ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি

ভারত-বাংলাদেশ তেল পাইপলাইন নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২৮ অক্টোবর ২০২০

ভারত-বাংলাদেশ তেল পাইপলাইন নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছে না

রশিদ মামুন ॥ জমি অধিগ্রহণের মধ্যেই আটকে আছে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের কাজ। ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ভারত এবং বাংলাদেশ অংশে পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে জমি অধিগ্রহণের জটিলতা না কাটার কারণে পাইপলাইনটির নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা কঠিন হবে। প্রকল্পের আওতায় অসমের নুমালিগড় শোধনাগার থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করবে সরকার। শিলিগুড়ির মার্কেটিং টার্মিনাল (এসএমটি) থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন নির্মিত হবে। এর মধ্যে ভারতের অংশ পাঁচ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অংশ ১২৫ কিলোমিটার। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন রয়েছে। তবে এখনও জ্বালানি তেল পরিবহনের কোন পাইপলাইন নেই। পাইপলাইনটি নির্মাণ হলে দক্ষিণ এশিয়াতেই জ¦ালানি ভাগাভাগিতে নতুন নজির স্থাপন হবে। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সঙ্কটের কারণে উত্তরবঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় নিয়মিত খনন করেও নৌপথ অনেক সময় সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য উত্তরাঞ্চলের কৃষি সেচে তেল সরবরাহ এবং বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানি সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে পড়ে। এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ভারত থেকে জ¦ালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য ভারতের নুমালিগড় থেকে জ¦ালানি তেল আমদানি ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে। তবে জ্বালানি তেল পরিবহন সাশ্রয়ী করার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পটির কাজের সময় এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) প্রকল্পর অগ্রগতি বিষয়ে সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখলের কাজ চলমান রযেছে। সৈয়দপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের ডিজেল সরবরাহের জন্য পিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের জন্য খসড়া প্রণয়ন করে গত ২৮ আগস্ট পিডিবিতে পাঠানো হয়েছে। এলজিডি, সড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ সহ সকল স্টেকহোল্ডার হতে অনাপত্তি পাওয়া গেছে। তিস্তা ক্যানেল ক্রসিং এর অনাপত্তিপত্র পাওয়ার জন্য ৩ আগস্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি এমওইউ এর খসড়া পাঠানো হয়েছে। বিপিসির একজন কর্মকর্তা জানান, জমি অধিগ্রহণ করাই তাদের জন্য সব থেকে জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, পাইপলাইনটি কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে যাবে। এরমধ্যে আবার চাবাগানও পড়েছে। সেখানে চাবাগানে জৈব পদ্ধতিতে চা চাষ করা হয়। তারও পাইপলাইনটি করার বিষয়ে কিছুটা অনাপত্তি দেখিয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পাইপলাইনটির কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পরার কারণে। বিপিসি সূত্র বলছে প্রকল্পের ট্যাপ অব পয়েন্ট ভারতের সানাপুকুর চিরিরবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিদ্যুত কেন্দ্র পর্যন্ত সাত কিলোমিটার আট ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সংগ্রহ ও স্থাপন করা। ছয় হাজার ৭৬১ মেট্রিকটন টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি ট্যাঙ্ক নির্মাণের জন্য ১৮৭ দশমিক ৩৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ১২৬ দশমিক ১৪ একর ভূমি হুকুম দখল করা করা প্রয়োজন। এছাড়া সৈয়দপুর বিদ্যুত কেন্দ্রে তেল সরবরাহ করার জন্য ১২ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং আট একর ভূমি হুকুম দখল করতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ জন্য ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি ২৩ টাকা। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা এক বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন নৌপথে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও কুড়িগ্রামের চিলমারী, রেলপথে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো, রংপুর ডিপো, নাটোর, রাজশাহী জেলার পবার হরিয়ানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। ফলে সিস্টেম লস বেড়ে যায়। আর সিস্টেম লস কমাতেই এ উদ্যোগ নেয় বিপিসি। তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় প্রকল্পটি আটকে আছে। এখন দেশের জ¦ালানি তেল আমদানি করা হয় চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গে এই তেল পরিবহন ব্যয় এবং সময় সাপেক্ষ বিষয় বলে মনে করা হয়।
×