ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ফের ডাকযোগে ভোট নিয়ে অসন্তোষ

কয়েক মাসেও হয়ত জানা যাবে না জয়ী কে ॥ ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

কয়েক মাসেও হয়ত জানা যাবে না জয়ী কে ॥ ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ভার্জিনিয়ার নিউপোর্ট নিউজে এক নির্বাচনী সমাবেশে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডাকযোগে ভোট দেয়া নিয়ে আবারও নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। খবর সিএনএনের ট্রাম্প বলেন, নবেম্বরে ভোটের পর জয়ী কে তা জানতে হয়তো কয়েক মাস লেগে যাবে। ডাকযোগে ভোটের ব্যালট পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করার চাইতে তিনি বরং জয় বা পরাজয়ের বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত হতে পারলে খুশি হবেন। তিনি বলেন, আমি বরং টেলিভিশনে দেখতে চাই বলা হচ্ছে বিজয়ী হয়েছেন ...ঠিক আছে? এটা শোনার জন্য আপনি নিশ্চয়ই কয়েকমাস অপেক্ষা করতে পারেন না, কারণ সেটা হবে জগাখিচুড়ি অবস্থা। ভোটের রাতেই আপনি বিজয়ীর নাম শুনতে পাবেন এবার এটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হয়তো আমি এগিয়ে থাকব এবং তখনও তারা একটার পর একটা ব্যালট পাবে, ব্যালট আসতে থাকবে, আসতেই থাকবে। তখন তারা বলবে আরও পরেও ব্যালট আসতে পারে। যদিও ট্রাম্পের মতো কয়েক মাস না বললেও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ভোটের ফলাফল জানতে বেশ কয়েকদিন লেগে যাবে। কারণ যারা ডাকযোগে ভোট দেবেন তাদের ব্যালট নানা কারণে ৩ নবেম্বরের পরও নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাবে। ফলে কর্মকর্তাদের ভোট গণনা শেষ করতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। আগামী ৩ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট। করোনা মহামারীর মধ্যে এবার অর্ধেক মার্কিন ভোটার ডাকযোগে ভোট দেবেন। শুরু থেকেই ডাকযোগে ভোটের ঘোর বিরোধী ট্রাম্প। মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন ও নর্থ ক্যারোলাইনার মতো যেসব অঙ্গরাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে সেখানে এমনকি ভোটেরদিনও ভোটাররা নিজেদের পছন্দ জানিয়ে ডাকযোগে ব্যালট পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ব্যালট নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাতে ৩ নবেম্বর পেরিয়ে যাবে। ওইসব ভোট গণনায় ধরা নিশ্চিত করতে এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত একটি নির্দেশ জারি করেছে। এদিকে নানা জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে রিপাবলিকানদের তুলনায় ডেমোক্র্যাটিক দলের সমর্থক ও ভোটাররা মহামারীর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ভিড় এড়াতে ডাকযোগে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা বেশি করেছে। পেনসিলভানিয়ার এক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ট্রাম্প বলেছেন, ৪৭ মাসে আমি যা করেছি জো বাইডেন তা ৪৭ বছরেও করতে পারেননি। বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রাম্পের দাবি, বাইডেনের চেয়ে তিনি দেশের জন্য বেশি অবদান রেখেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে থেকেই বাইডেনের সমালোচনায় মুখর ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেন দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় (২০০৯-২০১৭) ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন। তবে ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনের তুলনায় রাজনীতিতে একেবারেই নবীন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন রাজনীতিতে হাতেখড়ি ধনকুবের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ট্রাম্পের। ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেলে খুব সহজেই ক্ষমতা ছাড়বেন না বলে আভাস দিয়েছেন। পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা এ ব্যাপারে কোন প্রতিশ্রুতি দিতেও তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার ভাষ্য, পরাজিত হলে আগে দেখতে হবে আসলে কি ঘটেছে। আগেও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে তার উত্তর ছিল ফল দেখেই তিনি বলতে পারবেন ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন কিনা? জবাবে ট্রাম্প বলেন, তার বিশ্বাস মহামারীর সময় ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে ক্ষমতা হস্তান্তরেরই কোন দরকারই হতো না। যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে নির্বাচন হয় বলে অনেক মানুষ সশরীরে ভোট দিতে পারেন না। কাজের সূত্রে দূরে থাকার কারণেও কারও কারও ভোট দিতে সমস্যা হয়। এমন সব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর বিধান রয়েছে। এ বছর করোনা সঙ্কটের কারণে অসংখ্য ভোটার সেই সুযোগ গ্রহণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ডাকযোগে বা মেইল ইন ভোটের দাবি জানানো হলেও ট্রাম্প শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছেন। এমনকি ভোট-জালিয়াতি হতে পারে বলে ডেমোক্র্যাটদের দিকে আঙ্গুলও তুলেছেন তিনি। ডাকযোগের ব্যালট সরিয়ে নিলে সবই শান্তিপূর্ণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞ ও ভোট কর্মকর্তারা ট্রাম্পের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলছেন, এ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি কিংবা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এ প্রক্রিয়া নিয়মিত ব্যবহার করেছেন। সর্বশেষ জনমত জরিপে জাতীয়ভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এখনও বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় এগিয়ে আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতেও দুই প্রার্থীর অবস্থান খুব কাছাকাছি। এর ফলে এবারের নির্বাচনের ফলাফল খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং ডাকযোগে ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে সাংবাদিক ক্রিস ওয়ালেস ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ২০২০ নির্বাচনের ফল মেনে নেবার প্রতিশ্রুতি তিনি দিচ্ছেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি এক্ষুণি হ্যাঁ বলছি না। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সবার মনে প্রশ্ন : নবেম্বরের ৩ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে ট্রাম্প হেরে গেলে- তিনি কি আদৌ ফলাফল মেনে নেবেন? এবং ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন? আরও বড় প্রেশ্ন : নির্বাচনের ফল মেনে না নিলে কী হবে? যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক যুগে সব প্রেসিডেন্টই নির্বাচনের ফল বিপক্ষে গেলে হার স্বীকার করে নিয়েছেন। ট্রাম্প যদি নির্বাচনের ফল মানতে অস্বীকার করেন তা হবে সাম্প্রতিককালের এক অভূতপূর্ব ঘটনা এবং সেক্ষেত্রে কি ঘটবে তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, সেক্ষেত্রে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পকে সরিয়ে দিতে সামরিক বাহিনী ডাকা হতে পারে। রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি টুইট করেন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর গণতন্ত্রের মৌলিক ব্যাপার, এটা না থাকার মানে হচ্ছে বেলারুশ হয়ে যাওয়া। কিন্তু সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, নির্বাচনে যিনি জিতবেন জানুয়ারি মাসে তার অভিষেক হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৯২ সাল থেকে যেভাবে সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হচ্ছে- এবারও তাই হবে। আরেকজন সিনিয়র রিপাবলিকান লিজ চেনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর সংবিধানের অংশ এবং প্রজাতন্ত্রের টিকে থাকার জন্য আবশ্যিক। ট্রাম্পের মিত্র সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও বলেন- যদি সুপ্রীমকোর্ট জো বাইডেনের পক্ষে রায় দেয় তাহলেও রিপাবলিকানরা নির্বাচনের ফল মেনে নেবে। এক সাক্ষাতকারে বাইডেন বলেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প হয়তো নির্বাচনের ফল চুরি করে নিতে পারেন বা ভোটে হারলেও হোয়াইট হাউস ছাড়তে অস্বীকার করবেন। সে রকম কিছু যদি ঘটে তাহলে তিনি নিশ্চিত যে সামরিক বাহিনী ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেবে। পরে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেলি ম্যাকএনানি বাইডেনের উক্তির সমালোচনা করেন। তাছাড়া ট্রাম্পের মুখপাত্র এও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন।
×