ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধভাবে বিপুল সম্পত্তির মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের মালেক ড্রাইভার

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

অবৈধভাবে বিপুল সম্পত্তির মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের মালেক ড্রাইভার

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী। আবদুল মালেক নামের আলোচিত ওই কর্মচারীকে রবিবার ভোরে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। জানা গেছে, তার স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন, ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, গাড়ি চালক আব্দুল মালেক দীর্ঘদিন ধরে অধিদফতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বিশেষ করে অধিদফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য তার প্রধান কাজ। কোনো কর্মকর্তা যদি আবদুল মালেকের সুপারিশ না শোনেন তাহলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটিয়েছেন একাধিকবার। কর্মকর্তারা লোকলজ্জার ভয়ে এসব বিষয় কখনও প্রকাশ করেননি। নিজে অধিদফতরের একজন গাড়ির চালক হয়েও আ. মালেক একটি পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের ক্যান্টিন প্রিয় তিনি পরিচালনা করেন। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট, স্বাস্থ্য অধিদফতরের যত গাড়ির চালক তেল চুরি করে, তার একটি অংশ তাকে দিতে হয়। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি পুরো অধিদফতর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারের পর ড্রাইভার মালেকের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, সম্প্রতি র‌্যাবের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের (৬৩) বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, তিনি ওই এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। রবিবার ভোরে র‌্যাব-১ এর একটি দল তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার বামনেরটেক এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, অবৈধ অস্ত্র, জালনোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মালেক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব জানায়, আব্দুল মালেক দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছেন। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তার অসামঞ্জস্যতা উঠে আসে। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ রবিবার ভোরে তাকে তুরাগের বামনেরটেক, বাসা নম্বর-৪২, হাজী কমপ্লেক্সেরর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, মালেক পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন চালক। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জালনোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল আরও বলেন, মালেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসায় জড়িত থাকা এবং অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে। তাকে রাজধানীর তুরাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
×