ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৯ বছর শুমারি বন্ধ

তদারকির অভাব নৌ যোগাযোগ খাতে

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

তদারকির অভাব নৌ যোগাযোগ খাতে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সারাদেশে কি পরিমাণ যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে সংশ্লিষ্ট দফতর তথা নৌপরিবহন অধিদফতর কিংবা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএর)-এর কাছে সে পরিসংখ্যান নেই। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দেশে কোন নৌ শুমারি হয়নি। সরকারী দফতর সূত্রে জানা গেছে, নৌ পরিবহন অধিদফতরে যাত্রী ও পণ্যবাহী মিলিয়ে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ১৪ হাজারের সামান্য বেশি। এর মধ্যে প্রতি বছর সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) হয় আট হাজারের মতো। বাকিগুলো ফিটনেস ও রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করে। বেসরকারী হিসেবে সারাদেশে চলাচলরত নৌযানের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি। এই পরিসংখ্যান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নৌ খাতের তদারকি পর্যাপ্ত নয়। অর্থাৎ নৌ সেক্টরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা নজরদারি একেবারেই ঢিলেঢালা। যে কারণে বারবার নৌ দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ২০ বছরে ৬৭৫ নৌ দুর্ঘটনায় চার হাজার ৮০০ বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা এক হাজার ১০০ জনের বেশি। নৌ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠের চিত্র বলছে গোটা নৌ সেক্টরে তদারকির যথেষ্ট অভাব। ফলে ইচ্ছেমতো সারাদেশে নৌযান পরিচালনা করার সুযোগ পাচ্ছেন যে কেউ। মূলত এ কারণেই দুর্ঘটনাও কমছে না। দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশও বাস্তবায়ন হয় না। সঙ্কুচিত হয়ে আসছে নৌপথ। বন্ধ হচ্ছে রুট। পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। তারা বলেন, সবচেয়ে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে যেখানে আমাদের দেশে নৌ খাতে বেশি নজরদারি বাড়ানোর কথা সেখানে সবচেয়ে কম। অন্যান্য দেশে প্রাকৃতিকভাবে এত বেশি নৌ যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে গোটা দেশে অর্থনীতি ও যোগাযোগ খাতের চিত্র পাল্টে যেত। আমাদের সম্পদ আছে অথচ কাজে লাগাতে পারছিনা। সড়ক খাতে যে পরিমাণ উন্নয়ন বাজেট হয় সেদিক বিবেচনায় নৌ খাত একেবারেই অবহেলিত। এ থেকেই বোঝা যায় পরিকল্পিতভাবে নৌ সেক্টরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। নদীগুলো রক্ষায়ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। দখলদারদের মন তুষ্ট করে নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ পরিকল্পিতভাবে নদীর মানচিত্র বদলে দেয়া হচ্ছে। এভাবে তিল তিল করে গোটা নৌ খাত হয়ত একদিন ধ্বংসের দিকে যাবে। তাই দ্রুত শক্ত হাতে এই খাতকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নৌ সেক্টরে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যার সমাধান হঠাৎ করেই সম্ভব নয়। আমরা সকল অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাগুলো চিহ্নিত করেছি। নৌ খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যুগের পর যুগ নদীর জায়গা দখল করা ছিল। আমরা শক্ত হাতে তা উদ্ধারে নেমেছি। নৌ-যোগাযোগ নিয়ে যেসব প্রশ্ন আছে এরও সমাধান হবে। ইচ্ছেমতো নৌযান পরিচালনার আর সুযোগ থাকবে না। নৌ দুর্ঘটনা রোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সবকিছু জবাবদিহিতার মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। ২০ বছরে নৌ দুর্ঘটনার চিত্র ॥ নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংগঠন নৌসড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির পরিসংখ্যান বলছে, যাত্রীবাহী নৌযান দুর্ঘটনায় একসঙ্গে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে- এ কারণে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। লঞ্চ ও ট্রলার বলতে আমরা সাধারণত যাত্রীবাহী নৌযানকেই বুঝি। এছাড়া যাত্রীবাহী নৌযানের তালিকায় আরও রয়েছে রকেট (স্টিমার), সি-ট্রাক, উপকূলীয় জাহাজ, ওয়াটারবাস এবং ২৪ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাত্রীবাহী জাহাজ বা নৌযানকে ফেরি বলা হয়ে থাকে। আর আমাদের দেশে ফেরি বলতে বিভিন্ন ধরনের সড়কযান পারাপারে ব্যবহৃত নৌযানকে বুঝায়; যেগুলো দূরপাল্লার সড়ক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সংক্ষিপ্ত নৌপথে চলাচল করে। যেমন শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি কিংবা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস। সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির তুলনায় আমাদের দেশে নৌদুর্ঘটনা অনেক কম। তা সত্ত্বেও প্রতিবছর লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। তবে ২০১৫ সাল থেকে নৌদুর্ঘটনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমতে শুরু করে। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ, স্টিমার, সি-বোট, ট্রলার) দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৭৫টি; যাতে প্রাণহানি ঘটেছে ৪ হাজার ৮১২ জনের। এই ২০ বছরে নিখোঁজ হয়েছেন আরও অন্তত এক হাজার ১০৭ জন। গবেষণায় জানা গেছে, নৌদুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে নিখোঁজদের স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি করেও কাউকে জীবিত অথবা মৃত উদ্ধার করেছেন- এমন নজির নেই। ফলে বিষয়টি স্পষ্ট যে, ওইসব হতভাগার নিশ্চিত সলিল-সমাধি (মৃত্যু) ঘটেছে। এই হিসেবে, ২০০০-২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে প্রকৃত প্রাণহানির সংখ্যা পাঁচ হাজার নয় শত উনিশ। এ বিষয়ে নৌসড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, একটি নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংগঠনগুলো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনস্বার্থে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ কম গতিতে বাস্তবায়ন হয়। ফলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পদক্ষেপগুলো খুব একটা দৃশ্যমান নয়। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার আগে নৌ সেক্টরে বাড়াতে হবে নজরদারি। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে নিরাপদ হলো নৌ যোগাযোগ খাত। অনেক দেশে কৃত্রিমভাবে নৌ যোগাযোগ বাড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের নদীমাতৃক দেশ। অথচ প্রতি বছর নৌ রুট কমে আসছে। বন্ধ হচ্ছে নৌ খাতের লাইন। তেমনি একের পর দুর্ঘটনার কারণে ঝুঁকিও বাড়ছে। সেই সঙ্গে নজরদারি যতটুকু বাড়ার কথা ছিল তা কিন্তু বাড়েনি। ফলে গোটা নৌ সেক্টর নজরদারির অভাবে ধুঁকছে একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। দুর্ঘটনার ১৩ প্রধান কারণ ॥ সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার দায়রা নদীতে ফেরি দুর্ঘটনায় ৪৭ জনের প্রাণহানি, একই সালে ভোলাগামী এমভি কোকো-৪- দুর্ঘটনা, ২০১২ সালে মুন্সীগঞ্জমুখী ২০০ যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবি, একই বছর মেঘনা নদীতে এমভি শরীয়তপুর-১-এর দুর্ঘটনা, ২০১৪ সালের এমএল পিনাক-৬ ও এমভি মিরাজ-৪-এর দুর্ঘটনায় ১০৩ জনের মৃত্যু, ২০১৫ সালে পদ্মা নদীতে ফেরি দুর্ঘটনায় ৬৮ জনের মৃত্যু, ২০১৬ সালে কীর্তনখোলা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ২০১৯ সালে বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে মৃত্যু ও গত ২৯ জুনে বুড়িগঙ্গায় ‘মর্নিং বার্ড’ লঞ্চডুবির পর নেত্রকোনায় পর পর দুটি বড় ধরনের নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লঞ্চডুবির