ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল খালেক বীর বিক্রম

স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর খেতাব পাওয়া সেই মুক্তিযোদ্ধা আর নেই

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৩১ জুলাই ২০২০

স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর খেতাব পাওয়া সেই মুক্তিযোদ্ধা আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর খেতাব পাওয়া রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক (বীর বিক্রম) আর নেই। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ২টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বীর বিক্রম আবদুল খালেকের বাড়ি জেলার গোদাগাড়ীর চাপাল গ্রামে। করোনার উপসর্গ নিয়ে গত সোমবার তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়নি। গত ৬ জুন নতুন প্রকাশিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে তার নাম ওঠে। গেজেট বিভ্রাটের কারণে তার বীর বিক্রম স্বীকৃতি পেতে বিলম্ব হয়েছে। বীর বিক্রম আবদুল খালেকের বড় ছেলে মাসুম আক্তার জামান জানান, হাসপাতালে ভর্তি করার তিন-চারদিন থেকে তার বাবার জ্বর ও কাশির সমস্যা দেখা দেয়। গত রবিবার রাতে তিনি মাথার যন্ত্রণায় খুব কাতরাচ্ছিলেন। তাই সোমবার সকাল ১০টার দিকে তাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তিনি মারা গেলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তার বাবার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। গেজেট বিভ্রাটের কারণে এতদিন বীর বিক্রম আব্দুল খালেক স্বীকৃতি পাননি। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত গেজেটে এক ধরনের ভুল ছিল, ২০০৪ সালের গেজেটে আরেক ধরনের ভুল। প্রথমবার লেখা হলো ‘এক্স নেভি’। পরেরবার সেনাবাহিনী। তার অফিসিয়াল নম্বরের শেষে ১৯-এর জায়গায় ভুলবশত লেখা হয়েছিল ৯১, যা ছিল পাঞ্জাবী সৈন্যের। ২০১১ সালে জনতা ব্যাংক-এর পক্ষ থেকে ঠিকানাবিহীন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে তার বাবার নাম ও নৌবাহিনীর পদবী ও সার্ভিস নম্বর দেয়া ছিল। তার ভিত্তিতে তারা গেজেট সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন। সে আবেদন মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে যায়। এভাবে অনেক ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে আবার আবেদন করেন। এরপর বীর বিক্রম স্বীকৃতি মেলে। এতদিন পর এই স্বীকৃতিতে খুশি হতে পারেননি আবদুল খালেক। খেতাব পাওয়ার পর তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একাত্তরের দোসররা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি গ্রামছাড়া হন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফেরারি ছিলেন। এতদিন কেন তার স্বীকৃতি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি? কোথায়, কিভাবে ছিলেন কেউ কেন তার খোঁজ নেয়নি? মুক্তযুদ্ধকালে গোদাগাড়ীর খেতুর গ্রামে সিরাজুল চেয়ারম্যানের বাড়িতে ছিল পাকিস্তানী হায়েনাদের ঘাঁটি। একাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর সেখানে গ্রেনেড হামলা করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন বীর সৈনিক আবদুল খালেক। কিন্তু গ্রেনেড ছোড়ার আগেই আহত হন তিনি। শত্রুবাহিনীর একটা গুলি বুক ভেদ করে চলে যায় তার। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাত নম্বর সেক্টরের আরও বেশকিছু সম্মুখসমরে অংশ নেন তিনি। এদিকে এই বীর বিক্রমের মৃত্যুতে রাজশাহীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
×