ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুধা সূচকেও সবার শেষে

ভারতের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৮ অক্টোবর ২০২০

ভারতের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিগত কয়েক বছরে ভারতের অর্থনীতি অনেকটাই এগিয়ে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারীর কারণে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে যেন চলতি সপ্তাহে ভারতের অর্থনীতি নিয়ে সব আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশের চেয়ে ২০২০ সালে ভারতের মাথাপিছু জাতীয় প্রবৃদ্ধি কম হতে পারে। এমন সংবাদে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ ভারত। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক আপডেট করার পর এ বিষয়ে টুইট করেছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। তিনি বলেছেন, ভারত এখন যে অবস্থানে আছে, তাতে তারা যদি চীনকে টেক্কা দিতে চায় তবে তাদের অবশ্যই আগে বাংলাদেশকে পরাজিত করতে হবে। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, যে কোন উদীয়মান অর্থনীতি ভাল করছে এটা সুখবর। কিন্তু এটা অবাক করে দেয়ার মতো খবর যে, ভারত এখন পিছিয়ে পড়ছে। পাঁচ বছর আগেও যাদের অর্থনীতি ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল তাদের জন্য এটা মোটেও ভাল খবর নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। নব্বই দশকে ভারতের অর্থনীতি উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই দেশটির স্বপ্ন ছিল চীনের দ্রুত বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা। এ প্রচেষ্টায় তিন দশকের চেষ্টার পর বাংলাদেশের চেয়ে ভারত পিছিয়ে পড়ছে। এতে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে। চীনের বিরুদ্ধে অর্থপূর্ণ একটি পাল্টা অবস্থান প্রত্যাশা করে পশ্চিমারা। কিন্তু সেই অংশীদারিত্বে এটা বলা হবে না যে, ভারত নিম্ন-মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা পড়বে। তুলনামূলক নিম্ন দক্ষতা আত্মবিশ্বাসের ক্ষতি করতে পারে। যে ছোট্ট দেশটিকে ১৯৭১ সালে স্বাধীন করতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ভারত, এখন ঘরের পেছনের সেই দেশটির (বাংলাদেশ) কাছে ক্ষমতার উচ্চাকাক্সক্ষী ভারত পরাজিত হচ্ছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের প্রভাব ক্ষয় পেতে পারে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই চলতি অর্থবছর মাথাপিছু জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এ তথ্য প্রকাশের পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের সবশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৯৭ মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। বিপরীতে চলতি অর্থবছর ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় অন্তত ১০ দশমিক ৩ শতাংশ কম। মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ছিল ভারত। কিন্তু ধারাবাহিক উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই ব্যবধান দ্রুত কমিয়ে এনেছে। কিন্তু কোথায় ভুল করেছে ভারত? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরে আসছে। অবশ্য এজন্য করোনাভাইরাস মহামারীকেই দায়ী করা হচ্ছে। জুনের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে নতুন সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। অন্যদিকে যে কোন দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ডের পর ভারতে কয়েকদিন ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি। এর মধ্যে কোভিড-১৯-এ মারা গেছে ৫৬০০-এর চেয়ে সামান্য কম। অন্যদিকে এই জনসংখ্যার তুলনায় ভারতে রয়েছে আটগুণ মানুষ। সেখানে মৃতের সংখ্যা বাংলাদেশের ২০ গুণ। আরও খারাপ বিষয় হলো, করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে লকডাউন জারির কারণে অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ ভাল করছে। এর কারণ হচ্ছে তারা তাদের কম দক্ষতাসম্পন্ন পণ্যের রফতানি বজায় রেখেছে। এই বিষয়টি গরিব দেশের কর্মবয়সী জনসংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। কিন্তু মৌলিকভাবে, উভয়েই চীনের কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। কম দক্ষতাসম্পন্ন পণ্যের উৎপাদনের মাধ্যমে বড় আধিপত্য বিস্তার করে, তার মাধ্যমে তারা উচ্চ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এখন ভারত যে অবস্থানে আছে তাতে তারা যদি চীনকে টেক্কা দিতে চায় তবে তাদের অবশ্যই আগে বাংলাদেশকে পরাজিত করতে হবে। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পণ্য ও সেবা রফতানি করে ভারত, যেমন কম্পিউটার সফটওয়্যার। কিন্তু বিশ্বের কারখানা হিসেবে পরিচিত চীন এখন নিচে থাকা অন্যদের সুযোগ করে দিচ্ছে। শুধু স্বাস্থ্যখাতে অথবা সুশিক্ষিত শ্রমের ওপরই নয়, তুলনামূলক সস্তার সুবিধা নিচ্ছে চীন। এসব ক্ষেত্রে ভারতের সুযোগ রয়েছে। ব্লুমবার্গের মতামত বিষয়ক পাতার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর কমপক্ষে ৮০ লাখ কর্মসংস্থানের জরুরী চ্যালেঞ্জের মুখে এটাও ভারতের করোনা পরবর্তী সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণগুলোর একটি। আনন্দবাজার পত্রিকার অপর এক খবরে বলা হয়েছে, চীন তো অনেক দূর, ক্ষুধা সূচকে পাকিস্তান-বাংলাদেশের থেকেও পিছিয়ে ভারত। পৃথিবীর ক্ষুধার রাজ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে দেশগুলো, সেই তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে ভারত। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকেও পিছিয়ে রয়েছে ভারত। ক্ষুধা মেটানোর নিরিখে তালিকার একেবারে ওপরের দিকে রয়েছে চীন। উল্লেখযোগ্যভাবে প্রথম ২০-এ উঠে এসেছে ব্রাজিল, চিলি, কিউবা, আর্জেটিনাসহ লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ। ক্ষুধা মেটানোর নিরিখে উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে আফ্রিকার তিনটি দেশ- চাঁদ, মাদাগাস্কার এবং তিমুর। শুক্রবার এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে ক্ষুধা মেটানোর নিরিখে ভারতের তুলনায় শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তান ভাল অবস্থানে রয়েছে। এ বছর মোট ১০৭টি দেশের ক্ষুধার সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ভারত রয়েছে ৯৪তম স্থানে। ২০১৯-এ ভারতের র্যাঙ্কিং ছিল ১০২। তালিকায় ৬৪তম স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ৭৩, বাংলাদেশ ৭৫, পাকিস্তান ৮৮তম স্থানে। অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুর উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের মতো কয়েকটি মাপকাঠিতে বিভিন্ন দেশকে বিচার করে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের রিপোর্ট বলছে, ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছেন।
×