ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জবাবদিহিতা না থাকার কথা স্বীকার

গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ঘাটতি চিহ্নিত করার নির্দেশ

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২০ অক্টোবর ২০২০

গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ঘাটতি চিহ্নিত করার নির্দেশ

রশিদ মামুন ॥ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ঘাটতি চিহ্নিত করে অবিলম্বে জ্বালানি বিভাগে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে এই আদেশ দেয়া হয়। ওই বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে পেট্রোবাংলার তরফ থেকে বলা হয় শুধু তিতাস নয় অন্য বিতরণ কোম্পানিরও ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে জবাবদিহিতার অভাবের কথাও অভ্যন্তরীণ ওই বৈঠকে আলোচিত হয়। নারায়ণগঞ্জ ট্র্যাজিডির তদন্ত প্রতিবেদনে নিজেদের দায় অস্বীকার করলেও জ্বালানি বিভাগের বৈঠকে নিজেদের দায় থাকার কথাই স্বীকার করে নিল জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান গত ১৩ অক্টোবর বৈঠকের ওই কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন। বৈঠকটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তদন্ত করে এই ঘটনার সব দায় চাপিয়ে দেয় মসজিদ কমিটির ওপর। এরপর সিআইডি তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কয়েক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। তবে সারাদেশে প্রকৌশলীদের আন্দোলনের হুমকিতে জ¦ালানি বিভাগের তরফ থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনা হয়। শুধু ছাড়িয়েই আনা হয়নি এই ঘটনায় তিতাসের যেসব কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল তাদের বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ এবং তিতাসের এই কর্মকা-ে মনে করা হয় কোন বিষয়েই তিতাসের কোন দায় নেই। তবে অভ্যন্তরীণ ওই বৈঠকে ঘাটতি এবং জবাবদিহিতা না থাকার কথা তারাই বলছেন। নারায়ণগঞ্জে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর বিশেষজ্ঞ এবং তিতাসের সাবেক কর্মকর্তারা জানান, তিতাসে একটি পরিদর্শন দল রয়েছে। ওই পরিদর্শন দলের কাজ প্রতি সাত দিন অন্তর পাইপ লাইনগুলো পর্যবেক্ষণ করা। পাইপ লাইনের ওপর কোন স্থাপনা তৈরি হলো কি না তা দেখা। তিতাসের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলে নারায়ণগঞ্জের মসজিদটি ১৯৯৬ সালে তিতাসের পাইপ লাইনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। তাহলে এই দীর্ঘ সময় তিতাস কেন তাদের পাইপ লাইনের কি অবস্থা তার কোন খোঁজ রাখল না। এজন্য সেই পরিদর্শন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উর্ধতনদের দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন। তবে তাদের কথায় জ¦ালানি বিভাগ এবং তিতাস কর্ণপাত করেনি। জ¦ালানি সচিবের ১৩ অক্টোবর সই করা বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোতে দেখা যায়, ওই বৈঠকে তিতাস নিয়ে আলোচনার শুরুতে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, শুধু তিতাস নয় অন্য বিতরণ কোম্পানির ভিজিল্যান্স এবং অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এই বিষয়গুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য তিনি আহ্বান জানান। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পর বৈঠকের সভাপতি জ¦ালানি সচিব এতে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিতাসকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ২২ দফা সুপারিশ করেছিল। এসব বিষয়ে একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেন তিনি। ওই বৈঠকে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোঃ আল মামুন বলেন, নারায়ণগঞ্জ দুর্ঘটনার পর তিনি বৈঠক করে সংশ্লিষ্টদের ২২ থেকে ২৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা যদি বাস্তবায়ন হতো তাহলে কোম্পানির কর্মীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো। তিতাসের এক মামুলি ড্রাইভারও শত কোটি টাকা মালিক। সবাই জানলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তিনি থেকে যান বহাল তবিয়তে। এই যখন একজন সাধারণ ড্রাইভারের অবস্থা তখন এখানের কর্মকর্তারা কি পরিমাণ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তা সহজেই বোঝা যায়। তিতাসকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে সংস্কারের জন্য দুদক সুপারিশও করেছে। একই সঙ্গে কিভাবে দুর্নীতি হয় কারা এসব দুর্নীতি করে তাও তুলে ধরে দুদক। কিন্তু এদের শাস্তি বলতে কর্মস্থল বদলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি তিতাস এবং জ¦ালানি বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি এবং অনিয়মের কোন বিষয় সামনে এলেই জবাবদিহিতা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সমালোচনা থেমে গেলে আবার আগের মতোই নিজেদের খেয়াল-খুশিতে চলার কারণে সব অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রীয় এসব গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে।
×