প্রায় প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও বাস্তবায়ন হয় না সুপারিশ। যদিও, নৌ-প্রতিমন্ত্রীর দাবি, সুপারিশ বাস্তবায়নে সচেষ্ট তারা। নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমার মনে হয় এখানে আমাদের সংবাদে দুর্বলতা আছে। তদন্ত কমিটি যখন হয় তখন পর্যন্ত আমরা এটার সঙ্গেই থাকি। নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আনোয়ার বলেন, তদন্ত কমিটি হয় অনেক ব্যক্তিত্বে। আজকে একজন কালকে আরেকজন। দুর্ঘটনা রোধে নৌযানের নক্সাগত ত্রুটি, অদক্ষ ইঞ্জিন অপারেটর, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন ছাড়াও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে চালকরাও সচেতন হতো। আমাদের এ খাতকে আর অবহেলার দৃষ্টিতে দেখার কোন সুযোগ নেই। অন্য সেক্টরের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব সহকারে দেখার আহ্বান জানান তিনি। ডিপার্টমেন্টে অব শিপিং (ডিওএস) বাংলাদেশের অধিকাংশ নৌদুর্ঘটনার পেছনে এক যানের সঙ্গে অন্য যানের সংঘর্ষকে দায়ী করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে দুর্ঘটনাগুলোর কারণ ভিন্ন হলেও এক্ষেত্রে অনেক সাধারণ কারণও লক্ষ্যণীয়। এগুলো হলো, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত মালামাল বা যাত্রী বহন, চালকদের অবহেলা ও অদক্ষতা, যন্ত্রাংশে ত্রুটি, বৈরী আবহাওয়া, যানের ত্রুটিযুক্ত গঠন, অনিরাপদ নৌরুট, যানের মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস, নৌযানের মধ্যকার সংঘর্ষ, লাইসেন্সবিহীন অপারেটর, রাডার বা রেডিও সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততা, অত্যধিক স্রোত, নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণজনিত ঘাটতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োগহীনতা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হলো, নৌ যাত্রা সুরক্ষার বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিনিস্ট্রি অব শিপিং (এমওএস), ডিপার্টমেন্টে অব শিপিং (ডিওএস) ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআইডব্লিউটিএ) নামে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। মিনিস্ট্রি অব শিপিং এর ওপর নৌপথ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত। আর সরকারের ক্ষমতাবলে সব ধরনের নৌযানের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ যানের ফিটনেস পরীক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং (ডিওএস)। অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএ নৌপথ ও যান নোঙ্গর-সংশ্লিষ্ট স্থানের নিরাপত্তা ও আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রেরণ নিশ্চিতকরণের জন্য নিয়োজিত। লোকবল ও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি সঙ্কটের কারণে বিভাগগুলোতে আশানুরূপ কাজের অগ্রগতিতে বিঘœ ঘটছে। নির্বিঘœ ও নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিতের জন্য ‘অভ্যন্তরীণ শিপিং অধ্যাদেশ -১৯৭৬’ রয়েছে, যেখানে নৌযান বা পরিবহন সংক্রান্ত আইন ও অমান্যকারীর শাস্তির বিধান সংক্রান্ত সকল বিষয় লিপিবদ্ধ আছে। এ বিষয়ে যানচালক, যান-মালিক বা যাত্রী কেউ তেমন অবগত নয়। তাই যান-মালিক, চালক ও যাত্রীদের স্বেচ্ছাচারী চলাচলের কারণে আমাদের বারবার দুর্ঘটনার মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। সরকারী হিসাব বলছে, দেশের ৩৫ ভাগ মানুষ নৌ-পথে যাতায়াত করেন। অতীতের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নৌ-দুর্ঘটনায় কারও তেমন কোন শাস্তি হয় না। এ কারণে দুর্ঘটনা রোধে প্রথমেই কঠোর শাস্তির বিধান করা উচিত। