ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যতিক্রমী পদ্মফুল নিয়ে চলছে গবেষণা

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

ব্যতিক্রমী পদ্মফুল নিয়ে চলছে গবেষণা

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ঘেঁষে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রামের বিলজুড়ে ফুটেছে পদ্মফুল। সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মফুলের সঙ্গে ফুটেছে ব্যতিক্রমী নতুন হলুদাভ পদ্মফুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে এ বিলের পদ্মের খবর ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী ভিড় করছেন এখানে। এ গ্রামের নাম দক্ষিণগ্রাম হলেও পদ্মফুলের কারণে লোকমুখে বর্তমানে এটি পদ্মগ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বেড়েছে স্থানীয়দের কর্মব্যস্ততা। বিলের প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী দোকানপাটও। এদিকে এ বিলে হলুদাভ রঙের নতুন প্রজাতির পদ্ম ফোটার খবর ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক এখানে এসে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়েছেন। গবেষণায় উত্তীর্ণ হলে বিশ্বের মধ্যে পদ্মফুলের নতুন জাত আবিষ্কৃত হবে বলে ধারণা গবেষকদের। জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও দক্ষিণগ্রামের প্রায় ১২ একর জমির বিলে ফুটেছে পদ্মফুল। এখানে সাদা ও গোলাপি রঙের সঙ্গে রয়েছে হলুদাভ রঙের নতুন জাতের পদ্মফুল। কেউ বলছেন অফহোয়াইট আবার কেউ বলছেন হলুদ রঙের। এই পদ্মকে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি বলে ধারণা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একটি গবেষণা দল। তাদের দাবি, গবেষণাগারের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে উদ্ভিদবিজ্ঞানে হলুদ পদ্ম হবে অনন্য সংযোজন। স্থানীয়দের পাশাপাশি আলোচনা চলছে পদ্ম ফুলের হলুদ রং নিয়ে। গবেষকরা জানান, এশিয়ান বা আমেরিকান পদ্মে একটি ফুলে পাপড়ি থাকে ১২ থেকে ১৮টি, আর এ বিলে এই হলুদ পদ্মে পাপড়ির সংখ্যা ৬০টিরও বেশি। ভেতরের পাপড়ি পুংকেশরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ফুলে পুংকেশরের সংখ্যাও অনেক বেশি। রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘মূল সড়ক পেরিয়ে গ্রামের কাদা সড়ক দিয়ে অন্যান্য দিনের মতো এখানে ছুটে আসছেন শত শত প্রকৃতিপ্রেমী। প্রকৃতির নৈসর্গিক অপার সৌন্দর্য্য দেখতে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন অনেকেই। ঘাটে নৌকার ভিড়। বিল ঘুরে প্রত্যেকে তার ইচ্ছানুযায়ী মাঝিদের পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। বিলের মাঝে সাদা ও গোলাপি রঙের আধিক্য থাকলেও হলুদাভ রঙের ফুলের সংখ্য খুবই কম। বিলটির দক্ষিণাংশে লাল রঙের কাপড় বেঁধে গবেষক দলের কার্যক্রম স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘাটে বাঁধা নৌকা নিয়ে বিল ঘুরে সময় পার করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। কেউবা আবার নৌকার একপাশে বসে পায়ে বিলের পানির ছোঁয়া নিচ্ছেন। সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমির এ পদ্মবিলে এসে মোবাইল বা ক্যামেরায় ধারণ করছেন ফুলের ছবি। কেউবা সেলফি তুলছেন আপন মনে। পর্যটকদের এমন আনন্দে শামিল হচ্ছেন নৌকার মাঝিসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। কথা হয় নৌকার মাঝি পঞ্চাশোর্ধ শান্তিরঞ্জন পালের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘আমার গ্রামে এত লোক ঘুরে বেড়ানোর জন্য আসবে এটা ভাবতেও পারিনি। প্রতিদিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত নৌকার ভাড়া পাওয়া যায়। এখানে পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য ৩০-৩৫টি নৌকা রয়েছে। এদিকে পর্যটকদের এমন সমাগমে সাময়িক ক্ষুধা নিবারণের জন্য বিলের প্রবেশদ্বারে গড়ে উঠেছে কিছু অস্থায়ী দোকানপাট। পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় তাদের বিক্রিও বেড়েছে। সালাউদ্দিন লিটন নামে এক দোকানদার জানান, ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার এ বিলে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী গ্রামের স্কুলশিক্ষক আলাউদ্দিন সরকার। কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি বলেন, এ বিলের পদ্মফুল দেখে আমাদের ভাল লেগেছে। ছেলেমেয়েরা নিজের মতো করে ছবি নিয়েছে, নৌকায় ঘুরে আনন্দ করেছে। বুড়িচং উপজেলা সদর থেকেও এখানে ঘুরতে এসেছে মোবাশ্বের হোসেন জীবন, পারভেজ হাসান সিয়াম ও জেসমিন আক্তারসহ অনেক শিক্ষার্থী। করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পদ্মফুল দেখতে সহপাঠী ও বন্ধুদের নিয়ে এ বিলে এসে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেছেন সকলেই। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সুবিধার্থে বিলের একটি অংশ লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আরও কেউ গবেষণা করতে চাইলে তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’ বিল জলে লাল-সাদা গালিচা ॥ কিশোরগঞ্জ থেকে মাজহার মান্না জানান, অপরূপ বৈচিত্র্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। বিভিন্ন ধরনের ফুলের সৌন্দর্য্য বাংলার বৈচিত্র্যময়তাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। শরতের ফুল ‘পদ্ম’ তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে। এই সময়টাতে প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রানী। পদ্মফুলের উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে গ্রামের শিশুদের উচ্ছলমাখা শৈশবে। বিভিন্ন জায়গায় পদ্মফুল চোখে পড়লেও কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দড়ি জাহাঙ্গীপুরের জয়বাংলা বাজারসংলগ্ন কাইনহা বিলে ফুটে থাকা পদ্মফুলের দৃশ্য যেন অপরূপ সৌন্দর্য্যরে এক বিশাল আয়োজন। জলের ওপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হাসছে লাল-সাদা একেকটি পদ্ম। দেখলে মনে হয়, লাল-সাদা পদ্ম যেন রঙের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে বিলজুড়ে। চোখ জুড়িয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।
×