ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ বৃদ্ধি

প্রণোদনায় প্রবাসী আয়ের বৈধ প্রবাহ বেড়েছে

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২৯ অক্টোবর ২০২০

প্রণোদনায় প্রবাসী আয়ের বৈধ প্রবাহ বেড়েছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দুই শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণায় প্রবাসী আয়ের বৈধ প্রবাহ অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার এটি অন্যতম কারণ। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যে ইতিবাচক পরিবেশে বেড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়। এছাড়া রফতানি কমার পাশাপাশি কমেছে সরকারী ও বেসরকারীভাবে আমদানি। কোভিডে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাকালে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ কমলেও এই খাতে বৈদেশিক সাহায্যের অতিরিক্ত একটি উৎস তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধিতে এটাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গত আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ছিল ৩৯শ’ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে চলতি বছর মে পর্যন্ত সময়জুড়ে মজুদের পরিমাণ ছিল ৩২শ’ থেকে ৩৩শ’ কোটি ডলার। তারপর থেকেই রিজার্ভ বাড়তে থাকে এবং আগস্টে ৬শ’ কোটি মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯শ’ কোটিতে উন্নীত হয়। ক্রমবর্ধমান রিজার্ভ থেকে এবার উন্নয়নমূলক খাতে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশের সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী এবং বিনিয়োগবান্ধব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে মুদ্রা-রিজার্ভ অলস ফেলে রেখে কোন লাভ হয় না। তাই একে কাজে লাগানোটাই ভাল উপায়। বাংলাদেশে উন্নয়ন খাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের অর্থ ব্যবহারের উদ্যোগ এটাই প্রথম। অনেক দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত উন্নয়ন খাতে দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের ব্যবহার করছে। সহযোগী স্থাপনা এবং বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার ফলে, ব্যাপক সাফল্য পায় আবুধাবির পর্যটন অর্থনীতির উদ্যোগ। বিশ্বের শীর্ষ বৈদেশিক মজুদের মধ্যে অন্যতম আমিরাত। অন্যান্য দেশও এই সাফল্যে উৎসাহী হয়ে রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করছে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে তা নির্ধারণে সরকারকে সতর্ক এবং কৌশলী হতে হবে বলে মনে করছেন বিষেজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাছাই করা কিছু উন্নয়ন খাতে এই বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতশক্তি উৎপাদন খাতে অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই খাতের সিংহভাগ প্রকল্প বিদেশী ঋণ সহায়তায় করা হয়। সরকার এসব ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করে আসছে এবং ঋণ পরিশোধে কখনও ব্যর্থ হয়নি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র ট্যারিফের দিক থেকে সবচেয়ে সস্তা। এগুলো বেজ লোড প্ল্যান্ট নামে পরিচিত। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দ্রুত এবং ধারাবাহিক শিল্পোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের জন্য দরকার কয়লা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা। দেশের বিদ্যুত শক্তি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এই পরিকল্পনার আওতায় শক্তি উৎপাদনে কয়লার পাশপাশি এলএনজি, তরল জ্বালানি এবং গ্যাস মিশ্রণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নানা শিল্পাঞ্চলে পরিকল্পিত কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণে দরকার জাপান, চীন এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা। কম খরচে উৎপাদন ছাড়া সস্তা বিদ্যুতের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে। কম খরচে বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লাই সবচেয়ে উপযোগী। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার যে বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ব্যবসায়ীদের নিঃসন্দেহে উৎসাহিত করবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঋণদাতারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও বিনিয়োগের নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণের ওপর জোর দিয়েছেন।
×