ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিশিগানও বাইডেনের, ক্ষীণ হচ্ছে ট্রাম্পের জয়ের আশা

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২২ নভেম্বর ২০২০

মিশিগানও বাইডেনের, ক্ষীণ হচ্ছে ট্রাম্পের জয়ের আশা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে জয়ী হিসেবে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পরাজয় পাল্টে দিতে রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের প্রত্যাশা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায় টিকে থাকার সুযোগ। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসও টুডে, ফক্স নিউজ, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ানের। খবরে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের বৈঠকে দুই রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ভোট বৈধ করতে সাধারণ প্রক্রিয়া অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। মাইক শিরকি ও মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হাউসের স্পীকার লি চ্যাটফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে। বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, মিশিগানের নির্বাচনের ফল পরিবর্তন করে দেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তাই আমরা আইন অনুসরণ করব এবং মিশিগানের ভোটারদের রায় অনুযায়ী স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব। নির্বাচনজুড়েই আমরা এটা বলে এসেছি। মিশিগানে প্রাথমিক ফলে জয়ী হয়েছেন বাইডেন। ওই অঙ্গরাজ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন। যেহেতু ওই দুজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার ভোটারদের রায়ের প্রতি সম্মান জানানোর অর্থ হলো অঙ্গরাজ্যটি বাইডেনকে সমর্থন জানাচ্ছে। শুক্রবার জর্জিয়াতে ভোট পুনরায় গণনার পরও বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের। ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ব্যবস্থায় বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন বাইডেন। ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের প্রয়োজন হলেও তিনি ৩০৬টি পেয়েছেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। এছাড়া পপুলার ভোটেও এগিয়ে রয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান ৫৯ লাখ। শুক্রবার আবারও ট্রাম্প নিজেকে জয়ী দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি জিতেছি। ভোটে জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ট্রাম্প শিবির। তবে তারা কোন প্রমাণ হাজির করেননি। ট্রাম্পের প্রেস সচিব কাইলেহ ম্যাকেনানি মিডিয়া ও ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা করেছেন। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। অভিযোগ করেন, এরাই চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিজয়কে অবৈধ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। মিশিগানও মুখ ফেরালো ॥ পুনরায় ভোট গণনা করে শুক্রবারই বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিয়েছিল জর্জিয়া। এবার মিশিগানও জানিয়ে দিল, পুনর্গণনার পথে হাঁটছে না তারা। যেজন্য জয়ের আশায় বসে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প বড়সড় ধাক্কা খেলেন। মিশিগানকে আশ্রয় করে নিজের ‘জয়কে যখন প্রতিষ্ঠিত করার’ শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প ঠিক সেই সময় তারই দলের নেতাদের কাছ থেকে ভোট আবার গণনা না হওয়ার দুঃসংবাদটা আসলো। মিশিগানের রিপাবলিকান প্রতিনিধিরা পরোক্ষভাবে বাইডেনকেই জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন। সঙ্গে এই বার্তাও দিলেন যে, পুনরায় ভোটগণনার পথে হাঁটতে রাজি নন তারা। নির্বাচনের ফল আসার পর থেকেই ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, কারচুপি করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন বাইডেন। ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলে কয়েকটি মামলাও করেন। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ধোপে টেকেনি। এতকিছুর পরও নাছোড়বান্দা ট্রাম্প নিজের জয়কে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টার কমতি রাখেননি। ভোটের ফল আসার পর থেকে প্রমাণ ছাড়াই যেভাবে বলছিলেন, শুক্রবার আবারও সেই দাবি করেন। নির্বাচন সংক্রান্ত কয়েকটি মামলায় হেরে কিছুটা চাপে পড়েন ট্রাম্প। তখন তিনি নাকি তার দলের নেতাদের বোঝাতে শুরু করেন যে বাইডেনের জয়কে তারা যেন কোনভাবেই স্বীকৃতি না দেন। পেনসিলভানিয়ার নেতাদের সঙ্গেও ট্রাম্প বৈঠকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। জর্জিয়ায় পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ ট্রাম্প অঙ্গরাজ্যটির ভোট পুনর্গণনাকে ভুয়া বলে মন্তব্য করলেও মিশিগান নিয়ে এখনও কিছু বলেননি। পরমাণু সমঝোতায় ফেরার পথ কঠিন করেছেন ট্রাম্প ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য পরমাণু সমঝোতায় ফেরার পথ কঠিন করে তুলেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদ ফ্রাঙ্ক এন. ভন হাইপেল এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক ফ্রাঙ্ক এন. ভন হাইপেল শুক্রবার ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। গত ৩ নবেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বাইডেন বিজয়ী হন। এরপর নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ২০১৮ সালে পরমাণু সমঝোতা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ট্রাম্প ইরানের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছেন। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা তারই অংশ। এসব নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাইপেল বলেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতায় যেন বাইডেন আবার যোগ না দিতে পারেন সেজন্য এই পথ কঠিন করে তুলতেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বাইডেন এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে গেলেই রিপাবলিকানরা তার বিরুদ্ধে ইরানের প্রতি পক্ষপাতমূলক অন্ধ সমর্থনের অভিযোগ আনবেন। অধ্যাপক হাইপেল বলেন, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাইডেন কতবার কংগ্রেসে ভোটাভুটি করবেন? ইরানের গরিব-দুঃখীদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করতে আলাদা একটি ফাউন্ডেশন রয়েছে যা সরাসরি সর্বোচ্চ নেতার দফতর থেকে পরিচালিত হয়। ট্রাম্প প্রশাসন সর্বশেষ ওই তহবিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া ফাউন্ডেশনের প্রধান এবং আরও কয়েকজন ব্যক্তির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের গরিব-দুঃখী লোকজন রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
×