ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার জন্য পেছাবে না

মেয়াদ শেষ হলেই পৌরসভার নির্বাচন

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২৯ অক্টোবর ২০২০

মেয়াদ শেষ হলেই পৌরসভার নির্বাচন

শাহীন রহমান ॥ করোনার কারণে গত মার্চ থেকে দেশে সব ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠান স্থগিত ছিল। মহামারী থাকলেও করোনা ভীতি কেটেছে অনেকটাই। করোনার কারণে এখন থেকে কোন সাধারণ নির্বাচন আর পেছানো হচ্ছে না। পৌরসভার নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ নির্বাচনের ধারা শুরু করতে চায় ইসি। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী বছরের প্রথম দিকেই যেসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথাসময়ে এসব পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ইতোমধ্যে অনেক জনপ্রতিনিধি করোনার অজুহাত দেখিয়ে পৌরসভা ভোট না করতে ইসিতে আবেদন, তদ্বির ছাড়াও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু মঙ্গলবার ইসির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছে করোনার কারণে পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন পেছানো হবে না। বিশেষ করে আগামী বছরের প্রথম দিকে যেসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেসব পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে দেশের ৩২৪টি পৌরসভা রয়েছে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। ওই নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মাসেই স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে (প্রথম সভা, শপথ গ্রহণের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের সময় ইত্যাদি) পৌরসভার সর্বশেষ অবস্থা জানতে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত তালিকাও কমিশনের কাছে এসেছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। এই তালিকা ধরেই পৌরসভায় যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, সামনে পৌর ভোটের জন্য প্রস্তুতি গোছানোর মধ্যে অনেক জনপ্রতিনিধি করোনার কারণে ভোট না করার জন্য আবেদন, তদ্বির ও যোগাযোগ করছে। সব বিবেচনা করেই যথাসময়ে পৌর নির্বাচনে ইসির পদক্ষেপ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মোঃ আশাদুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২১ সালের প্রথম দিকে অনেক পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। এসব পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। করোনা মহামারীর কারণে পৌরসভা নির্বাচন পেছানোর কোন সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী পৌরসভাগুলোর সাধারণ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। করোনা ভীতি কেটে যাওয়ার পর গত জুলাই থেকেই বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচন সম্পন্ন করেছে ইসি। এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন হয়েছে। আগামী ১২ নবেম্বর ঢাকা ও সিরাজগঞ্জের দুটি আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ রয়েছে। এর মধ্যে তারা স্থানীয় সরকার পরিষদের আড়াই শ’র অধিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে দুএকটি স্থানীয় সরকার পরিষদের সাধারণ নির্বাচনও সম্পন্ন হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই যথা সময়ে সাধারণ নির্বাচনের ধারায় ফিরতে চায় ইসি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দেশের অধিকাংশ পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে থেকে তারা পৌরসভা নির্বাচন্ন সম্পন্ন করতে চায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিটির জন্য আলাদা নির্বাচনী আইন রয়েছে। সম্প্রতি ইসির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য অভিন্ন আইন প্রণয়নের। তবে জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় বিদ্যামান পৌরসভা নির্বাচন ২০০৯ অনুযায়ী তারা এই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ২০(২) ধারা অনুযায়ী পৌরসভা প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে এই আইন বলবৎ হইবার পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে এবং (খ) পৌরসভার মেয়াদ শেষ হইবার ক্ষেত্রে, উত্ত মেয়াদ শেষ হইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সময় ঘনিয়ে আসায় পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্ততি তারা সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন উপযোগী সব পৌরসভার তথ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ইসির নিজস্ব উদ্যোগে সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ২০১৫ সালে ৩০ ডিসেম্বর দেশে একযোগে ২৩৪টি পৌরসভার ভোট গ্রহণ করা হয়। দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন পাস হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ওই বছরে দলীয় প্রতীকে পৌরসভায় ভোট নেয়া হয়। এবার দলীয় প্রতীকেই পৌরসভায় ভোট হবে। ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই কেবল দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। এর বাইরে অন্য প্রার্থীরা স্বতন্ত্র বলে গণ্য হবেন। তবে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। এদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগ এরই মধ্যে দেশের নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার তথ্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে জানিয়েছে। সে তথ্য অনুসারে দেশের আগামী মার্চেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৬১টির। এর মধ্যে ২৬টি পৌরসভায় মামলা ও সীমানা পরিবর্তনসংক্রান্ত জটিলতায় নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। যথাসময়ে বা মার্চের আগে নির্বাচন করতে হবে ২৩৫টি পৌরসভার। এ ছাড়া আগামী এপ্রিল বা তার পরে মেয়াদ শেষ হবে ৬৮টি পৌরসভার। এর মধ্যে আইনগত জটিলতায় ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা রয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ইসিকে জানানো হয়েছে। এ অনুযায়ী কমিশনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যথা সময়েই পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ ইসির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে।
×