে ফতোয়া!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার কেবল ভাস্কর্য নয়, একই সঙ্গে মূর্তি নির্মান ও সংরক্ষণকেও হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন হেফাজত-জামায়াতপন্থী একদল ‘আলেম’। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে দেশের প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের অবস্থানের বিরোধীতা করেই এবার এই গোষ্ঠি সংবাদ সম্মেলন করে ‘প্রাণীর ভাস্কর্য-মূর্তি নিমার্ণ ও সংরক্ষণ হারাম’ বলে ফতোয়া জারি করেছেন। তারা একই সঙ্গে বলেছেন, যারা বলছেন মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয় তারা ভুল বলছেন। সত্যকে গোপন করছেন। হেফাজতের ব্যনারেই এমন একটি কর্মসূচি পালনের খবর আসছিলো দু‘দিন ধরে। হেফাজতের মহাসচিব ও বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা নূর হোসেইন কাসেমিন নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলনের উদ্যোগের খবরের মধ্যেই বৃহস্পতিবার কৌশলগত কারনে ব্যানার পরিবর্তন হয়ে যায়। হেফাজতের প্রয়াত আমীর আল্লামা শফীর বিরোধীতাকারিদের উদ্যোগে ফতোয়া দেয়া হলেও ব্যনারে ছিল ‘দেশের শীর্ষ আলেম ও মুফতিদের’ সংবাদ সম্মেলন। উপস্থিত একাধিক নেতা বলেছেন অসুস্থতার জন্য কমসূচিতে ছিলেন না নূর হোসেইন কাসেমি। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ফতোয়ার বিষয়টি জানানো হয়। সরকারকে সকল প্রাণীর ভাস্কর্য ও মুর্তি অপসারণ করার আহবান জানিয়েছেন তারা। বলা হয়, এ ফতোয়া দিয়েছেন ৫ জন আলেম। আর এ ফতোয়া সমর্থন করে সাক্ষর করেছেন দেশের ৯৫ জন আলেম। তাদের দাবি, কোরাআন ও হাদিসের আলোকে এ ফতোয়া দেয়া হয়েছে।। পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও ভাস্কর্য নিমার্ণ করা যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে ৫ জন আলেমের ফতোয়াটি পাঠ করেন কেন্দ্রীয় দারুল ইফতা বাংলাদেশ বসুন্ধরার প্রধান মুফতি এনামুল হক। তিনি ছাড়াও ফতোয়াটি যৌথ ভাবে দিয়েছেন, মারকাযুদ দাওয়া আল ইসলামিয়ার আমীনুত তালীম মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মালেক, জামিয়া সুবহানিয়ারর প্রধান মুফতি মাওলানা মহিউদ্দিন মাসুম, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শিক্ষক মাওলানা তাউহীদুল ইসলাম। মুফতি এনামুল হক বলেন, মানুষ ও অন্য যে কোন প্রাণীর ভাস্কর্য আর মুর্তির মাঝে কোন শরীয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও তা সন্দেহাতীত ভাবে নাজায়েজ ও স্পস্ট হারাম। ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধানকে পাশ কাটিয়ে প্রাণীর মুর্তি ও ভাস্ক মাঝে পার্থক্য করে প্রাণীর ভাস্কর্য বৈধ বলা, সত্য গোপন করা এবং কোরআন ও সুন্নাহের বিধান অমান্য করার নামান্তর। কোরআন এবং হাদিসের আলোকে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ হারাম বলে দাবি করে তারা বলেছেন, এসব মূর্তি-ভাস্কর্য ভাঙার দায়িত্ব সরকারের। এদিকে জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড আল হাইয়্যাতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে আগামীকাল শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় বৈঠকে বসছেন বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতা। বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়া নেতারা বলছেন, ভাস্কর্য ইস্যুর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ে প্রস্তবনা রাখবেন তারা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তা নিয়ে কোরআন হাদীসের আলোকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেমদের দেয়া ফতোয়া বিচার বিবেচনা করে একটা মতামত দেয়া হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাজা-বাদশাহ এবং সরকার প্রধানদের যে ভাস্কর্য করা হয়েছে তা কি ইসলামের ফতোয়া অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে নাকি সরকারি ক্ষমতাবলে করা হয়েছে। যদি তারা ইসলামের ফতোয়া অনুযায়ী ভাস্কর্য করে থাকেন তাহলে কোন ফতোয়ায় ভাস্কর্য তৈরি করেছে তা দেখে হবে বলেও জানান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী জানান, আমরা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি বঙ্গবন্ধুর বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ বিষয়ে আমরা বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। তবে ভাস্কর্যের বিষয়ে করনীয় নিয়ে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দ্বিমত আছে বলে জানান মুফতি ওয়াক্কাস। তবে, তা মানতে নারাজ বর্তমান নেতৃত্ব। যেকোনো বিষয়ে মতামত প্রকাশে হেফাজত ও কওমি আলেমদের আরও সহনশীল আচরণের পরামর্শ সংগঠনের সাবেক নেতাদের।
×