ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অধিকাংশ নেতাকর্মী দলবিমুখ

বেহাল দশা কাটাতে পারছে না বিএনপি

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ অক্টোবর ২০২০

বেহাল দশা কাটাতে পারছে না বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ কোনভাবেই বেহাল দশা কাটাতে পারছে না বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দীর্ঘ পৌনে তিন বছর দলীয় কর্মকা- থেকে দূরে থাকায় অন্য অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই এখন দলে নিষ্ক্রিয়। আর কেন্দ্রীয় নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মীও দল বিমুখ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার উত্তরণে দলীয় হাইকমান্ডের কোন কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা নেই। সূত্র মতে, দলীয় কর্মকাণ্ডে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ক’জন সিনিয়র নেতা দলের বেহাল দশা কাটাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন চেষ্টাই সফল হয়নি। বরং এ চেষ্টার মধ্যেও অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকায় বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান দিন দিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর এ কারণে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিএনপির ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির মধ্যে এখন মাত্র ক’জন নেতা ছাড়া বাকি সব নেতাই দলে নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সর্বস্তরে কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় এক সময়ের সক্রিয় নেতারাও এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলটির ভবিষ্যত পরিণতি কি হবে তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না সাধারণ নেতাকর্মীরা। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ অবস্থার অবসান ঘটাতে না পারলে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান ক্রমান্বয়ে আরও শোচনীয় হয়ে পড়ার সম্বাবনা রয়েছে। এ বছর মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী-এ ২ জন প্রভাবশালী নেতা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সক্রিয় থাকলেও অন্য নেতাদের কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। আর এ দু’জন সক্রিয় থাকলেও পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় অনেক সময়ই দলীয় সাধারণ নেতাকর্মীরা বিব্রত হয়েছে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার কথা চিন্তা করে প্রকাশ্যে কেউ কোন কছু বলছেন না। সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে চান। আর তিনি লন্ডনে চলে গেলে দলের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে। কারণ, তখন আর কেউ কাউকে মানতে চাইবে না। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এত দূরে থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। করোনাকালে প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে ভার্চুয়াল সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মাঝেমধ্যে দলীয় বিভিন্ন ইউনিট কমিটি আয়োজিত অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকার বাইরে নিজ নিজ এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উত্তরার বাসা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি মাঝেমাঝে বাইরের বিভিন্ন কর্মসূচীতেও অংশ নিতেন। তবে ইদানীং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীসহ দলের আরও ক’জন নেতা ঘরে-বাইরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হলেও অন্য নেতারা এখনও নিষ্ক্রিয়ই রয়ে গেছেন। বার বার ডেকেও এসব নেতাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করা যাচ্ছে না বলে জানা যায়। এদিকে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে খুব একটা পাত্তা দেন না সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তারেক রহমানের নির্দেশে প্রায়ই তিনি অন্য কাউকে কিছু না জানিয়েই দলীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা প্রচার করেন। আবার কখনও কখনও তারেক রহমানকে কৌশলে বুঝিয়ে রাজি করে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেন। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও তারেক রহমান নাখোশ হতে পারেন ভেবে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন না। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ নিয়ে কাউকে কিছু বলেন না। রুহুল কবির রিজভীর কর্মকাণ্ড নিয়ে মনকষাকষির কারণে দলের মহাসচিবের পদে থাকার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আর এ খবর শুনে রুহুল কবির রিজভী তার ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে দলে মহাসচিব পরিবর্তনের গুজব রটিয়ে দেন। যদিও দলের হাইকমান্ড থেকে আভাস দেয়া হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে মহাসচিব পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। জাতীয় কাউন্সিলের পর পরিস্থিতি সাপেক্ষে মহাসচিব পরিবর্তনের কথা ভাবছে বিএনপি হাইকমান্ড। জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা দলের অন্যান্য নেতাদের জানান। কখনও কখনও দলীয় কোন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তবে দলে ক্লিন ইমেজের অধিকারী হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কখনও দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে কোন বিবাদে জড়াতে চান না। তাই তাকে অবহিত না করেও যদি কোন নেতা দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রচার করেন তাহলে তিনি কাউকে কিছু বলেন না। তবে তিনি তার নিজের মতো করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন। কোথাও কোন সমস্যা হলে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগেই বিএনপির কর্মকাণ্ড ছিল খুবই সীমিত। আর করোনা পরিস্থিতির পর থেকেই বিএনপির সার্বিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা হলেও অক্টোবর থেকে আবার চালু করা হয়েছে। কথা ছিল অক্টোবর থেকে পুরোদমে সর্বস্তরে দল পুনর্গঠনসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড জোরদার করবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তা এখনও শুরু করতে পারছে না দলের সিনিয়র নেতারা। এ নিয়ে দলের কিছু নেতা ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমানসহ দলের সিংহভাগ কেন্দ্রীয় নেতা ঘর থেকে বের হওয়া থেকে বিরত থাকেন। শুধু তাই নয় তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করাও বন্ধ করে দেন। তবে ইদানীং মাঝে মাঝে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা গেলেও অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই এখনও ঘর হতে বের হচ্ছেন না।
×