ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যেন জাতীয় শোক দিবসের পরিবেশ নষ্ট না হয় ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৪ আগস্ট ২০২০

ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যেন জাতীয় শোক দিবসের পরিবেশ নষ্ট না হয় ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য জাতীয় শোক দিবসের পরিবেশ যেন বিনষ্ট না হয়। চিরায়ত ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের মূল্যবোধ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোন স্বার্থান্বেষী সুযোগ সন্ধানী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান উন্নয়ন সমৃদ্ধির পথরেখা কালিমা লেপনের সকল দুয়ার বন্ধ করাই হবে এবারকার ১৫ আগস্টের শপথ। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের সভাপতিম-লী ও সম্পাদকম-লীর সদস্যদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ১৫ আগস্ট জাতীয় দিবসের দলীয় কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, সায়েম খান, এ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার প্রমুখ। ওবায়দুল কাদের বলেন, সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর আদর্শে দেশ গড়ার মহান ব্রতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে এবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য সরকারের সুনাম যেন নষ্ট না হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর পটভূমিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি একই সঙ্গে দেশের সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিও জাতীয় শোক দিবস পালনের আহ্বান জানান। সততা, সফলতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে করোনা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপস্থিত সবার পক্ষে ধন্যবাদ জানান ওবায়দুল কাদের। আন্তর্জাতিক পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যা ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর পাকিস্তানকে সহায়তা করেছিল মার্কিন পরাশক্তি। বাংলাদেশের বিজয়ের মাধ্যমে তাদেরও পরাজয় হয়েছিল। পরাজিত সেই শক্তি কখনই বাংলাদেশের বিজয় মেনে নিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদের চক্রান্তে এ দেশের বেঈমান-মীরজাফররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা- ঃ নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি এই আলোচনাসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ভারতজুজু ভীতি দেখিয়ে একটি রাজনীতি শুরু হয়। এ সঙ্কটটা ছিল প্রকট ও বিরাট। এর নেপথ্যের নায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্রটা পাকাপোক্ত করেন। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ভিতরেও ছিল একটি বিভেদ। জাতির পিতাকে হত্যায় সেটাকেও কাজে লাগানো হয়েছে। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। এটা পাকিস্তান বানানোর একটি ষড়যন্ত্র। সেই থেকে দীর্ঘ ২১ বছর এ ষড়যন্ত্র চলেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর সব থেকে বড় প্রমাণ তিনি খুনীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং পুরস্কৃত করেছেন। জিয়াউর রহমান যদি এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকত তাহলে খুনীরা পুরস্কৃত হতো না, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেত না। জিয়াউর রহমান এই হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে প্রমাণ করেছিলেন তাদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাতের জন্য যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের জিয়াউর রহমান সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন, মদদ দিয়েছেন। পঁচাত্তরের আত্মস্বীকৃত খুনীরা পরবর্তীতে নানা সময়ে সাক্ষাতকারে বলেছেন, জিয়াউর রহমান তাদের সবসময় বলেছেন, ‘তোমরা যদি কিছু করতে পারো করো, আমি আছি- তবে ব্যর্থ হলে আমার নামটা নিও না’। আর জিয়াউর রহমান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেন, কিন্তু ইতিহাসের কোথাও আমরা পাই নাই- তিনি রণাঙ্গনে কোন সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের একজন এজেন্ট। এটা তিনি তার কর্মকান্ডে প্রমাণ করেছেন। এতে আরও বক্তৃতা করেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, লেখক-সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, সিনিয়র সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ভাষাতাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ প্রমুখ।
×