ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অপচিকিৎসা- তিন হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৩০ অক্টোবর ২০২০

অপচিকিৎসা- তিন হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে একটি চক্র রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরে তিনটি হাসপাতালে নিয়ে আসত। এসব হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা। ফ্লোরে রক্তমাখা কাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এমনকি রোগীর অস্ত্রোপচার করতেন ওয়ার্ডবয়। আরেক হাসপাতালে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে তিনি একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রোগীদের ভাঙ্গা হাত-পায়ের এক্সরে দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিতেন। এরকম অপচিকিৎসাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে এই তিনটি বেসরকারী হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুটি হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। বুধবার রাতভর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় তিনটি হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সহায়তা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও র‌্যাব-২। র‌্যাব জানায়, বুধবার রাত পৌনে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতাল, নূরজাহান অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাসপাতাল তিনটির মধ্যে মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতাল ও নূরজাহান অর্থোপেডিক হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। এ সময় নূরজাহান অর্থোপেডিক হাসপাতালের ওটি বয় জাহাঙ্গীর হোসেনকে দুই বছর এবং হাসপাতালের পরিচালক ও দালাল নেতা বাবুল হোসেনকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতালের মালিক নূরুন নবীকে একবছর, ওটিবয় আনোয়ার হোসেনকে ছয়মাস ও আবদুর রশীদকে ছয়মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দ-প্রাপ্ত ছয় ব্যক্তিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, নূরজাহান অর্থোপেডিক হাসপাতালের ওটিবয় জাহাঙ্গীর হোসেন পঞ্চম শ্রেণী পাস। কিন্তু তিনি রোগীর অস্ত্রোপচার করছিলেন। এই হাসপাতালসহ এলাকার অন্য হাসপাতালে রোগী সরবরাহ করতেন দালাল নেতা বাবুল হোসেন। হাসপাতালে নোংরা পরিবেশ ও ফ্লোরে রক্তমাখা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের দুজনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়েছে। পলাশ কুমার বসু জানান, ক্রিসেন্ট হাসপাতালের মালিক আবুল হোসেন মাধ্যমিক পাস। অথচ তিনি একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করতেন। রোগীদের ভাঙ্গা হাত-পায়ের এক্স-রে দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিতেন। এমনকি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও চার মাস আগে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হোসেনকে একবছরের কারাদণ্ড ও হাসপাতালটিকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি জানান, অভিযানে মক্কা মদিনা হাসপাতালে দেখা যায়, অস্ত্রোপচার কক্ষের (ওটি) বয় দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এর দায়ে মালিক নূরুন নবী, ওটিবয় আনোয়ার হোসেন ও আবদুর রশীদকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, বেসরকারী হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে আছে নামসর্বস্ব ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ছাড়া জটিল অস্ত্রোপচার, অপচিকিৎসায় রোগীদের মারাত্মক ক্ষতিসহ প্রাণহানি, রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিল আদায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রভৃতি। এ ছাড়া জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের ভাগিয়ে একটি দালাল চক্র বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যেত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন অভিযোগ পেয়ে ওই হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানো হয়। রাজধানীর শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর থানার বাবর রোডে হাসপাতালে কম খরচে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাসে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনে দালাল সিন্ডিকেট। তারা রোগী আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারী হাসপাতাল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া। আনন্দ কনফেকশনারিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ॥ পুরান ঢাকার সাত রওজা এলাকায় আবুল হাসনাত রোডে অবস্থিত বেকারি ‘আনন্দ কনফেকশনারি’তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলমের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়েছে। আনন্দ কনফেকশনারিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানকালে মোড়কীকরণ, চিহ্নিতকরণ ও লেবেল সংযোজন ব্যতীত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের কারণে নিরাপদ খাদ্যআইন, ২০১৩ -এর বিধান অনুযায়ী বেকারি কর্তৃপক্ষকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এ সময়, বেকারি কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে খাদ্যপণ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা সংবলিত পোস্টার প্রদান করা হয়। অভিযানকালে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোঃ মিজানুর রহমান সিকদার এবং পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×