ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৭ নভেম্বর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ এভাবেও চলে যাওয়া যায়? আগে কোন আভাস না দিয়ে, কোন শব্দ না তুলে, এমন নিভৃতে ম্যারাডোনা চলে যেতে পারেন? মানায় তাকে? নাকি সারাজীবন যেভাবে ভক্তদের তিনি অবাক করেছেন, মহাবিদায়ের ক্ষণেও তা-ই করে গেলেন? কে দেবে উত্তর? আরও কত প্রশ্ন মনে! অযুত জানতে চাওয়া! জানা যাবে না। সবই শেষ হলো। সাঙ্গ হলো। বিদায় নিলেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকা, সবচেয়ে নিখুঁত আবেগ আর শর্তহীন ভালবাসা দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। প্রাণবান, দুরন্ত, মাতিয়ে রাখা জীবন জীবনের নিয়মেই ফুরোলো। কিন্তু আমরা তো জানি, ঈশ্বর যিনি তার ফুরোবার কিছু নেই। ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডেনা ফুরোবেন না। হারিয়ে যাবেন না কোনদিন। তার মাঠ ছাড়ার পরও অনেক তারকার জন্ম হয়েছে। কিন্তু ম্যারাডোনা ছিলেন তারকাদের তারকা। আশ্চর্য জ্যোতি নিয়ে এসেছিলেন। গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল তার জ্যোতি। তবে বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ড হতে ম্যারাডোনার প্রতি যে ভালবাসা দেখানো হয়েছে তাকে শুধু ভালবাসা বললে খুব ভুল করা হবে। সেইসব দিন, যে কোন বিবেচনায়, ইতিহাসের উপাদান হয়ে থাকবে। হয়তো কোন দিন আমরাই দেখব, ম্যারাডোনাকে আরও কতভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা জানতে বাংলাদেশে আসছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীরা। না, একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আবেগে, হ্যাঁ, কণ্ঠ বুজে আসছে। চোখজুড়ে কান্না। তবুও সত্যটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি শুধু। আর কে না জানে, তখন টেলিভিশনও ছিল দুর্লভ বস্তুটি। আর কম্পিউটার ইন্টারনেট? কল্পনার অতীত। ইউটিউব, ফেসবুক কোথায় পাবে লোকজন? এর পরও, আজ ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে পৌঁছে গিয়েছিল ম্যারাডোনা নামটি। এর আগে দ্বিতীয় কোন বিদেশী এমন হাওয়ার মতো, জলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। গাঁয়ের আলপথ ধরে হেঁটে যাওয়া কৃষক, নৌকার মাঝি, চা দোকানি- কে বুকে লালন করেনি স্বপ্নের নায়ককে? বাড়ির ছাদে গাছের মগডালে টানানো পতাকায়, স্কুল বালকের খাতার মলাটে, ভিউকার্ডে, ঘরের দেয়ালে ম্যারাডোনাই তো ছিলেন শুধু। বাঙালীর বুকে এখনও গভীরভাবে বাস করেন তিনি। মৃত্যুর খবরে তাই দেশজুড়ে শোকের ছায়া। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স থেকে শোক এসে আছড়ে পড়ছে বাংলায়। জীবদ্দশায় ম্যারাডোনা যেমন সবার হয়ে ছিলেন, তাকে হারানোর শোকও তেমনি সবাইকে কাঁদাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেবল তারই ছবি। স্মৃতি হাতড়ে মহানায়ককে খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনুরাগীরা। হায়! এত প্রেম এত সহজে উপেক্ষা করার শক্তি নিয়ে এসেছিলেন ম্যারাডোনা! অন্য প্রসঙ্গে যাই। বেশ নতুন একটি খবর। খবরে প্রকাশ, কমলাপুর রেলওয়য়ে স্টেশনকে জায়গা বদল করতে হবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রয়োজনে ঢাকার অন্যতম আইকনিক এ স্থাপনা সরানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এরই মাঝে অনেক দূর এগিয়ে গেছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত জায়গাজুড়ে চলছে বিশাল কর্মজ্ঞ। মেট্রোরেলের শেষ স্টেশনটি যেখানে হওয়ার কথা সেটি হলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ভবনের সামনের অংশ পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যাবে। এর ফলে বাধাগ্রস্ত হবে স্টেশনের কার্যক্রম। আবার কমলাপুর স্টেশন একই জায়গায় থাকলে স্টেশন ঘিরে চলমান মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রকল্পও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত গত মঙ্গলবার জাপানের কাজিমা কর্পোরেশনের নক্সা অনুযায়ী কমলাপুর স্টেশন ১৩০ মিটার উত্তরে সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এটি হলে বর্তমান ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি সাপেক্ষে নেয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আদলেই নির্মাণ করা হবে নতুন স্টেশন। পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ হতে ১০ বছর লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
×