ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, আশ্রিতরা বেপরোয়া

প্রকাশিত: ২২:২৬, ১৭ অক্টোবর ২০২০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, আশ্রিতরা বেপরোয়া

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারে বসবাসকালীন রোহিঙ্গারা ছিল রাখাইনদের পরাধীন জাতিগোষ্ঠী। তাদের কথায় আজীবন উঠবস করেছে রোহিঙ্গারা। সেখানে নেতৃত্ব বা স্বাধীনতার স্বাদ পেতে দেয়া হয়নি কখনও। রাখাইনদের অত্যাচারে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে এখানে নেতৃত্ব ও স্বাধীনতা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। সচেতন মহল জানান, নেতৃত্ব পেয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকার লোভ চলে এসেছে। সে জন্য ভাগবাটোয়ারার জন্য সংঘর্ষ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ক্যাম্প অভ্যন্তরে মাদককারবারি, দোকান ভাড়া তথা চাঁদা আদায়, ত্রাণের পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বার বার অশান্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা শিবির। এনজিওতে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের চাকরি ও ক্যাম্প এলাকায় দোকানপাট করতে দেয়াটা মারাত্মক ভুল হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সচেতন মহল। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রিত উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন-যাপন করতে দেয়া উচিত। তারা নগদ টাকা কামাই করতে পেরে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদিকে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের দুই নেতাকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি উভয় পক্ষের ক্যাডারদের। ইয়াবার বড় চালান ছিনতাই ও আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্যাডারদের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি ইয়াবা ডন চার রোহিঙ্গার দেড় লাখ পিস ইয়াবার চালান খোয়া যায় ক্যাম্পে। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা ও শালবন আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র লুট মামলার আসামি আবুল কালামকে দায়ী করে অপহরণ করে সন্ত্রাসী মুন্না গ্রুপের ক্যাডাররা। খবর পেয়ে মাস্টার আবুল কালাম ও মৌলবি আনাস বাহিনীর ক্যাডাররা মুন্নার দুই ভাইকে হত্যা ও মাস্টার মুন্নাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মাস্টার আবুল কালাম ২৬ আগস্ট থেকে নিখোঁজ হলে সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী মাস্টার মুন্নার দুই ভাই মাহমুদুল হক ও ফরিদকে আনাস বাহিনীর ক্যাডার এবং উত্তেজিত রোহিঙ্গারা কুপিয়ে হত্যা করেছে। একই দিনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে টেকনাফের পশ্চিম হ্নীলার নুর হোসেনের পুত্র মাইক্রো চালক নুরুল হুদাকে। ২৬ আগস্ট কুতুপালং আমতলী এলাকা দিয়ে বড় ধরনের ইয়াবার চালান নিয়ে আসছিল রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুন্না গ্রুপ। সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে চলাফেরা করত মুন্না। ইয়াবা ডন মুন্না কুতুপালং আনরেজিস্ট্রার্ড এলাকায় মারকাজ পাহাড়ে অবস্থান করলেও বর্তমানে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্যাম্প অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা দোকান থেকে মাসোয়ারা, ইয়াবা-স্বর্ণের চালান নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্রের মহড়া ও আধিপত্য বিস্তার যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের। গুটি কয়েক চাঁদাবাজ রোহিঙ্গা নেতার কারণে ৩৪টি ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারাই এখন ইয়াবা কারবারের প্রধান চালিকা শক্তি। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো অথবা বিকল্প কোন ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় স্থানীয়দের জন্য মহাবিপদ অপেক্ষা করছে বলে বিশ্লেষকগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। প্রতিমাসে বিপুলসংখ্যক নগদ টাকার লোভে রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা নেতাকে ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, মাঝি-হেডমাঝি বানিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ছোটখাটো বিচার করার ক্ষমতা দেয়ায় এটি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের আচরণ এবং মারমুখি মনোভাবের ফলে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা।
×