ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন দেশ থেকে আসছে ॥ পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

তিন দেশ থেকে আসছে ॥ পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

এম শাহজাহান ॥ অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রুত দাম কমাতে তিন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তুরস্ক থেকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানির এক লাখ টন পেঁয়াজ আনছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি। মিয়ানমারের পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আমদানির লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করছে সরকার। নেদারল্যান্ডস সরকার বাংলাদেশকে পেঁয়াজ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মিসর, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য এলসি খুলতে সরকারের অনুমতি নিয়েছেন আমদানিকারকরা। সঙ্কট মোকাবেলায় দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেঘনা, প্রাণ, টিকে গ্রুপ, বসুন্ধরা, সিটি গ্রুপ ও স্কয়ার গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুরোধ করা হতে পারে। গত বছর ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল। ওই অভিজ্ঞতা এবারও কাজে লাগানো গেলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, সীমান্তের ওপারে আটকে থাকা ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক ও ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। মানুষ দাম বাড়ার আশঙ্কায় পেঁয়াজ কেনা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। টিসিবির হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ রয়েছে। দাম না কমা পর্যন্ত টিসিবি ৩০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সারা বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের। এ বছর উৎপাদনও হয়েছে ২৫ লাখ টন। তবে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয় সংরক্ষণের অভাবে। ওই হিসেবে ৬ লাখ টনের ঘাটতি থাকে। ঘাটতি মেটাতে ইতোমধ্যে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে আনা হয়েছে। এছাড়া দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। ভারতের বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি, মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা, চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ না কিনতে ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ানোর মতো কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকরা ভাল দামের আশায় শীঘ্রই তাদের সংরক্ষিত পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসবে। সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ আছে, পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। ভারতের দাম বাড়ার খবরে বাজারে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এটা ঠিক। ক্রেতারা বেশি করে পেঁয়াজ কিনছেন। এটার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে যাতে কোন ধরনের কারসাজির সুযোগ না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাজার মনিটরিং টিম ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর কাজ করছে। সবচেয়ে বড় যে উদ্যোগ টিসিবি সরাসরি তুরস্ক থেকে একলাখ টন পেঁয়াজ আনছে। শীঘ্রই এই পেঁয়াজ দেশে ঢুকবে। দেশীয় পেঁয়াজের মজুদও ভাল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এদিকে, ভারত রফতানি বন্ধের পর একলাফে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরির মুখ দেখল। শুধু এক রাতের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৫০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য যা আছে তাও বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। হঠাৎ দাম বাড়ার খবরে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার পেঁয়াজের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। দাম বাড়ার আশঙ্কায় ক্রেতাদের বেশি কেনার প্রবণতায় পেঁয়াজ শূন্য হয়ে পড়ছে বাজার। ব্যবসায়ীরাও বেশি দামের আশায় পেঁয়াজের মজুদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির পেঁয়াজ আনা মাত্র ফুরিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার কৃষিপণ্যের মার্কেট হিসেবে খ্যাত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া দেশী পেঁয়াজের দামও অনেক বেড়ে গেছে। শ্যামবাজারের মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী মোঃ হুমায়ূন কবির জনকণ্ঠকে বলেন, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা নি¤œমানের ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে দাম আরও বেশি। ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে বেশি দাম দিয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছেন। এতে বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট থেকে পেঁয়াজ কিনছিলেন, গৃহকত্রী সালমা আক্তার। তিনি ১০ কেজি পেঁয়াজ ১১০০ টাকা দিয়ে কিনে নিলেন। কেন এত বেশি পেঁয়াজের প্রয়োজন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম আরও বাড়বে। গত বছর এই সময়ে ২৫০-৩০০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এ কারণে এবার একটু বেশি করে কিনে রাখা হলো। ঢাকার মতো জেলা শহরেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বাজারের এখন সবেচেয়ে আলোচিত ও দামী পণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে পেঁয়াজ। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসবে তুরস্ক থেকে ॥ পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমাতে জরুরী ভিত্তিতে তুরস্ক থেকে একলাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া জি টু জি বৈঠকের পর মিয়ানমার থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশে আনবেন বেসরকারী খাতের আমদানিকারকরা। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের পেঁয়াজ এসে গেছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ও দেশটির শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পাঁচজন উদ্যোক্তা বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মূলত এদের কাছ থেকে আমদানিকারকরা জাহাজে করে পেঁয়াজ নিয়ে আসবেন। করোনার কারণে টেকনাফ বন্দর ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে মিয়ানমার থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টিসিবির ৩০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে দাম বাড়ার আর কোন সুযোগ থাকছে না। এছাড়া ভারতের পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত টিসিবি টেন্ডারের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ লক্ষ্যে তুরস্ক সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করা হয়েছে। পাশাপাশি মিসর, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব। প্রয়োজন হলে এসব দেশ থেকেও আমদানি করা হবে। পেঁয়াজের রফতানি মূল্য তিন গুণ বাড়াল ভারত ॥ ভারতের বিভিন্ন স্থলবন্দরে পেঁয়াজ বোঝাই অপেক্ষারত ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় শুল্ক বিভাগ। এর ফলে আগের মূল্যের এলসিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশে আনতে পারবেন আমদানিকারকরা। এদিকে, ভারতীয় কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা ‘ন্যাপেড’ সোমবার থেকে হঠাৎ করে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ৭৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে। আগে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ২৫০ মার্কিন ডলারে রফতানি করছিল। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে আগের এলসিগুলোর মূল্য পুনরায় বাড়াতে হবে। এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে পেট্রাপোল বন্দরে আটকে আছে দেড় শতাধিক পেঁয়াজের ট্রাক ও ৪২টি ওয়াগানযুক্ত তিনটি পেঁয়াজের ট্রেন। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব ট্রাক ও ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। সোমবার সকালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রবেশের পরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন। ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ সঙ্কট থাকায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করতেই পেঁয়াজ আমদানিতে মূল্য তিন গুণ করা হয়েছে বলে দাবি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। ভার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার পরই দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। সোমবার যে ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল সে পেঁয়াজ মঙ্গলবার সকাল থেকে খুচরায় তা ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ থাকলেও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভারতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আজ দুদিন ভারত থেকে কোন পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। বাংলাদেশী অনেক আমদানিকারকের এলসি ভারতের রফতানিকারকদের কাছে পড়ে আছে। আমদানিকারকরা বাড়তি মূল্যে পেঁয়াজ আমদানি করবে কি-না সেটা বলা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে বেসামাল পেঁয়াজের বাজার ॥ হাসান নাসির চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের খবরে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। একদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে মূল্য বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে খুচরা ব্যবসায়ীদের চাপ পরিলক্ষিত হয় বেশি। কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি কম। এদিকে, পেঁয়াজ সঙ্কট সামাল দিতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ সঙ্কট সাময়িক। গত বছরের অভিজ্ঞতা তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। চলছে ৫ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া। বিকল্প পথ অনুসন্ধানের সামান্য সময়টুকু অপেক্ষা করতে হবে। এ সঙ্কট কেটে যাবে। মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বাজারে চড়াভাব দেখা যায়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। আগের দিন সোমবার যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় তা মঙ্গলবার উঠেছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাব সেভাবে পড়েছে খুচরা বাজারে। সকালে ৬০ টাকায় পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে দাম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম উঠে যায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ কেনার ক্ষেত্রে রয়েছে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায়। এর প্রধান কারণ ক্ষণে ক্ষণে বাজারের অস্থিতিশীলতা। তারাও বুঝতে পারছেন না পেঁয়াজে দাম এমনই থাকবে, না কি আরও বাড়বে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, তুরস্ক, মিয়ানমার, চীন, মিসর ও পাকিস্তান এ পাঁচ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির তৎপরতা শুরু হয়েছে। যতটুকু বাজার যাচাই করে দেখা গেছে তাতে এখন আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম টন প্রতি মান ভেদে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মার্কিন ডলার। পরিবহন খরচ একটু বেশি যাবে এবং দূর থেকে আনতে সময়ও খানিকটা বেশি লাগবে, এই যা। পেঁয়াজের সঙ্কট গত বছরের ন্যায় প্রকট হওয়ার কোন কারণ নেই বলে তারা আশ^স্ত করছেন। তাছাড়া গুদামগুলোতে এখনও দেশী পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে বলে জানান তারা। সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানির পথ সহজ করে দেয় তাহলে সঙ্কট কেটে যাবে বলে মনে করছেন তারা। একসঙ্গে বেশি পেঁয়াজ না কেনার অনুরোধ চট্টগ্রাম চেম্বারের ॥ পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। একইসঙ্গে তিনি আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনার অনুরোধও জানান। তিনি বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের খবরের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বৃদ্ধি করছে। কিন্তু পূর্বের আমদানি করা পেঁয়াজের হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা নেই। চেম্বার সভাপতি বলেন, দেশে এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। তিনি আগামী দিনের চাহিদা পূরণে চীন, মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে অতি শীঘ্রই পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া সড়ক পথেও মিয়ানমার হতে পেঁয়াজ আমদানি করে বর্তমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে আশ^স্ত করেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজের বাজার এতটা অস্থিতিশীল হওয়ার কোন কারণ নেই। বিভ্রান্ত না হয়ে একসঙ্গে অতিরিক্ত পেঁয়াজ না কেনার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি তিনি টিসিবির পেঁয়াজ আরও বেশি আউটলেটের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুরোধ ॥ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশন। মঙ্গলবার বিষয়টি জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, গত বছরের মতোই এবারো কোন আগাম বার্তা না দিয়েই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন নোটিসটি আমাদের নজরে আসে, আমাদের দূতাবাস দিল্লীতে সঙ্গে সঙ্গেই এটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টেকআপ করেছে। কারণ আমাদের মধ্যে অলিখিত কথাটি ছিল যে, ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি কোন পরিবর্তন আনে তবে আগে আমাদের জানিয়ে দেবে। এই ধরনের বোঝাপড়ার মধ্যে আছে, এটা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে। তিনি বলেন, আমরা তাদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। প্রত্যাশা করছি, এটার একটা ভাল ফলাফল পাব। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে ভারত। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশে একদিনেই পেঁয়াজের দাম এক তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে। সোমবার ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে।
×