ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাখ টাকা না পেয়ে চালান

বাবার বদলে ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১৩ আগস্ট ২০২০

বাবার বদলে ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ ব্যাংক সার্টিফিকেট মামলায় ঠিকাদার হাবিবুর রহমানকে না পেয়ে তার কলেজপড়ুয়া ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে রামু থানার এসআই জয়নাল। এক লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়ার সমঝোতা হয়। কিন্তু ৫০ হাজার টাকা দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৯৫ পিস ইয়াবা দিয়ে চালান করা হয়েছে ওই শিক্ষার্থীকে। স্থানীয়রা জানান, কুতুবদিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে সদ্য রামু থানায় যোগদান করেন এসআই জয়নাল। টাকার লোভে বুধবার ভোরে রামু চাকমারকুল ওমর আলী সওদাগর পাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আরেফা বেগমের বাড়িতে যান। সাদা পোশাকে অভিযান না চালানোর জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দারোগা জয়নালের নেতৃত্বে আসা পুলিশ সদস্যদের কারও পরনে সরকারী পোশাক ছিল না বলে জানা গেছে। মুখে মাস্ক ও সাদা পোশাক পরিহিত একদল লোক বাড়ির গ্রিল ভাঙছে দেখে প্রথমে ডাকাত সন্দেহ হলেও পেছনে স্থানীয় চৌকিদার শামসুকে দেখে বোঝা গেছে তারা পুলিশের সদস্য। সচেতন মহল বলেন, মেজর সিনহা হত্যা ঘটনার আগে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (বরখাস্ত-কারান্তরীণ) সরকারী চেয়ারে বসে ফৌজদারি অপরাধসম্বলিত একটি ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে প্রচার করে গায়েবি হামলা হবে বলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর মাদক কারবারি নয় শুধু, ভয়ে স্থানীয় নিরীহ লোকজনও ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, মাদক নির্মূলে প্রয়োজনে গায়েবি হামলা এবং গায়েবি অগ্নিসংযোগ হবে। তদ্রƒপ বুধবার রাতে রামু থানার এসআই সাধারণ পোশাকে আসামি ধরতে গিয়ে গৃহকর্তা ঠিকাদার হাবিবুর রহমানকে না পেয়ে তার কলেজপড়–য়া ছেলে আশিককে ধরে নিয়ে যায়। ভাংচুর করা হয় আসবাবপত্র। আর এখন বলছেন, তিনি ওই বাড়িতে যাননি এবং তার লোকজন (পুলিশ) ভাংচুরও করেনি। তাহলে এটাও কি গায়েবি হামলা? অভিযোগে জানা যায়, কক্সবাজার সরকারী কলেজে ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান রনিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তার মা মহিলা মেম্বারের কাছে এক লাখ টাকায় ছেলেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে প্রস্তাব রাখেন এসআই জয়নাল। এ কথায় বিশ্বাস করে সাবেক মহিলা মেম্বার আরেফা বেগম ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন জয়নালের হাতে। শর্ত মতে পুরো টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজছাত্র রনিকে ৯৫ পিস ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরেফা উর্ধতন কর্মকর্তা বরাবরে দরখাস্ত করেছেন। গৃহকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে জয়নাল ও তার সহযোগীরা ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করছে দেখে বাড়ির সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কলেজছাত্র রনির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজাতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েন এসআই জয়নাল। আমার ছেলেকে মাদকদ্রব্য ছাড়াই বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার সময় আশপাশের শত শত লোকজন দেখেছে। মামলার এজাহারে তার লুঙ্গির কোছা থেকে ইয়াবা উদ্ধারের কথা বলা হলেও কোর্টে চালান দেয়ার সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা লিখেছেন, আসামির প্যান্টের ডান পকেটে মিলেছে ৯৫ পিস ইয়াবা। ওই শিক্ষার্থীকে ঘর থেকে আটক করা হলেও কথিত ইয়াবা উদ্ধারের স্থান দেখানো হয়েছে কলঘর এলাকায়। এর আগে এসআই জয়নাল কুতুবদিয়া থানায় দায়িত্ব পালনকালে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বহু নিরীহ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজছাত্র রনির কাছে ৯৫ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে জানিয়ে এসআই জয়নাল বলেন, আমি তাদের বাড়িতে যাইনি। কে বা কারা ভাংচুর করেছে আমার জানা নেই। তিনি ৫০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মিথ্যা মামলার শিকার কলেজছাত্রের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ তাদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করে বাড়ির সব মালামাল ভাংচুর করে জানিয়ে আরেফা বলেন, আধাঘণ্টা ধরে ভাংচুরের কারণে তার ১০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন হয়েছে।
×