ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যথাযোগ্য মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০২০

যথাযোগ্য মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে নানা কর্মসূচী পালন হয়েছে। এসব এলাকায় অবস্থিত মসজিদগুলোতে দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটিকে পালন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁদের সামরিক সচিবগণ শনিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তিন বাহিনী প্রধানগণ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব), তিন বাহিনী প্রধান ও প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। বিদ্যমান বৈশ্বিক মহামারীর (কোভিড-১৯) কারণে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সদস্যদের ২০১৯-২০২০ সালের শান্তিকালীন পদক প্রদান অনুষ্ঠান এবং সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাহিনীত্রয় এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদানকৃত উপহার সামগ্রী বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও অন্যান্য নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা-উত্তরাধিকারীদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। ‘শান্তিকালীন পদক’ সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে বাহিনী প্রধানগণ সুবিধাজনক সময়ে প্রদান করবেন। তবে নৌবাহিনীর শান্তিকালীন পদক দেয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে তিন বাহিনী প্রধান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব), তিন বাহিনী প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। তিন বাহিনীর প্রধান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়, বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতাসহ জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগত দক্ষতা, সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবসে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার নেতৃত্বে আমরা দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। তিনি সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে যাঁরা মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময় দেশ ও দেশের বাইরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধাহত সদস্য ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ নবেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের এই দিনে তিন বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে যা আমাদের বিজয় অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ও বীরত্বগাথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত থেকে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন। মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে। এ কর্মপরিকল্পনা নিঃসন্দেহে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, দক্ষ ও গতিশীল করবে। যে কোন বাহিনীর উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো নেতৃত্বের প্রতি গভীর আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, পেশাগত দক্ষতা এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন এই প্রত্যাশা করি। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং বাহিনীসমূহের সকল সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের এ খবর দিয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০ উপলক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারী টেলিভিশন এবং রেডিওতে একযোগে প্রচার করা হয়েছে। আইএসপিআরের পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক সাইদা তাপসী রাবেয়া লোপা জানিয়েছেন, বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তিকালীন পদক পেল নৌবাহিনীর ৪০ সদস্য। ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০’ উপলক্ষে শান্তিকালীন সময়ে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪০ কর্মকর্তা ও নাবিককে শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন নৌবাহিনী পদক (এনবিপি), পাঁচজন অসামান্য সেবা পদক (ওএসপি), পাঁচজন বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি), ৭ জন নৌ গৌরব পদক (এনজিপি), ১০ জন নৌ উৎকর্ষ পদক (এনইউপি) এবং ১০ জন নৌ পারদর্শিতা পদক (এনপিপি) অর্জন করেন। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল শাহীন ইকবাল তিন কর্মকর্তাকে নৌবাহিনী পদক (এনবিপি) পরিয়ে দেন। এরা হলেন- ভাইস এডমিরাল এম আখতার হাবীব (অব), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএমইউ) ভিসি রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ খালেদ ইকবাল এবং সহকারী নৌ প্রধান অপারেশান্স রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ আবু আশরাফ। এছাড়া নৌপ্রধান চারজনকে অসামান্য সেবা পদক, দু’জনকে বিশিষ্ট সেবা পদক, ৪ জনকে নৌ গৌরব পদক, দু’জনকে নৌ উৎকর্ষ পদক এবং একজনকে নৌ পারদর্শিতা পদক পরিয়ে দেন। শনিবার নৌসদর দফতরে জুপিটার হলে শান্তিকালীন এ পদক প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নৌসদরের অন্যান্য পিএসও এবং উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। পদকপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তা ও নাবিকদের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ অঞ্চলের স্ব-স্ব নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পদক প্রদান করা হয়। এদিকে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজিতে (বাউয়েট) যথাযোগ্য মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানগণ, শিক্ষকমণ্ডলী ও কর্মকর্তারা।
×