ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভিপি নূরের বিরুদ্ধে দুই ধর্ষণ মামলার তদন্ত চলছে

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভিপি নূরের বিরুদ্ধে দুই ধর্ষণ মামলার তদন্ত চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নূর। কোটা আন্দোলনের পর এবার তার বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগে দুইটি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় ধর্ষণে সহযোগিতা করার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীরই দায়ের করা দুইটি মামলায় ভিপি নূরসহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে সবাই মুচলেকায় মুক্ত আছেন। মামলা দুইটির তদন্ত চলছে। দীর্ঘ সময় পর এমন মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে ভিপি নূরের আলোচনায় আসার নেপথ্যে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য বা দুরভিসন্ধি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গত ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার রাজধানীর লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় ভিপি নূরসহ ছয় জনকে। অন্য আসামিরা হচ্ছেন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, একই সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম-আহ্বায়ক (২) মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোঃ নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ হিল বাকি নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, ধর্ষণের ঘটনার পরম্পরায় ভিপি নূরের নাম উঠে আসায় তাকে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। ধর্ষণের স্থান হিসেবে লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে হাসান আল মামুনের বাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, হাসান আল মামুন ওই ছাত্রীর ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তার সঙ্গে তার পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। নিজ বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যায়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রযুক্তিগত যোগাযোগে বিভিন্নভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দেয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাসান আল মামুন তাকে ঢাকার নবাবগঞ্জ, মসজিদ রোড, ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলেন। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ভিপি নূরকে জানালে তিনি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন। অন্যথায় ফেসবুকে তাকে পতিতা বলে প্রচার করার হুমকি দেন। পরে নূরের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটানো হয়। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীই ঢাকার কোতোয়ালি থানায় আরও একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই ছয় জনকেই আসামি করা হয়। দ্বিতীয় মামলায় পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা এবং হেয়প্রতিপন্ন করতে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের হয়েছে। মামলায় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে আটটার দিকে কোতোয়ালি থানাধীন সদরঘাট হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ করা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। ২১ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় মামলার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ মিছিল শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে নূরসহ সাত জনকে মৎস্যভবন এলাকা থেকে ধর্ষণ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে নূরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে রাত সাড়ে বারোটার দিকে মুচলেকা নিয়ে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতার সাত জনকেই মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে মুক্ত। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের ওপর নজর রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ছাত্রীর দায়ের করা দুইটি মামলারই গভীর তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে মামলায় আনা অভিযোগের বিষয়ে পরিষ্কার করে বলা যাবে। নূরদের মামলার প্রতিবেদন পেশ ১৩ অক্টোবর ॥ কোর্ট রিপোর্টার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূরসহ ছয়জনের নামে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দিন ধার্য করেছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এজাহার গ্রহণ করে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক নূর আলমকে এই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গতকাল রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ভুক্তভোগী ওই তরুণী নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এছাড়া তিনিই লালবাগ থানায় একই আসামিদের বিরুদ্ধে আগের মামলাটিও করেছেন বলে জানা গেছে। এ মামলায়ও ওই ছয়জনকেই পৃথক পৃথক অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। আগের মামলাটিতে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে। তবে এই মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধে। নূর ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ধর্ষণের অভিযোগে ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্রমূলক মামলা ও মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, তারা বলছে, আমরা নাকি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছি। অথচ আপনারা মিডিয়ার লোকজন দেখেছেন, কীভাবে আমাদের ওপর সিনেমা স্টাইলে হামলা চালানো হয়েছিল। আমরা সন্দিহান, আদৌ তারা পুলিশ বাহিনী ছিলেন, নাকি ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের ওপর ঘৃণ্য হামলা করা হয়েছিল।
×