ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার আসছে ঘূর্ণিঝড় নিভার ॥ আজ আঘাত হানছে ভারতে

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৫ নভেম্বর ২০২০

এবার আসছে ঘূর্ণিঝড় নিভার ॥ আজ আঘাত হানছে ভারতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’। তবে এটি দেশের উপকূলে আঘাত হানছে না। এর প্রভাবে দেশের উপকূলে হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি মঙ্গলবারই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি আরও শক্তি বাড়িয়ে ভারতীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে দক্ষিণ ভারতের উপকূলে আঘাত হানছে। এর প্রভাবে বুধবার থেকেই দেশের উপকূলে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরসমূহকে সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে সাগরে বিচরণকারী মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারসমূহকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তারা জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ তেলেঙ্গানাতেও ব্যাপক বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের উপকূলে বৃষ্টি বেশি না হলেও বঙ্গোপসাগর থেকে বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়বে। সে কারণেই তাপমাত্রা কিছু বাড়তে পারে। আকাশও আংশিক মেঘলা থাকবে। নতুন তালিকা অনুযায়ী এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘নিভার’। নামটি ইরানের দেয়া। এর আগের ঘূর্ণিঝড় যেটি আরব সাগরে সৃষ্টি হয় তার নাম ছিল ‘গতি’। নামকরণ করেছিল ভারত। আরব সাগরে তৈরি হওয়া ‘গতি’ আফ্রিকার সোমালিয়া উপকূলে গিয়ে আছড়ে পড়ে। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে হাল্কা বৃষ্টিপাত হলেও এর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর দেশের শীতের মাত্রা বেশ বাড়তে পারে। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিভার আজ বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ দক্ষিণ ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলে হাল্কা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে যাওয়ার পর আগামী শুক্র ও শনিবার নাগাদ দেশের শীতের প্রকোপ অনেকটা বেড়ে যাবে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা ও ঝড়োহাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে গভীর নিম্নচাপটি মঙ্গলবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা থেকে ১ হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করে। তবে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে এটি আজ বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যে কোন সময় ভারতের দক্ষিণ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। সে সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উপকূলে ঝড়ের কোন প্রভাব না পড়লেও এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের অন্যত্র আকাশ মেঘলা থাকবে। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড় দেশের উপকূলে আঘাত না হানলে আজ বুধবার থেকে দেশের উপকূলে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। কমছে তাপমাত্রা বাড়ছে শীত ॥ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ বুধবার থেকেই দেশের উপকূলে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির কারণে দেশে শীতের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। তারা জানায়, কয়েকদিন আগে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে হঠাৎ শীতের মাত্রা বাড়ছে। কয়দিনেই দেশের অধিকাংশ এলাকায় তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে। ইতোমধ্যেই রাজধানীতে সাধারণ মানুষের মধ্যে গরম কাপড় ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেড়েছে। রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সকাল সন্ধ্যায় বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে জাঁকিয়ে শীত পড়ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, নবেম্বর পর্যন্ত শীতের অনুভূতি একই থাকবে। তবে ডিসেম্বরের দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও অনেক নিচে নামবে। ফলে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হতে পারে। এই মাসে দুই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, উত্তরী হাওয়ার কারণে দেশের সব বিভাগের তাপমাত্রা কমে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এসেছে। অপরদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। তবে আজ বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তারা জানায়, সার্বিকভাবে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়েই কমছে। শীতের আগমনীকালে তাপমাত্রার এই ওঠা-নামাকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেও উল্লেখ করছেন।
×