ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আলুর দাম কমছে না

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ১৭ অক্টোবর ২০২০

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আলুর দাম কমছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রসুন ও আদা ছাড়া বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারাসাজির কারণে গোল আলুর সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি আলু আগের মতো বাড়তি দামে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরেক দফা বেড়েছে শাক-সবজির দাম। সবজির দামে নাকাল নগরবাসী। পেঁয়াজ ও চাল বাড়তি দামে স্থিতিশীল রয়েছে। ইলিশ ধরা ও বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দেশী মাছের ওপর চাপ বেড়েছে। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। ব্রয়লার মুরগি ও গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। তবে দেশী রসুন ও আদা বাজারে আসায় প্রতিকেজি আদা ৯০-১০০ এবং রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। কয়েক মাস আগেও আদা-রসুন প্রায় ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, মালিবাগ কাঁচা বাজার, মুগদা বড়বাজার, কাপ্তান বাজার ও যাত্রাবাড়ী বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাজারে এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত সবজি আলু। বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আলু এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। সহজলভ্য ও সব ধরনের তরকারিতে ব্যবহার হয় বলে আলু এদেশে জনপ্রিয় সবজি। এছাড়া আলুর উৎপাদনও দেশে ভাল। বছরে ১ কোটি লাখ টন চাহিদার তুলনায় উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টন। এজন্য প্রতিবছর আলু রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে আলু রফতানি করা যায়নি। এরপরও আলুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার পেছনে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বরং আলুর বাজারে সিন্ডিকেট ঢুকে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক সবজির দাম বাড়ায় আলুর চাহিদা কিছু বেড়েছে। কিন্তু দাম দ্বিগুণ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আলুর দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি রয়েছে। অবশ্যই সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হতে হবে। এ লক্ষ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশনের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ৩০ টাকা কেজি কিনতে না পারলে বিক্রি করব কীভাবে? পাইকারিতে প্রতিকেজি আলুর দাম পড়েছে ৪০-৪২ টাকা। অন্যান্য খরচ যোগ করে এককেজি আলু ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। তিনি বলেন, শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না। আড়ত ও কোল্ড স্টোরে কড়া নজরদারি বাড়াতে হবে। আড়ত ও কোল্ড স্টোরে আলুর দাম কমলে, খুচরা বাজারেও দাম কমে যাবে। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। খুচরা বাজারে এখন ৮০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। গত সপ্তাহের মতো এখনও শিম, টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটি ও উস্তার কেজি এক শ’র ঘরে রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে এক শ’ টাকার তালিকায় নাম লিখিয়েছে শসা। এর মধ্যে টমেটো গত কয়েক মাসের মতো এখনও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে উস্তারও। এককেজি উস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এগুলোর পাশাপাশি বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দুল, কচুর লতি। ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁকরোলের দাম বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। প্রতিটি লাউ গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এক হালি কাঁচাকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে শুধু মূলা ও পেঁপে। এর মধ্যে মূলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। স্বস্তি মিলছে না কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দামেও। এককেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। দেশী পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যও গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা। গত মাসে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে চাল সরু নাজির ও মিনিকেট ৫৭-৬২, চাল মাঝারি পাইজাম ও লতা ৫০-৫৬, চাল মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৬-৫২, মসুর ডাল বড় দানা ৬৫-৭০, পেঁয়াজ ৮৫-৯০, ভোজ্যতেল সয়াবিন খোলা ৯০-৯৪, পাঁচ লিটারের বোতল ৪৭০-৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
×