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে তৈরি করা অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইনের খসড়া ২০১৮ সালে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, যাতে নৌযান দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে ১০ বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, নৌযান মালিক-শ্রমিক নেতাদের চাপের মুখে আইনটির চূড়ান্তকরণ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। তারা দ- কমানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক সুপারিশ ও বাস্তবতা ॥ বুড়িগঙ্গার নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পেছনে ৯টি কারণ চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ২০ দফা সুপারিশ করেছে নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নৌদুর্ঘটনায় কারও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে হত্যা মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে। ঢাকা সদরঘাটের কাছে নৌযানের বার্থিং বন্ধ করা, খেয়াঘাট সরিয়ে নেয়া, ভয়েজ ডিক্লারেশন বাধ্যতামূলক করা, নৌযানের গতিসীমা নির্ধারণ, পুরনো ধাঁচের লঞ্চ তুলে দেয়া, লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত টিকেট বিক্রি বন্ধ করা এবং শাস্তি বাড়িয়ে নৌআইন যুগোপযোগী করার সুপারিশ রয়েছে সেখানে। ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় মর্নিং বার্ড লঞ্চে ধাক্কা দেয় ময়ূর-২। এতে পানিতে ডুবে মারা যায় ৩৪ জন। অবহেলাজনিত মামলায় ময়ূর-২ এর সুপারভাইজার আবদুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ দুটি আলাদা কমিটি গঠন করে। তাদের তদন্তে কি বেরিয়ে এসেছে জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুলিশ ময়ূর-দুইয়ের গাফিলতির প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবে। মন্ত্রী আরও জানান, বুড়িগঙ্গায় সদরঘাটের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব ডকইয়ার্ড উচ্ছেদ করা হবে। ফিটনেসবিহীন লঞ্চও বন্ধ করে দেয়া হবে। বাস্তবতা হলো ২০ দফা সুপারিশের অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া নেত্রকোনার মদনের উচিতপুর হাওড়ে সাম্প্রতিক ট্রলার দুর্ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হলেও এর সুপারিশের কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে জেলায় এক মাসের ব্যবধানে দুটি বড় নৌদুর্ঘটনা ঘটে। ইচ্ছেমতো ট্রলার ঘাট তৈরি করে হাওড় অধ্যুষিত সাত জেলায় চলছে যাত্রী পরিবহন। তবে গোটা হাওড়াঞ্চলে ছয়মাস বেশি নৌযান চলাচল করে। শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলে নৌ চলাচল ১০ ভাগের দুই ভাগে নেমে আসে। ছয়মাস দেখভালের দায়িত্ব একেবারেই নেই। জাতীয় কমিটির গবেষণা বলছে, গোটা হাওড়াঞ্চলজুড়েই নাজুক নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। নৌ শুমারি না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক নৌযান নিবন্ধন ও বার্ষিক সার্ভের আওতায় আসছে না। ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এই সুযোগে অবৈধ নৌযান চলাচল করায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। নৌ পরিবহন অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শকদের মাঠে দেখা যায় না। নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইঞ্জিনচালিত বোট বা ট্রলারগুলো ইচ্ছেমাফিক যাত্রী বহন করছে। ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জে নৌ অধিদফতরের একটি অফিস স্থাপন এবং একজন শিপ সার্ভেয়ার ও একজন পরিদর্শককে পদায়ন করা হয়েছে। সার্ভেয়ার সপ্তাহে ৩ দিন কর্মস্থলে থাকলেও পরিদর্শককে সচরাচর দেখা যায় না। একই অবস্থা বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শকের ক্ষেত্রেও। এছাড়া নৌপরিবহন অধিদফতরের পরিদর্শকের জন্য কোন টহল বোট ও নিজস্ব দফতর নেই। হাওড়াঞ্চলে বালুবাহীসহ ব্যাপক সংখ্যক পণ্যবাহী নৌযান এবং ইঞ্জিনচালিত যাত্রীবাহী নৌযান (ট্রলার) চলাচল করলেও এগুলোর সিংহভাগই নিবন্ধনবিহীন বা অবৈধ।
×