ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১৫ নভেম্বর ২০২০

দারিদ্র্য ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই দেশ আজ দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১১ বছর ধরে আমাদের দেশ গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। খবর বাংলানিউজের। আগামী পাঁচ বছরে আরও পাঁচ শতাংশ দারিদ্র্যসীমা হ্রাস পাবে। অর্থনৈতিক কূটনীতির সফলতার কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে। যেখানে অন্ন-বস্ত্র বাসস্থানের জন্য কোন হাহাকার থাকবে না। জিডিপিতে যে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে তাতে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যসীমা তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। শনিবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাটোর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। এর আগে তিনি ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবন ও রাজবাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক কূটনীতি নিয়ে কাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে গিয়ে নতুন নতুন দেশে মানবসম্পদ রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে। রফতানি বাণিজ্যেও এসেছে বৈচিত্র্য। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীসহ নতুন নতুন পণ্য রফতানি করছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ তার জিডিপি ৮ দশমিক ২ এ রাখতে সক্ষম হয়েছে। যা অনেক দেশের কাছেই বিস্ময়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব- এই পররাষ্ট্র নীতিতে পথ চলছে বাংলাদেশ। সবার সঙ্গে বৈরিতা পরিহার করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের লক্ষ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে অর্থনৈতিক কূটনীতির সুফল অর্জন করা। করোনাকালীন স্থবির সময়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ লাখ পিপি পাঠানো হয়েছে। ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতির সুফল পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে- দেশের মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং দক্ষ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বের নতুন নতুন দেশে কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, দেশের অপার সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের সহজলভ্যতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্র ব্রদ্ধি করা, দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অসামান্য অবদানকে সম্মান দিতে বিদেশে আমাদের মিশনগুলোতে পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রযুক্তি নির্ভর সেবার পরিধি দ্রুত ও সহজ করা হচ্ছে। মুজিববর্ষ-২০২০ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত-২০২১কে কেন্দ্র করে বিশ্বের কাছে অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে তুলে ধরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের সর্বাধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনেও আমরা অগ্রগামী। ইতোমধ্যে গত ১১ বছরে দেশের দারিদ্র্যসীমা অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও পাঁচ শতাংশ হ্রাস পাবে। পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ উন্নয়নের পথ পরিক্রমায় ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর চির কাক্সিক্ষত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করে। যুদ্ধ নয়, সীমান্ত হত্যা, পানি সমস্যাসহ অনেক অমীমাংসিত বিষয় বাংলাদেশ ডায়ালগের মাধ্যমে সমাধান করেছে। নরেন্দ্র মোদি-শেখ হাসিনা যেভাবে সমস্যার সমাধান করেছে অন্য কোথাও তার নজির পাওয়া যাবে না। মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম ও নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অতিরিক্ত সচিব মোঃ শামসুল হক, মোঃ সাব্বির আহমদ চৌধুরী ও সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এফ এম বোরহান উদ্দিন, খন্দকার মোঃ তালহা, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ তারিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ ও মেহেদী হাসান প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ। সভা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। করোনার অজুহাতে আলোচনা পেছাল মিয়ানমার ॥ করোনা ও নির্বাচনের অজুহাতে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা মিয়ানমার পিছিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তবে ফের আলোচনা শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খবর বাংলানিউজের। ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার দীর্ঘদিন এই অবস্থায় আছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধের কথা চিন্তা করিনি। আলোচনার দ্বারা সমস্যার সমাধান না হয়ে উপায় নেই। সম্প্রতি তারা করোনা ও তাদের নির্বাচনের অজুহাতে আলোচনা পিছিয়েছে। তবে আমরা তাদের কথায় বিশ্বাস করি। আমরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য দেন। এর আগে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী সেলিনা মোমেন, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মোঃ জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক একে এম মোস্তাফিজুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী, শিক্ষক সমিতির কর্মকর্তা, কার্যনির্বাহী সদস্য, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকেল তিনটার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ক্যাম্পাসে পৌঁছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করেন। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সমাধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি স্মৃতিফলকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, বিশ্ববিদ্যালয় আর্কাইভস, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল, নবনির্মিত শেখ রাসেল মডেল স্কুল পরিদর্শন করেন তিনি।
×