ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে ॥ চীনকে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৪ অক্টোবর ২০২০

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে ॥ চীনকে মিয়ানমার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে ফোনালাপে আলোচনা করেছেন। এক ঘণ্টার ওই ফোনালাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য চীনকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ৮ নবেম্বরের নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে বলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর ওয়েবসাইটের। এদিকে একই সময়ে চীনকে ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে মানবিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান করে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘ। এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অংশগ্রহণের কথা থাকলেও পরে তার পরিবর্তে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। এর আগে চীনের উদ্যোগে বেইজিং ও নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ত্রিপক্ষীয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি উন্নতি হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার উদ্যোগ নেবে বলে তারা চীনকে জানিয়েছে। মিয়ানমারের নির্বাচনের পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে চীন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে এ আশ্বাস দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমারের নির্বাচনের পর প্রথমত রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হবে। পাঁচ বছর পর ৮ নবেম্বর মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ভোট থেকে বাদ রাখা, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ এবং সমালোচকদের গ্রেফতার অব্যাহত থাকায় এ নির্বাচনকে মৌলিকভাবে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টেলিফোন আলাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঢাকায় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় প্রস্তুতিমূলক বৈঠক দ্রুত শুরু করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীনকে মিয়ানমার জানিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ‘দ্রুত আলোচনা শুরু করবে’। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। গতবছর দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়া হবে বলে সম্প্রতি মিয়ানমার আবারও চীনকে ‘আশ্বস্ত করেছে’। ‘চীন রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হলে রোহিঙ্গাদের যাতে ফেরত নেয়া যায়, সে লক্ষ্যে মিয়ানমার কাজ করবে বলে চীনকে তারা জানিয়েছে।’ চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশ অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাবে বলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান ওয়াং ই। পিরোজপুরে চীনের নাগরিক হত্যার বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার দ্রুত বিচারের পাশাপাশি চীনের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের ওপর চীন সরকার আস্থাশীল। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ওই ঘটনায় প্রধান আসামিসহ দু’জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং দ্রুত দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে যারা করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে এসে আটকা পড়েছেন, তাদের ভিসা নবায়নের বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান মোমেন। ওয়াং ই-কে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশী শিক্ষার্থীদের চীনে প্রবেশের বিষয়ে সে দেশের সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বাংলাদেশীদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হবে।
×